শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

রেলের ভাড়া বাড়ছে আজ থেকে

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রেলের ভাড়া বাড়ছে আজ থেকে
শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬



বঙ্গনিউজ ডটকমঃরেলওয়ের ভাড়া আজ থেকে বাড়ছে। রুট ভেদে যাত্রী পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ । একই হারে বেড়েছে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন ভাড়াও। পাশাপাশি রেলে ভ্রমণের ন্যূনতম ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত ভাড়ার 
টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ এক প্রতিবেদনে রেল ভাড়া বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলছে ৮৫ শতাংশ যাত্রী। ৭২ শতাংশ রেলের যাত্রী সেবার মানে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে রেলপথ সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন ভাড়া কার্যকর হচ্ছে। আর এই বর্ধিত দামের টিকিট গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে বিক্রি করা হয়েছে। আজ ওসব যাত্রী ভ্রমণ করবেন। যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্টেশনে নতুন ভাড়ার তালিকাও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। কত শতাংশ ভাড়া বাড়ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। কোথাও আবার বাড়ছে না। কোথাও আবার কম বাড়ছে। এর আগে ২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে বাড়ানো হয় রেলের ভাড়া। এর তিন বছরের মাথায় আবার ভাড়া বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে লোকসান কমানোর জন্য এখন থেকে প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ঋণের শর্তের কারণে এখন থেকে বছরের শুরুর দিকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হবে বলে সূত্র জানায়। ৭ই ফেব্রুয়ারি ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নতুন হার অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ২৬৫ থেকে বেড়ে হবে ২৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ থেকে ৩৪৫, এসি চেয়ার ৬১০ থেকে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩১ থেকে ৭৮৮ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৩ থেকে ১ হাজার ১৮৯ টাকা হবে। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ৩৯০ থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৭৩১ টাকা। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিট ৭৩৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লিখিত শ্রেণিগুলোর ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে ভাড়া বাড়ছে। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আইসিডি পর্যন্ত ওজন ও দৈর্ঘ্যভেদে আগে বিভিন্ন ধরনের কনটেইনার পরিবহন ভাড়া ছিল ৯ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হচ্ছে ৯ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের আইসিডি পর্যন্ত ফিরতি পথের কনটেইনার পরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেনের প্রতিটি শ্রেণিতে ন্যূনতম ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা হারে বাড়ানো হচ্ছে।
যাত্রী সেবা নিয়ে জরিপ: যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর অঙ্গীকার করে ২০১২ সালে রেলপথে যাত্রী ভাড়া একলাফে ৫ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির মাত্র তিন বছরের মাথায় আবার ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি কিভাবে দেখছে রেল পথের যাত্রীরা। এই বিষয়ে যাত্রী সাধারণের মতামত সংগ্রহের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী রেল পথের যাত্রী সাধারণের উপর জরিপ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটি। এর অংশ হিসেবে ১৮ই ফেব্রুয়ারি কমিটির সদস্যরা দেশের প্রধান বিলাস বহুল ট্রেন ৭০২ নং সুবর্ণ এক্সপ্রেসে যাত্রী সাধারণের উপর জরিপ পরিচালনা করে। এই ট্রেনের ৩০০ যাত্রীর উপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে, যাত্রী সাধারণের জন্য কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি অযৌক্তিক মনে করে ৮৫ শতাংশ যাত্রী। ১৫ শতাংশ যাত্রী মনে করে বর্তমান জীবন যাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রেল ভাড়া বাড়ানো উচিত। বর্তমানে রেলের যাত্রীসেবার মান, রেল স্টেশনের সার্বিক পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সন্তুষ্ট নন ৭২ শতাংশ যাত্রী। তবে, ২৬ শতাংশ যাত্রী মনে করেন রেলের যাত্রীসেবার মান সন্তোষজনক। ২ শতাংশ যাত্রী এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, রেলের ৭০ শতাংশ যাত্রী নিয়মিত কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট কিনে ভ্রমণ করতে বাধ্য হন। ২৭ শতাংশ যাত্রী কাউন্টার থেকে নিয়মিত টিকিট পেয়ে থাকেন। ৩ শতাংশ যাত্রী ঊর্ধ্বতন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেলপুলিশ, আমলা, এমপি-মন্ত্রীর তদবিরের মাধ্যমে টিকিট পেয়ে থাকেন। রেলের বর্তমানে যে পদ্ধতিতে টিকিট ইস্যু হয়ে থাকে তা অনেক জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া বলে মনে করে ৮৮ শতাংশ যাত্রী। তবে ১২ শতাংশ যাত্রী বর্তমানে প্রচলিত টিকিট ইস্যু পদ্ধতি সঠিক বলে মনে করে। ৯৪ শতাংশ যাত্রী মনে করে রেলের বর্তমান টিকিট ইস্যু প্রক্রিয়া সংস্কার করা প্রয়োজন। তারা এ ক্ষেত্রে যাত্রীর যে কোনো ধরনের পরিচিতি টিকিটে সংযুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে। যাত্রীর নামে টিকিট ইস্যু করা গেলে কালোবাজারির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া সম্ভব বলে যাত্রী সাধারণের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এছাড়াও যাত্রীসেবা প্রদানে জড়িত বুকিং সহকারী, অনুসন্ধান কর্মকর্তা, স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, ট্রেনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচার-আচরণে সন্তুষ্ট নন ৬৫ শতাংশ যাত্রী। ৫ শতাংশ যাত্রী মোটামুটি সন্তুষ্ট, তবে ৩০ শতাংশ যাত্রী এইসব কর্মকর্তার আচার-আচরণে সন্তুষ্ট বলে জরিপে উঠে এসেছে। জরিপকালে ট্রেনে ছারপোকা, তেলাপোকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, টিকিটবিহীন যাত্রীতোলা, ভাঙা আসন, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০:১২:৪৫   ৩৭৪ বার পঠিত