বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
ভালোবাসায় চাই বিশ্বস্ততা
Home Page » ফিচার » ভালোবাসায় চাই বিশ্বস্ততাও প্রেম করতে দুই দিন ভাঙতে এক দিন, এমন প্রেম আর কইরো না দরদি—এই লোকগানে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কে যেকোনো শঠতা-হঠকারিতার অবকাশ নেই, তা স্পষ্টই বলা হয়েছে। বলা হয়, প্রেম আসে স্বর্গ থেকে। এই স্বর্গীয় বিষয়কে হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। বরং এর পবিত্রতাকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, সে দিকে নজর দেওয়াই হবে বিবেচকের কাজ।
প্রেমিক-প্রেমিকা হোক আর স্বামী-স্ত্রীর—সব যুগলের প্রেমের মূলমন্ত্র হচ্ছে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস। যত জটিলতাই তৈরি হোক না কেন, ঝড়ঝাপটা যাই আসুক—কেউ যেন বিশ্বাসচ্যুত না হয়। এই বিশ্বাস বিয়ের আগে বা পরে বলে কোনো কথা নেই। এই বিশ্বাস হবে সব সময়ের জন্য। বন্ধন হতে হবে ইস্পাতদৃঢ়। সব রকমের সম্পর্কের মধ্যে থাকবে বন্ধুসুলভ সমঝোতা। বন্ধুত্ব হবে পানির মতো টলটলে পরিষ্কার।
স্ত্রীকে নিয়ে একজন ভদ্রলোক এলেন। স্ত্রীর সমস্যা শোনার পর স্বামীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললাম। একপর্যায়ে তিনি জানালেন, তাঁর স্ত্রীর কোনো দোষ নেই। তিনি আগের প্রেমিকার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রেখে চলছেন। ফলে নিজেদের সম্পর্কের যে স্বাভাবিকতা, তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই জটিলতা থেকে বের হওয়ার জন্যই পরামর্শ নিতে এসেছেন।
বিয়ের পর রোমান্সের সূচনা হতেই পারে। আর হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। মনকে জটিল করে না তুললেই তা সম্ভব। চেম্বারে এক ভদ্রলোক এলেন। জানালেন, বিদেশে যাওয়ার আগে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে গিয়েছিলেন। কিন্তু মন বাইরে টেকে না বলে দেশে চলে আসেন। আসার পর দেখেন বউয়ের সঙ্গে তাঁর ‘লেভেলে’ নাকি বনছে না। কথাবার্তা চালচলন কোনো কিছুই পছন্দ হয় না। এখন কী করবেন?
ভালোবাসার কয়েকটি সূত্র
* একে অন্যের শক্তিগুলোকে মূল্যায়ন করুন। সঙ্গীকে যথাসাধ্য বুঝুন। তার দুর্বল দিকগুলো সহানুভূতির সঙ্গে দেখুন। সেগুলো যেন তার বোঝা না হয়। সেসব শুধরে নিতে তাকে শক্তি-সাহস নৈতিক বল জোগান দিন।
* যেখানে যেমন যতটা সম্ভব আপনার ভালোবাসাকে প্রকাশ করুন।
* ভারসাম্যহীন হবেন না। মাত্রাজ্ঞান কাম্য। ভালোবাসা দেওয়া, পাওয়া, নেওয়া—সব ক্ষেত্রেই।
* ভালোবাসার আকুতি শুধু যে শুনবেন তা নয়; আকুতি জানাবেনও।
* সততা ও বিশ্বাস হচ্ছে ভালোবাসার পরম সম্পদ। এটাই প্রেমের ভিত্তিপ্রস্তর।
কী করণীয়
বিয়ের আগে
* বিয়ের আগে প্রেমে পড়লে আমাদের সমাজে এর কাঙ্ক্ষিত পরিণতি হলো বিয়ে পর্যন্ত টেনে নেওয়া। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই জরুরি। বিয়ের আগে বা পরে যেই সম্পর্ক হোক না কেন, বিশ্বাসে চিড় যেন কিছুতেই না ধরে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
* প্রেমের গভীর আবেগে ভেসে যাওয়া চলবে না। ভালোবাসার গভীরতাগুলো দাম্পত্যজীবনের জন্য রেখে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
* আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়।
* ভালোবাসার সম্পর্ককে গোপন করা ঠিক নয়। পারস্পরিক দেখা, গল্পগুজব, কোথাও একসঙ্গে খাওয়া, বন্ধুদের গেট টুগেদারে অংশগ্রহণ—এসব এখন ডালভাত। কিন্তু ‘ডেটিং’-এর নামে এমন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, যেখানে পদস্খলনের আশঙ্কা থাকে।
* ভুলের ফাঁদে পা যেন না পড়ে। যার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, তার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়া ভালো। পরে যেন পস্তাতে না হয়।
* সঠিক মানুষটির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো উচিত।
* পরিবার, সমাজ, বন্ধুবান্ধব, স্বজন—এরা কেউই শত্রু নয়। তাদের সুপরামর্শ গ্রহণ করাই ভালো।
