রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
আমি কি ভুলিতে পারি
Home Page » এক্সক্লুসিভ » আমি কি ভুলিতে পারিবঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিনম্র শ্রদ্ধা আর ফুলে ভাষার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণ করছে বাঙালি জাতিসহ গোটা্ বিশ্ব। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের প্রথম শহীদদের সকল শ্রেণী-পেশা ও সংগঠনের নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে দিবসটি। রাত থেকে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বাঙালির শোক আর অহংকারের এই মিনার।
২১-এর প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং সভাপতিমন্ডলীর সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর পরপরই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
তারপর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল ও কেন্দ্রীয় ১৪ দল শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধান একযোগে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তার পর বাংলাদেশ পুলিশ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিধিদল, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, ঢাবি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ১২ টা ২০ মিনিটে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও ১৪ দলের শরিকদল ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদপ্রমুখ শ্রদ্ধা জানান।
পরে অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতির ও পেশাজীবি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানানোর পর ১ টা ২৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে আরও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, জাতীয় প্রেসক্লাব, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতি এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিনিধিরা।
এদিকে মধ্য রাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন।
এ সময় হাজার হাজার মানুষ নগ্নপায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ লাগিয়ে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’ গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনেক বিদেশি নাগরিককেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার দাবিতে ঢাকা উত্তাল হয়ে ওঠলে পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেন। বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভেঙে নেমে আসেন রাজ পথে। শোষকের রক্ষচক্ষু মুহূর্তে জালিমের অস্ত্রের গুলিতে পারিণত হয়। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে বিদীর্ণ হয় বুক। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সব কটি মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।
একুশ বার বার আমাদের মাঝে আসে শহীদদের ত্যাগ আর গৌরবের বার্তা নিয়ে। মর্যাদার একুশ বিশ্বের কাছে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সংগ্রামী, আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে। পৃথিবীতে বাঙালি ছাড়া ভাষার জন্য জীবন বিসর্জনকারী জাতি আর নেই। জাতির এই অর্জন আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলবে। আত্ম অনুসন্ধানের মাধ্যমে একুশের চেতনা আমাদের নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে নতুনভাবে। এমন প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০০:৫৩ ৬০৮ বার পঠিত