সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
মা ও শিশুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে গরুর খামার
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » মা ও শিশুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে গরুর খামার
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর মিরপুরে অর্ধনির্মিত ‘মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের’ ভেতরে এখন গরুর খামার। নকশা পরিবর্তনের অভিযোগে ছয় বছর আগে নির্মাণকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ ‘অপরাধে’ কেউ সাজা পায়নি।
অসমাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনে আনসার বাহিনীর ২৬ জন সদস্য বাস করছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, ‘অসামাজিক কাজে’ পরিত্যক্ত ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। কাগজপত্র দেখে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরে মাজার রোডের লালকুঠিতে ২ দশমিক ৩ একর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে অধিদপ্তর। মূল হাসপাতাল ভবনসহ চারটি ভবন ছয়তলা পর্যন্ত তৈরি হওয়ার পর ২০০৯ সালে মন্ত্রণালয় কাজ বন্ধ করে দেয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশুস্বাস্থ্য) মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নকশা পরিবর্তন করে ফেলাসহ বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন। সেসব অনিয়মের তদন্তও হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশনে অনেক দৌড়ানো হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় বা কমিশন বিষয়টিকে সেভাবে আগে কখনো গুরুত্ব দেয়নি।’ তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হতে বিলম্ব হচ্ছে। মানুষকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে নতুন নামকরণ করে নতুনভাবে প্রকল্পটি আবার চালু করার জন্য উদ্যোগ জোরদার করা হয়েছে।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ছয়তলাবিশিষ্ট একটি মূল ভবন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার তৈরির জন্য ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৪০ লাখ টাকা ছিল আসবাব কেনার জন্য। চারটি ছয়তলা ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি। তত দিনে ১০ তলার ভিত্তিতে ছয়তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের অনিয়ম তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক দুর্নীতি হয়নি। নকশা পরিবর্তন করে অনিয়ম করা হয়েছে। তবে এর জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজ বাকি ছিল।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছয়তলা মূল হাসপাতাল ভবনের জায়গায় ১০ তলা ভবন, ১০০ শয্যার পরিবর্তে ২০০ শয্যার হাসপাতাল এবং অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে প্রকল্প পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এখন পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
গত বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের নিচেই পাঁচটি বড় গরু ও ছয়টি বাছুর। জানা গেল, এক ব্যক্তি জায়গাটি গরুর খামার হিসেবে ব্যবহার করছেন প্রায় দুই বছর ধরে। দুজন মিস্ত্রি ইট, সিমেন্ট দিয়ে গরুর খাওয়ার জন্য পৃথক জায়গা তৈরি করছেন। গোবর ও অন্যান্য আবর্জনা চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতাল ভবনের বিভিন্ন তলায় কুকুরের বিষ্ঠা। বাথরুমে লাগানো টাইলস বেশির ভাগই কেউ খুলে নিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই খামারি বলেন, ‘বলতে পারেন, আমরা এই খানে খামার করছি বলেই এ এলাকায় মানুষ আসতে পারছে। আমরাই দেইখ্যা-শুইন্যা রাখতাছি এ জায়গা।’ তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে প্রতিষ্ঠানের গ্যারেজের জায়গায় জমা পানিতে পড়ে এক শিশু মারা গেছে। মশারি দিয়ে শিশুর লাশ তোলা হয়। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবনে গত কয়েক বছরে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে।
ছয়তলা আরেকটি ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলায় ২৬ জন আনসার সদস্য থাকছেন দীর্ঘদিন ধরে। আনসার সদস্য শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন,‘দারুস সালাম থানা থেকে আমাদের এখানে থাকতে বলছে, আমরা থাকছি। আমিও শুনছি এইখানে লাশ পাওয়া গেছে। আমরা শুধু এখানে থাকি, আর কিছু দেখি না।’ আনসার সদস্যরা নিজেরাই পানির ট্যাংক এনে পানির ব্যবস্থা করেছেন। একইভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করেছেন। জানালা নেই বলে সেখানে বিছানার চাদর ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তবে ভবনে টয়লেট নেই।
সাংবাদিক এসেছেন শুনে এলাকার কয়েকজন সেখানে জড়ো হন। অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু নাম প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে চাননি। একজন বয়স্ক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইখানে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় অসামাজিক কাজ। ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের অত্যাচারে আমরা টিকতে পারতেছি না।’ আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এইখান থেকে এখন আর সেবা পাইতে চাই না। মানুষ যাতে আর না মরে, তা চাই।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪১:২৪ ৮২১ বার পঠিত