শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
কাচের চাকতিতে হাজার বছরের জ্ঞান
Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » কাচের চাকতিতে হাজার বছরের জ্ঞানইতিহাসে আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারের আলাদা গুরুত্ব আছে। হাজার বছরের জ্ঞানের সংগ্রহশালা ছিল এটি। দুর্ভাগ্য যে গ্রন্থাগারটির কপালে করুণ পরিণতি জোটে। যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের হাতে পড়ার ভয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এটি। এটা পরিষ্কার যে সে সময়টাতে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার বা ডেটা সেন্টার ছিল না। থাকলেও কি খুব একটা সুবিধা হতো? সেটিও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিংবা সময়ের সঙ্গে টিকতে পারবে কি না, সন্দেহ!
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নতুন একধরনের ডিজিটাল চাকতি বা ডিস্ক তৈরি করেছেন, যা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোটি কোটি বছর অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যাবে। ছোট্ট কাচের ডিস্কে ৩৬০ টেরাবাইট (১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাই) পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের অপ্টোইলেকট্রনিকস গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী এই খুদে আকৃতির কাচের তথ্যভান্ডার তৈরি করেছেন। কাচের স্তরের ভেতর দিয়ে আলো পরিবহনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে এই প্রযুক্তি। এ ক্ষেত্রে তিন স্তরের কাচের চাকতির ভেতর দিয়ে দ্রুত গতির লেজার রশ্মির মাধ্যমে ছোট কিন্তু দৃঢ় আলোক স্পন্দন প্রবাহ করে নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়। এটাকে তথ্য সংরক্ষণের পাঁচ মাত্রার মাধ্যম বলা হচ্ছে। কারণ, ত্রিমাত্রিক আয়তনের পাশাপাশি নথির আকার এবং কৌণিক দিক গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকটা আবেগের বশেই এর নির্মাতারা কাচের ডিস্কটির নাম দিয়েছেন ‘সুপারম্যান মেমোরি ক্রিস্টাল’। ১৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই ডিস্ক ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে দাবি করছেন তাঁরা। আর স্বাভাবিক তাপমাত্রায়? এককথায়, সীমাহীন। অপ্টোইলেকট্রনিকস গবেষণাকেন্দ্রের অধ্যাপক পিটার কাজানস্কি বলেন, ‘এটা ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমরা এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি, যা দিয়ে তথ্য এবং নথিপত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে পারব। এই প্রযুক্তি আমাদের শেষ অস্তিত্বটুকু সংরক্ষণ করবে, আমরা এত দিন যা শিখেছি তা হারিয়ে যাবে না।’
নতুন এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়তে হলে দরকার অংশীদারের। তবে ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় সংগ্রহশালা, জাদুঘর বা গ্রন্থাগার কাজে লাগাবে কাচের এই তথ্যভান্ডার। আমরা কেউ থাকব না, তবে আমাদের অস্তিত্ব থেকে যাবে চিরদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৫:৪৩ ৩৯৩ বার পঠিত