সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
সাত মাস ধরে কমছে চার পণ্যের রপ্তানি
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » সাত মাস ধরে কমছে চার পণ্যের রপ্তানি
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ে শীর্ষে তৈরি পোশাক। তারপরই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান। তবে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির বিচারে খাত দুটি এখন দুই মেরুতে। পোশাক রপ্তানি ছয় মাস ধরে বাড়ছে। অন্যদিকে সাত মাস ধরে নেতিবাচক বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে চামড়া খাত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানির বেলায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের মতো একই কাণ্ড ঘটেছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাস ধরে এই চার খাতের পণ্য রপ্তানিতে ধারাবাহিকভাবে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছে। গত দু-তিন মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এলেও অন্যদের বেলায় খুব একটা পরিবর্তন নেই।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ৯ কোটি ৪৬ মার্কিন ডলার আয় হয়। এই আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১০ কোটি ৯১ লাখ ডলারের রপ্তানির চেয়ে ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের সাত মাস শেষে খাতটির রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ডলার। আয়টি গত অর্থবছরের একই সময়ের ৬৭ কোটি ডলারের চেয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে খাতটি থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৩ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ডলার।
চামড়া খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় আটকে পড়ার জন্য ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত হওয়াকে দায়ী করলেন ব্যবসায়ী আবু তাহের। তিনি বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান। গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানোর কারণে অনেক বিদেশি ব্র্যান্ডের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না। তাছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বিশ্ব বাজারে একটু মন্দাভাব আছে।
গত অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল, যার মধ্যে চিংড়ি ৫০ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫৭ কোটি ডলার। তবে সাত মাসে আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ এবং গতবারের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৪২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপর প্রতি মাসেই এই নেতিবাচক চিত্র চলেছে।
অবশ্য হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি প্রত্যাশিতই ছিল বলে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা।
গোলাম মোস্তফার বক্তব্য, ‘গত বছর হঠাৎ করেই ইউরোপের বাজারে চিংড়ির মূল্য ৪৫ শতাংশ পড়ে যায়। তখন অধিকাংশ রপ্তানিকারক তাঁদের মজুত করা চিংড়িতে লোকসান গুনেছেন, মূলধনের ৪০ শতাংশ খুইয়ে ফেলেন। রপ্তানিকারকেরা টাকার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি কিনে রপ্তানি করতে পারছেন না।’
চিংড়ি রপ্তানিকারকদের মূলধনের সংকট নিরসনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরে তদবির করেন সমিতির নেতারা। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ব্লক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ঋণ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রক্রিয়াটি এখন শেষ হয়নি বলে জানান গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারাটাও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমার আরেকটি কারণ। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারত যেখানে প্রতি হেক্টরে ৪০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করে, সেখানে আমাদের দেশে হয় মাত্র ৩০০ কেজি।
দেশের কৃষিপণ্যের মধ্যে চা, শাক-সবজি, তামাক, কাট ফ্লাওয়ার, ফলমূল, মসলা, শুকনো খাবার ইত্যাদি রপ্তানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় শাক-সবজি। গত অর্থবছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ছিল ৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪ কোটি ২৭ লাখ ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের অর্থবছরের জুলাইয়ের ৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। আবার সাত মাস শেষে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ৩০ কোটি ডলারে দাঁড়াল। তবে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, প্রথম থেকে সপ্তম—প্রতি মাসেই রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি কৃষিপণ্যে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আেলাকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে আগে রপ্তানিকারকেরা ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেতেন। এখন সেটি পায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। তবে তাঁরা নিজেদের কারখানায় সব পণ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারেন না। এ জন্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে নগদ সহায়তা না পাওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না রপ্তানিকারকেরা।’
শাক-সবজি রপ্তানির বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘ঢাকা-লন্ডন আকাশপথে বিমানের সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট আছে। তবে তারা শাক-সবজি পরিবহন করছে না। এ জন্য সপ্তাহে ২৫ মেট্রিক টন করে মোট ৭৫ মেট্রিক টন রপ্তানি কম হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশি বিমানে ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই পরতায় পোষায় না বলে শাক-সবজি রপ্তানি কিছুটা কমেছে।’
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৬ কোটি ডলারের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের সব মাসেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্লাস্টিক খাতে। গত অর্থবছরে প্লাস্টিক
খাতের রপ্তানি আয় ছিল ১০ ডলার। এবার লক্ষ্যমাত্রা ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রোকেমিক্যালের বাইপ্রোডাক্ট প্লাস্টিক পণ্যে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এসব কাঁচামালের দামও কমে গেছে। ফলে পণ্যের দাম কমেছে। সে জন্য পরিমাণে না কমলেও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানির আয় হ্রাস পেয়েছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, কাঁচামালের দাম ৬০-৭০ শতাংশ কমে গেছে। ক্রেতারা উৎপাদন খরচ হিসাব করে দাম দেন। তবে এতে দেশের ব্যবসায়ীরা কোনো লোকসানে পড়েননি। তিনি জানান, চলতি ২০১৫–১৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪২:০০ ৩৩২ বার পঠিত