মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

স্ত্রীকে প্রতিদিন চিঠি লিখতেন এরশাদ!

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » স্ত্রীকে প্রতিদিন চিঠি লিখতেন এরশাদ!
মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬



হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।ফাইল ছবি

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।ফাইল ছবিবঙ্গনিউজ ডটকমঃ সামরিক জীবনে থাকার কথা স্মরণ করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সব কাজ শেষে প্রতি রাতে চিঠি লিখতাম। ডায়েরি লিখতাম। সুখের কথা লিখতাম, দুঃখের কথা লিখতাম। স্ত্রীকে কত ভালোবাসতাম! প্রতিদিন চিঠি লিখতাম। এমন একটি দিন বাকি নেই যে, চিঠি লিখি নাই।


আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার কর্ম আমার জীবন’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এরশাদ এসব কথা বলেন। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান শেলী।

এরশাদ তাঁর শৈশব, কৈশোর, সামরিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা বইটিতে উল্লেখ করেছেন। বইটি লিখতে তাঁর পাঁচ বছর সময় লেগেছে বলেও জানান তিনি।

 

এরশাদ বলেন, ‘হাজার হাজার চিঠি লিখেছি। সেই চিঠিগুলো আমার কাছে রয়েছে। কিছু হারিয়ে গেছে। আমি এখনো পড়ি। মুগ্ধ হই। এমন ভাষা কী করে লিখেছি। মানুষকে না ভালোবাসলে এত সুন্দর করে লেখা যায় না। মানুষকে ভালোবাসি বলেই ভাষাকে ভালোবাসতে শিখেছিলাম।’ তাঁর চিঠিগুলো প্রকাশের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেন তিনি।

 

নিজের লেখা বইয়ের সত্যতার বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘এই বইটির প্রতিটি কথা, কথা সত্য। কীভাবে আমি স্বৈরাচার হলাম। কেন বলি—আমার মতো আরও স্বৈরাচার জন্মগ্রহণ করত, তাহলে আজকে বাংলাদেশ অনেক উন্নত থাকতে পারত। আমি যে কাজগুলো করেছিলাম, এটা কী স্বৈরাচাররে কাজ?’ এরপর তাঁর নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি দেন তিনি।


জাপার চেয়ারম্যান বলেছেন, জীবনে অনেক বক্তৃতা করেছি। কখনো জড়তা ছিল না। আজ নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলছি। অনেকে বলেন—গদ্য কবিতার কথা কোথায় শুরু কোথায় শেষ বোঝা যায় না। আমি ভাবছি, আমার জীবনের কোথায় শুরু, কোথায় শেষ কীভাবে ব্যাখ্যা করব। আমি পথ হারিয়ে ফেলছি। তিনি বলেন, নিজের জীবন যখন বিশ্লেষণ করি—তখন দেখি আমার জীবন বহু ধারায় বিভক্ত।

১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা সর্বত্র চালুর আইনের পাশের কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘আইনে বলা ছিল—সমস্ত নথিপত্র বাংলায় লেখা হবে। ইংরেজি তারিখের নিচে বাংলা তারিখ লেখা হবে। যদি ব্যত্যয় ঘটানো হয়, অভিযোগ গঠন করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেই এটি তিনি করেছিলেন বলে দাবি করেন।

 

নিজের লেখা কুড়িটি বই প্রকাশ হয়েছে উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘আমি কবিতা লিখি। সেটা অন্যায় পাপ! আমি সৈনিক কবিতা লিখব…কত সমালোচনা শুনেছি। কবিতা কী আমাদের ভালো লাগে না। প্রকৃতিকে ভালোবেসে, কোনো মেয়েকে ভালোবেসে, নদীকে ভালোবেসে, গাছকে ভালোবেসে আমি কী কবিতা লিখতে পারব না?’

 

বক্তব্যের একপর্যায়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মের কথা স্মরণ করো, আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকব। আমার তো পাওয়ার কিছু নেই। মানুষ বেঁচে থাকতে চাই। মানুষের ভালোবাসার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। আমি একলাই চলি। আমার কোনো গার্ড লাগে না, পুলিশ লাগে না, আমার প্রহরী লাগে না। মানুষের ভালোবাসা আমাকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। সেখানে কেউ আঘাত করতে পারবে না। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।’

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক, বইটির প্রকাশক আলমগীর সিকদার, প্রচ্ছদ পরিকল্পনাকারী মুহম্মদ মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১১:১৮   ৪৬৫ বার পঠিত