মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

দুই সম্পাদককেও বিচারের আওতায় আনা হবে

Home Page » জাতীয় » দুই সম্পাদককেও বিচারের আওতায় আনা হবে
মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬



বঙ্গনিউজ ডটকমঃএক-এগারোর সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, সংবিধান ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল যুদ্ধাপরাধীদের মতো ঠিক তাদেরও একদিন বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী দু’টি দৈনিক পত্রিকার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ২০ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যদি বুকের পাটা থাকে, সাহস থাকে জাতির কাছে স্বীকার করেন, ভয়ে লিখেছেন। তাহলে আর নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন বা তাদের সঙ্গে সখ্য থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের যারা এ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিল, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, এ দেশের মানুষকে এভাবে নির্যাতনের শিকার করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে ঠিক সেভাবেই একদিন এদের এই সংবিধান ধ্বংস করার বিচার হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পাদক সাহেব ডিজিএফআইয়ের লেখা ছাপিয়ে ভুল করেছেন বললেন, কিন্তু সেই ভুলের খেসারত বাংলাদেশের মানুষ দিলো, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিলো, এ দেশের ব্যবসায়ী মহল দিলো, ছাত্রসমাজ দিলো, সকলেই দিলো। আর যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখেছে সেজন্য আমি ও আমার পরিবার তো দিয়েছি। কই তিনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস তো দেখাতে পারলেন না। এতটুকু আত্মমর্যাদা থাকলে তো নিশ্চয় তিনি এরপর পদত্যাগ করতেন।
তিনি বলেন, ডেইলি স্টারের মতো একটি পত্রিকা, ডিজিএফআইয়ের একজন অফিসার যা লিখে দেবে তা ছাপাবে এটা কোনো পাগল বিশ্বাস করে? কারণ, ডেইলি স্টার তার ভাষা সম্পর্কে খুবই সচেতন। মাহফুজ আনামকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিএফআই-এর সঙ্গে উনার কী সখ্য ছিল? উনাকে যা ধরিয়ে দিতেন তাই হুবহু ছাপিয়ে দিতেন। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় দু’টি পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদাকে (খালেদা জিয়া) চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। মাহফুজ আনাম আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য বহু চেষ্টা করেছিলেন। তিনি স্বীকারও করেছেন। সত্য কখনও চাপা থাকে না। মাহফুজ আনামকে একটা কথাই বলবো- অনেক চেষ্টা করেছেন। আপনাদের পিতৃতুল্য বিশ্বব্যাংকও দুর্নীতিবাজ বানাতে পারেনি। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছিল। আর আপনি তো মাহফুজ আনাম…।
এক এগারোর পরিস্থিতি উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় ডিজিএফআই শক্তিশালী হতে চেয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারী তারাই দেশ চালাতো। ব্যবসায়ীদের ধরে টাকা নেয়া, হয়রানি করা এসব তারা করতো। তাদের হাত থেকে ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ কেউই রক্ষা পাননি। আমি তখন এ কথা বলেছিলাম, গায়ের বাছুর নাকি বাছুরের গাই।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দুই পত্রিকা ২০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও আমাকে নিয়ে কুৎসা রটনা করেছে। তাদের মুখোশ এখন উন্মোচন হয়েছে। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টায় ওই সম্পাদকরা উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনানের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু ভুল স্বীকার করলে হবে না, ন্যূনতম আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে পদত্যাগ করুন। