মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬
অবশেষে ডিক্যাপ্রিও
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » অবশেষে ডিক্যাপ্রিও
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃবাস্তবে হয়তো অভিনেতা হিসেবে অতটা পাকা নন। না হলে, মনের উৎকণ্ঠা এমনভাবে ছায়া ফেলে চোখেমুখে? যে নায়কের জন্য গোটা দুনিয়া আকুল, সেই নায়ক কেন কাঁদবেন। যদি কাঁদেনও, সেই অশ্রু কেন ধরা পড়বে ক্যামেরায়? কঠিন কষ্ট বুকে নিয়ে মহা আনন্দের দৃশ্যে চুটিয়ে অভিনয় করতে পারলে তবেই না তিনি বড় অভিনেতা! আর সে কাজে মর্মান্তিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। ভরসা ছিলেন হলিউড সিনেমাগুরু মার্টিন স্করসিসি স্বয়ং। ছবির নাম উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট। কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মীর মন গলল না! জল ছলছল চোখে লিও কেবল দেখলেন, ম্যাথিউ ম্যাকনহেই নিজের করে নিলেন সেরা অভিনেতার অস্কার।
ডিক্যাপ্রিওর নামটা হলিউডের ইতিহাসে বড়সড় করে লেখা হবে নিশ্চিত। থাকবে বলেই হয়তো বছর দুই পেরিয়ে আবারও সেই মুহূর্ত। স্টার মুভিজের পর্দায় আমাদের সামনে সরাসরি হাজির লস অ্যাঞ্জেলেস হলিউড। বাংলাদেশ সময় গতকাল সকাল ১০টা পেরিয়েছে। গোটা ডলবি থিয়েটার আর সিনেমা-দুনিয়া রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায়। যতবারই লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর উৎকণ্ঠিত চেহারা দেখছি, বুকের ভেতর ঢাকের শব্দ হচ্ছে। সেই একই ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল। সেই একই উৎকণ্ঠা মানুষটার চেহারায়। লিও পারবেন তো?
না, এবার আর হাতছাড়া হয়নি অস্কার। হয়নি বলেই টুইটারে, ফেসবুকে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে নিয়ে আলোচনার ঝড়। বোল বদলেছে, অনলাইনের যাবতীয় ঠাট্টা আর রসিকতা। আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতুর দ্য রেভেন্যান্ট ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের সুবাদে অস্কার বিজয়ীদের তালিকায় লেখা হয়ে গেছে ডিক্যাপ্রিওর নাম।
কালো-সাদা বিতর্কের পর এবারের অস্কারের সবচেয়ে আলোচিত নামটি ঘোষণা করলেন অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর। হলিউড ইতিহাসের আরও এক বর্ণিল অধ্যায়ের শেষটা লিখতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও উঠলেন পুরস্কার মঞ্চে। অস্কার হাতে নিয়ে কী করবেন টাইটানিক ছবি দিয়ে বাংলাদেশিদের হৃদয়ে পাকাপোক্ত আসন করে নেওয়া এই মার্কিন অভিনেতা? ফেসবুক মিমের মতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে ধেই ধেই নাচ? না। অথবা ইতালির অভিনেতা রবার্তো বেনিনির মতো খ্যাপাটে লাফঝাঁপ? তাও নয়। অস্কার হাতে নিয়ে এবার ঠিক পাকা অভিনেতার মতোই এক চিলতে হাসি দিয়ে সামলে নিলেন নিজেকে। আর যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যটা দিয়েছেন, সেটাও অস্কারের ইতিহাস মনে রাখবে অনেক দিন। ছবির নির্মাতা আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু আর সিনেমাটোগ্রাফার ইমানুয়েল লুবেস্কির মতো সহকর্মীদের ধন্যবাদ দেওয়ার দীর্ঘ তালিকা শেষ করেই টেনে এনেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক ইস্যু। বলেছেন, ‘দ্য রেভেন্যান্ট ছবির বিষয় ছিল প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। আর সেই প্রকৃতি হয়ে উঠছে ক্রমশ উত্তপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এই বিপদ ঠেকাতে।’
চারবারের (হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ, দ্য অ্যাভিয়েটর, ব্লাড ডায়মন্ড ও উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট) সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পাওয়া লিও, সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন সেসব বিশ্বনেতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য, যাঁরা লড়াই করছেন মানবতার জন্য। যাঁরা বড় মাপের পরিবেশদূষণকারী আর বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে কথা বলেন না। আর শেষটা টেনেছেন এই বলে যে, ‘লেট আস নট টেক দিস প্লানেট ফর গ্রান্টেড, আই ডু নট টেক টুনাইট ফর গ্রান্টেড।’ যার বাংলা হতে পারে এ রকম, ‘ধরে নেবেন না এই পৃথিবীটা শুধু দিয়েই যাবে, আমি ধরে নিইনি এই রাতটা আমার হবে।’
আরও অস্কার
ডিক্যাপ্রিওর মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন না অভিনেত্রী ব্রি লারসন। তবে তাঁর অর্জনটাও মনে রাখার মতো। কেট ব্ল্যানচেট (ক্যারল) আর শার্লট র্যাম্পলিংয়ের (ফরটি ফাইভ ইয়ার্স) মতো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জিতেছেন তিনি। রুম ছবিতে অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে এই অস্কার। সেরা পরিচালক মেক্সিকোর গর্ব আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু (দ্য রেভেন্যান্ট)। সেরা পার্শ্ব অভিনেতা মার্ক রাইল্যান্স (অব স্পাইজ) এবং সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী আলিসিয়া ভিকান্দার (দ্য ড্যানিশ গার্ল)। ভিনদেশি ভাষার ছবির বিভাগে সেরার পুরস্কার জিতেছে হাঙ্গেরির ছবি সান অব সাউল। সামনের সারির অস্কার না মিললেও সম্পাদনা ও সাউন্ড ডিজাইনের মতো কারিগরি বিভাগে আধিপত্য দেখিয়েছে ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪১:৩১ ৩৫৭ বার পঠিত