শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে বললেন গ্রাহকরা
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে বললেন গ্রাহকরাবঙ্গনিউজ ডটকমঃসাধারণ গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষায় ব্যাংকগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সম্প্রতি এটিএম জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা খোয়ানো কয়েকজন গ্রাহক।
জালিয়াতির শিকার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) গ্রাহকদের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এ পরামর্শ আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইবিএলের ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচজন গ্রাহকের হাতে চেক তুলে দেন ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা।
ক্ষতিগ্রস্ত বাকী ১৯ জনের টাকা তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা করে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইবিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ও রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা এবং পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক ইস্কান্দার মিয়া বক্তব্য রাখেন।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলাসহ নানা ধরনের ‘ভুতুড়ে ট্রানজেকশনের’ ঘটনা ঘটার পর
বেরিয়ে আসে। জালিয়াত চক্র ইবিএল গ্রাহকদের কয়েক লাখ টাকা চুরি করেছে বলে অভিযোগ উঠে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাহবুবা আক্তার ডিনা
একই কায়দায় ইবিএলসহ মোট চারটি ব্যাংকের ৩৬ জন গ্রাহকের হিসাব থেকে তুলে নেওয়া হয় ২০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, যার মধ্যে ইবিএলেরই ২৪ জন গ্রাহকের ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে এই জালিয়াতিতে একবিদেশি নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য মেলার পর একই রকম চেহারার পাঁচ বিদেশির ওপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ।
যে পাঁচজন গ্রাহককে চেক দেওয়া হয়েছে তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক মাহবুবা আক্তার ডিনা, যার ৮০ হাজার টাকা খোয়া যায় এটিএম জালিয়াতিতে।
অনুষ্ঠানে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিনা বলেন, “দিনটি ছিল শুক্রবার। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি মোবাইলে ইবিএলের এসএমএস। পড়ে দেখলাম আমার অ্যাকাউন্ট থেকে দুই বারে ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। অবাক হলাম, আমি টাকা তুলিনি, কার্ড বাসায় রয়েছে, তাহলে টাকা তুলবে কে?
“সিস্টেম ভুল করে কোনো এসএমএস পাঠিয়েছে কি না ভেবেছিলাম। কিন্তু অনেকগুলো টাকা হওয়ায় আবারও ভালো করে এসএমএস দেখলাম। এরপর ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে অভিযোগ করলাম এবং আমার অ্যাকাউন্ট ব্লক করালাম।”
এ ধরনের জালিয়াতি রোধে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।
“আমি সব ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলব, আমরা সাধারণ আমানতকারী, আপনাদের কাছে আমরা অর্থ রাখি। এই ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে আরও সতর্ক হওয়া দরকার।”
ক্ষতিগ্রস্ত অন্যরাও একই কথা বলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক মাহবুবা আক্তার ডিনার হাতে চেক তুলে দেন ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা
সাম্প্রতিক জালিয়াতির ঘটনা ঠেকাতে ব্যাংকগুলোর কিছু দুর্বলতা ছিল, এমনটা স্বীকার করার পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা ।
তিনি বলেন,“উন্নত বিশ্বেও জালিয়াতি হয়ে থাকে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে জালিয়াতি কম।”
“কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতকে পেপারলেস করতে চায়। ইতিমধ্যে অনেক ডিজিটাইজেশন হয়েছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও যেতে হবে। এ ধরনের ঘটনার জন্য প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না।”
তিনি সব ব্যাংককে এসএমএস অ্যালার্ট চালু এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
ইবিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ও রশীদ এ ঘটনার জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চেষ্টা করব ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
অনুষ্ঠানে শাহ সিফুজ্জামান এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, কামরুজ্জামান ১০ হাজার টাকা, আবু মুসা তারেক ৫ হাজার টাকা ও দিপন চন্দ্র দে সাত হাজার টাকার চেক পেয়েছেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে বাকী তিনটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২২:৩৪ ৪০৫ বার পঠিত