শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
কিছু ব্যবসায়ীর আচরণ ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » কিছু ব্যবসায়ীর আচরণ ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেবঙ্গনিউজ ডটকমঃবিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চালু করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার। সেই সঙ্গে সংগঠনটির শতবর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী নানা আয়োজনে। শতবর্ষী এই চেম্বারের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম
মাহবুবুল আলম: চট্টগ্রাম চেম্বারের শত বছরের এই পথচলা পরিপূর্ণতা পেয়েছে ‘বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের’ মধ্য দিয়ে। অনেক অর্জনের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অর্জনটিকেই আমি সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করি। আর এটি সম্ভব হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রয়াসে। শতবর্ষী এই চেম্বারে শুরু থেকে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাঁরা এটির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফসল এটি।
প্রথম আলো: কিন্তু অতীতে যাঁরা চেম্বারের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাঁদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাহবুবুল আলম: এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। শুরুতেই আমি বলেছি, বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা একক কারও সাফল্য নয়। চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান নেতা থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী, চেম্বারের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে। আর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র উদ্বোধন ও শতবর্ষ উদ্যাপনের পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত চেম্বার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবার মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সাবেক সভাপতিদের যুক্ত করা হয়েছে। যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে একত্র করার চেষ্টা করেছি। চট্টগ্রামের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী আমাদের এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্তও হয়েছেন। তারপরও আমি বলব, এত বড় আয়োজনে ছোটখাটো ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না।
প্রথম আলো: চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ী ও চেম্বারের সাবেক অনেক নেতার অভিযোগ, চেম্বারের সঙ্গে এখানকার প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সম্পর্কটা কিছুটা আলগা হয়ে গেছে।
মাহবুবুল আলম: এটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন, ব্যবসায়ীরাই এর মূল শক্তি। তাঁদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। অনেকে হয়তো নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে চেম্বারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত নেই। তারপরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সমস্যায় সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করি। দূরত্ব তৈরির বিষয়টি মোটেও সঠিক নয়।
প্রথম আলো: যদি চট্টগ্রামের সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা থাকে, তা হলে এখানকার কিছু শিল্পোদ্যোক্তা মিলে চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বার গঠন করলেন কেন?
মাহবুবুল আলম: দেখুন, জনসংখ্যা আর প্রসারের দিক থেকে চট্টগ্রামের অবস্থান অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ২০ বছর আগের চট্টগ্রাম আর এখনকার চট্টগ্রাম কিন্তু এক নয়। জনসংখ্যা ও প্রসার বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। তাই হয়তো সময়ের প্রয়োজনেই আলাদা একটি চেম্বারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সে জন্যই কিছু শিল্পোদ্যোক্তা মিলে চট্টগ্রামে মেট্রো চেম্বার গঠন করেছেন। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তারা মিলে একটি নারী চেম্বারও গঠন করেছেন। আমি মনে করি, এই দুটি চেম্বারই গড়ে উঠেছে সময়ের প্রয়োজনে। ওই দুটি চেম্বারের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের অনেকেই এখনো আমাদের চেম্বারের নিয়মিত সদস্য। কারও সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই।
প্রথম আলো: চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক এই রাজধানীতেই দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সেটি কেন?
মাহবুবুল আলম: দেখুন, শুধু চট্টগ্রাম নয়; সারা দেশে বিনিয়োগে একধরনের ধীরগতি রয়েছে। চট্টগ্রামও তার বাইরে নয়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশজুড়েই নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার পাশাপাশি অঞ্চলভেদেও আলাদা কিছু সমস্যা রয়েছে। চট্টগ্রামে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও জাতীয় সমস্যার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েরও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলোর সমাধান না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না।
মাহবুবুল আলম: চট্টগ্রামে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো জমির অভাব বা অপ্রতুলতা। যেটুকু জমি পাওয়া যায়, তার দামও অনেক চড়া। গত কয়েক দশকে চট্টগ্রামে নতুন কোনো শিল্প এলাকা গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় সমস্যা গ্যাস-বিদ্যুৎ। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের জন্য একটিমাত্র সঞ্চালন লাইন রয়েছে। সেটিও অনেক পুরোনো। তাই এই লাইনে গ্যাসের যে চাপ, তা শিল্পের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। আর তৃতীয় সমস্যা ব্যাংকঋণের সুদহার। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার সমাধানে আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যাংকঋণের সুদহার এখন ধীরে ধীরে পড়তির দিকে। এখন যদি গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যায়, তা হলে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বাড়বে। আর চট্টগ্রামে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হলে জমি সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।
প্রথম আলো: জমির দাম বাড়ার জন্য তো কিছু কিছু ব্যবসায়ীরও দায় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কারণ, একশ্রেণির ব্যবসায়ী শিল্পের জন্য ব্যাংকঋণ নিয়ে তা জমিতে বিনিয়োগ করায় দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ। সেটিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মাহবুবুল আলম: এ কথা ঠিক, চট্টগ্রামের বড় বড় কিছু শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শিল্পের জন্য ঋণ নিয়ে সেই অর্থ জমিতে বিনিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ উৎপাদনশীল খাতের ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে ওই ব্যবসায়ীরা যেমন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি শিল্পোদ্যোক্তাদেরও ক্ষতির মুখে ফেলেছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। কিন্তু আমরা জানি, ব্যাংকঋণের অপব্যবহার করায় চট্টগ্রামের বেশ কিছু বড় শিল্পগ্রুপ বসে গেছে। এটি আমাদের সবার জন্য দুঃখজনক। কিছু ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক আচরণ ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমি মনে করি, শিল্পের টাকা জমিতে বিনিয়োগ করা কখনো ব্যবসাসুলভ আচরণ হতে পারে না। শিল্পে লাভ-লোকসান হতে পারে। সেটিকে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ব্যবসায়িক চরিত্রের বাইরে গিয়ে কিছু করে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি মেনে নেওয়া সবার জন্যই কঠিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৯:০০ ২৭৫ বার পঠিত