* অসম প্রেম, বয়সের বিস্তর ফারাক, সামাজিক ব্যবধানগুলো বিবাহিত জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে প্রেমপর্বে সাবধানতাই আখেরে ভালো।
বিয়ের পরে
* পরস্পরকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। দোষত্রুটি শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। দোষত্রুটি ধরিয়ে না দিয়ে শুধুই খোঁটা দেওয়াটা কাম্য নয়। সঙ্গীর ত্রুটি সংশোধনের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে হবে।
* নিজের ত্রুটিগুলো সংশোধনে সদিচ্ছা থাকতে হবে। পারস্পরিক লাভক্ষতি মেনে নিয়ে নতুন সম্পর্কের প্রেমময় রূপ দিতে হবে। টিভি সিরিয়ালে শুধু কূটচালই দেখায় না। সংসারকে সুন্দর করে কীভাবে গ্রোথিত করা যায় তাও দেখানো হয়। স্বামী-স্ত্রীর এই ইউনিটকে একান্তভাবে নিজেদের করেই ভাবতে হবে। পিছুটান থাকবেই, কিন্তু এই ইউনিটের ইউনিটির দিকে নজর দেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
* সন্দেহ হলো মনের বিষ। কানকথায় কান দেওয়া চলবে না।
* সঙ্গীর মীমাংসিত অতীত কোনো জটিলতা নিয়ে জীবন যাপনের ধারাবাহিকতাকে তিক্ত ও বিষময় যেন না করে।
* ভ্যালেন্টাইন জুটি হিসেবে সেই দম্পতিই আদর্শ, একে অপরের সীমাবদ্ধতা, ত্রুটিকে যারা নিজেদের মধ্যে রাখে এবং শোধরাতে তৎপর।
ভালোবাসা দিবসের ১০ টিপস
১. এক টুকরা কাগজ নিন। ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষার কথা লিখুন। খুব প্রিয় ভালোবাসার কোনো পঙ্ক্তি লিখুন। আঁকতে পারেন ছবিও। মনের মাধুরী মিশিয়ে।
২. চটজলদি কি-বোর্ডে আঙুল চালিয়ে ছোট একটা পুস্তিকা লিখে ফেলতে পারেন। তাতে লিখবেন সঙ্গীর প্রতি কেন আপনি বিশ্বস্ত। কেন ভালোবাসেন। কেন ভালোবাসবেন জীবনভর। মনে রাখবেন এই পুস্তিকা কিন্তু প্রকাশ হবে এক কপিই।
৩. এক দিনের মধুর এক ভ্রমণে ঘুরে আসতে পারেন জীবনসঙ্গীর প্রিয় জায়গায়। সেখানে ফুল থাকবে। সবুজ থাকবে। পুকুর থাকবে। থাকবে উষ্ণতাও।
৪. একান্তে দুজনে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতের খাবার খেতে পারেন। টেবিলে দুজনার প্রিয় খাবার। দুজনে মিলে দেখুন প্রিয় স্মৃতিমধুর রোমান্টিক ছবি।
৫. সঙ্গীর হাতে তুলে দিন এক ডজন তাজা গোলাপ। এগারোটি দেবেন একসঙ্গে। বাকি একটা খানিক পরে। পড়ে শোনান ভালোবাসার প্রিয় কবিতাটি।
৬. সেই রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন, যেখানে প্রথমবার দেখা হয়েছিল দুজনার। মেন্যু মনে আছে নিশ্চয়ই। কোনো পদ বাদ বা যোগ করা চলবে না।
৭. উপহার দিতে পারেন সেই জিনিসটি—এক যুগ আগে যেটি পেয়ে বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়েছিল সে।
৮. সপরিবারে ভ্যালেন্টাইন করতে মন চাইছে। সমস্যা কী! ছোট একটা পারিবারিক বনভোজন হতে পারে কাছেপিঠে কোথাও। এখন আকর্ষণীয় স্পট আছে সব জেলাতেই।
৯. দুজনে কি দুই জায়গায় আছেন চাকরির দরকারে। ছুটি বাগিয়ে ছুটে এসে চমকে দিতে পারেন সঙ্গীকে।
১০. প্রেমের কবিতা লেখা খুব কি কঠিন। দুই লাইন লিখে মানপত্রের মতো করে বাঁধাই দিতে পারেন। ফ্রেমখানা ভবিষ্যতে ভালোবাসার কাবিননামা হয়ে থাকল।
কী কথা লেখা যায় তারে
* আমি তোমাকে ভালোবাসতাম গতকাল, বাসি আজও। ভালোবেসে যাব কাল, পরশু জীবনভর।
* আমি জানি কেন তোমাকে ভালোবাসি। আমি জানি কিসে তুমি আনন্দ পাও, কষ্ট পাও। তোমাকে ছাড়া আমার পৃথিবী অর্থহীন।
* আমি জানি, কাকে বলে ভালোবাসা। তোমাকে ভালোবেসেই যে শিখেছি সেই কবিতা।
* তোমাকে যে কতটা ভালোবাসি—লিখে বা বলে তা বোঝাতে পারব না কোনো দিন। তুমিই আমার জীবনের তারকা। আমার কাছে তুমি অমূল্য।
* তোমাকে জীবনের জন্য পেয়ে জানলাম—এমন একজন পরমজনের আমি অপেক্ষায় ছিলাম। জীবনের শেষ দিনটিও যেন প্রেমমধুর থাকে।
* আমি প্রেমে পড়েছি অনেকবার। ভালোবেসেছি অনেকবার। প্রতিবারে শুধু তোমাকেই।
* তুমি যদি ১০০ বছর বাঁচো—আমি তার চেয়ে একটা দিন কম বাঁচতে চাই। কেননা, তোমাকে ছাড়া একটি দিন বাঁচা অসম্ভব।
* ভালোবাসা ও বন্ধুতার চেয়ে এই পৃথিবীতে সেরা কিছু নেই।
* প্রথম ও শেষ কথা—আমি তোমাকে ভালোবাসি।
* তুমি আছো হৃদয়ে আমার; আছো আত্মায়; আমরা একাকার আমৃত্যু।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৩:১৯ ১৭৫৬ বার পঠিত