শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের কিনারা হতে পারে
Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের কিনারা হতে পারেকল্পনা করুন, মহাশূন্যে দুটি কৃষ্ণগহ্বর একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে। একটির ভর আমাদের সূর্যের চেয়েও ৩৫ গুণ বেশি, আরেকটির প্রায় ৩০ গুণ। পরস্পরের সঙ্গে মিলে যাওয়ার আগে তারা অবিশ্বাস্য গতিতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় শতবার ঘুরতে থাকে। তারপর তাদের ‘ঘটনা দিগন্ত’ বা ইভেন্ট হরাইজনগুলো একাকার হয়ে যায়। ঠিক সাবানের ফেনার দুটি বুদ্বুদ মিলে এক হয়ে যাওয়ার মতো।
দুই কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের মাধ্যমে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সৃষ্টির বিষয়টিকে একজন বিশেষজ্ঞ এভাবেই সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন। ওই মহাকর্ষীয় তরঙ্গকেই শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরির (লিগো) বিজ্ঞানীরা। কয়েক দশকের চেষ্টার পর এবারই প্রথমবারের মতো এ সাফল্য পেলেন তাঁরা।
কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল বলতে মহাশূন্যের সেই স্থানকেই বোঝায়, যেখানকার অতি শক্তিশালী অভিকর্ষের কারণে কোনো বস্তুই বেরিয়ে আসতে পারে না, এমনকি আলোও।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার এই ঘটনা বিজ্ঞানীমহলে আলোড়ন তুলেছে। একে অনেকেই বলছেন শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এ ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে মহাবিশ্বকে আরও ভালো করে জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও ধারাবাহিক পরিবর্তন, কৃষ্ণগহ্বর ও নিউট্রন তারকা সম্পর্কে অনেক রহস্যই হয়তো আগামী দিনে উন্মোচিত হবে এই আবিষ্কারের সূত্র ধরে। যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি এস সত্যপ্রকাশ বলেন, ‘আমরা এখন মহাবিশ্বকে শুনতে পাব, আগের মতো কেবল তাকিয়ে দেখার মধ্যেই সীমিত থাকতে হবে না।’
লিগোর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড রাইৎজা ও তাঁর সহকর্মীরা একে তুলনা করেছেন চার শতাব্দী আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর দূরবীক্ষণ যন্ত্র (টেলিস্কোপ) ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সূচনা করার কৃতিত্বের সঙ্গে। এর আরেকটি বড় তাৎপর্য হচ্ছে, মহাজাগতিক সংঘর্ষ এবং তা থেকে তরঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ১০০ বছর আগে যে অনুমান করেছিলেন, তার অভ্রান্ততাই নিশ্চিত হলো।
তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের চেয়ে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অনেক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। এত দিন পর্যন্ত গবেষকেরা মহাবিশ্বকে তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের ধারণা নিয়েই বিবেচনা করেছেন। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার ফলে তাঁরা নতুন দিশা পেলেন।
পৃথিবী থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটি কৃষ্ণগহ্বরের ওই সংঘর্ষের ফলে যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, তার ঢেউ মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাসতে ভাসতে আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। আলো সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল গতিতে চলে এক বছরে যত দূর যায়, তা-ই এক আলোকবর্ষ দূরত্ব। ভূগর্ভে স্থাপিত সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাহায্যে ওই তরঙ্গ শনাক্ত করেন লিগোর বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন জানায়, ওই বিজ্ঞানীদের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে অন্য গবেষকদের মাধ্যমে পর্যালোচনার কাজে কয়েক মাস লেগে যায়। ওয়াশিংটনে যুগান্তকারী এ আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:৪০ ২৯১ বার পঠিত