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সম্প্রতি বৃটিশ এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিল বিবিসি। এ কারণে ভুল স্বীকারের পাশাপাশি বিবিসি’র মহাপরিচালকসহ ওই রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলে পদত্যাগ করেছেন। মাহফুজ আনামের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামান্য মামলাতেই ঘাবড়ে গেলেন? ১১ মাস কারাগারে থাকলে কী হবে? অথচ আপনি যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে সেই ভুলের খেসারত সবাই দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে আমাকে গ্রেপ্তার করে ১১ মাস রাখা হয়। কারাগারে কোন শাস্তিপ্রাপ্ত আসামিকেও মনে হয় এক সপ্তাহের বেশি সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখতে পারে না। আর ১১টা মাস আমি সেখানে। এমনকি ঈদের দিনে পর্যন্ত আমার আত্মীয়স্বজন কাউকে দেখা করতে দেবে না। ওই ড্যাম্পের কারণে বা কি কারণে জানি না আমার চোখে অ্যালার্জি। আমার চোখে অসুখ হয়ে গেল। চোখের ওপর ইনফেকশন হয়ে গেল। আমাকে ডাক্তার দেখাতে দেয়নি। ঈদের দিন কাউকে আসতে দেবে না। আমার ফুফু আর আমার হাজব্যান্ডকে আসতে দিলো। আর ফুফুকে বলে দিলো প্রেসের কাছে একটা কথাও বলতে পারবেন না। আমার ফুফু সেইদিন বলেননি। কিন্তু তিনিও বঙ্গবন্ধুর বোন। তিনি বাড়িতে প্রেস ডেকে যখন আমার অসুস্থতার কথা জানালেন, তখনই তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু হাসপাতালে যখন ডাক্তাররা বললেন আমার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, রক্ত নিতে চাইলেন। তখনই আমাকে ধরে আবার জেলখানায় ঢুকিয়ে দিলো। আবার যখন আমি চোখ দেখাতে গেলাম, আমার প্রেসার লো হয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম, আমাকে হাসপাতালে রাখা হলো। ওই অবস্থায় আমাকে কাপড় বদলাবারও সময় দেয়নি। ওই অবস্থায় আমাকে কোর্টে নিয়ে এসে হাজির করলো মামলার জন্য। ১৬টা মামলা আমার বিরুদ্ধে তখন। বিএনপি’র দেয়া প্রায় ১ ডজন। আর বাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেয়া। যারা মামলা দেয়ার জন্য এতো দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ১১ মাস যদি আপনাদেরকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়? আর যদি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়? আর যদি মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়? আমার ছেলে, মেয়ে, আমার বোন তাদের ওপর পর্যন্ত যে অত্যাচার। মানসিক চাপ। তাদের পরিবারের প্রতি যদি এ রকম করা হয়। তাহলেও কি তারা বিবৃতি দেবেন? সহানুভূতি দেখাবেন? যারা আমাদেরকে ওই ধরনের বিপদে ঠেলে দিয়েছে। এ বিপদ শুধু আমার একার বিপদ ছিল না। এ বিপদ ছিল সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের বিপদ।
দু’টি পত্রিকা মিথ্যা রিপোর্ট করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য তারাও চেষ্টা চালিয়েছিল। একটি পতাকা চেয়েছিল। তাদের মিথ্যা খবরের কারণে দেশের ক্ষতি হয়েছে, দেশবাসীকে কষ্ট করতে হয়েছে, বিপাকে পড়তে হয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের, আর তার নিজের ও পরিবারের ক্ষতিতো হয়েছেই।
তিনি বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। বিশ্বখ্যাত এক ব্যক্তিও দল করতে গিয়েছিল, যাকে আমরা প্রথম বেসরকারিখাতে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছিলাম। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার নীরবতারও তীব্র সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কেউ কেউ কথা বলছেন, আর কেউ নীরব রয়েছেন, কিন্তু কেন?
ভাষা দিবসের আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না, ত্যাগের মধ্য দিয়েই অর্জন করতে হয়। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। কোনো দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দেয়নি। শুধু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যারা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাই দিনটিকে সারা বিশ্ব যাতে স্মরণ করে এজন্য ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো জাতিসংঘের অনুমতিতে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের ভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি এবং সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষা সংরক্ষণ করা আছে, যেগুলো নিয়ে গবেষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবদুুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। এ গানটি এখন ১৯ টি ভাষায় ১৯ দেশের মানুষ গাইছে। এছাড়াও জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৮টি দেশে যাতে এই গানটি তাদের নিজ নিজ ভাষায় গায় সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৫:০৪   ৪১৭ বার পঠিত