রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০১৬
মুনাফা বাড়লেও প্রবৃদ্ধি কম
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » মুনাফা বাড়লেও প্রবৃদ্ধি কমবঙ্গনিউজ ডটকমঃ টানা তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বিদায়ী বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা (অপারেটিং প্রফিট) বেড়েছে। তবে ব্যাংকঋণে সুদের হার কমে আসা এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক মন্দার কারণে মুনাফা প্রবৃদ্ধি বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম হয়েছে। ব্যাংক খাতের এমন প্রবৃদ্ধিকে ‘স্থিতিশীল’ হিসেবে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি আনিস এ খান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যদিও বছরটা শুরু হয়েছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সে প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
ব্যাংক খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা কমার আরেকটি কারণ ছিল ঋণ ও আমানতের সুদের পার্থক্য (ইন্টারেস্ট স্প্রেড) কমে আসা। ঋণের সুদ ও আমানতের সুদের পার্থক্য ২০১৫ সালে গড়ে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিভিন্ন সেবার জন্য মাশুল হার ও কমিশন আগের চেয়ে কমায় মুনাফা আগের মতো হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের হার সারা বছর স্থিতিশীল থাকায় এ খাত থেকেও ব্যাংকগুলোর আয় খুব একটা বাড়েনি।
মন্দ ঋণের বিষয়ে আনিস এ খান বলেন, বছরের শুরুতে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে অনেক ঋণ পুনর্গঠন করতে হয়েছে। রপ্তানি ঠিক রাখা এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্যই এ সুবিধাগুলো দিতে হয়েছে, যা মন্দ ঋণের অনুপাতকে কিছুটা চাপে ফেলেছে।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এবিবির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানিতে ধীরগতি, বিদেশি ঋণ, অলস টাকার মতো বিষয়গুলো ব্যাংকগুলোর মুনাফায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ বছরও সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। ২০১৫ সালে ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
২০১৫ সালে রাষ্ট্রমালিকানার জনতা ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মুনাফা গত বছরের তুলনায় এ বছর খুব একটা বাড়েনি। বিদায়ী বছরে ইউসিবি মুনাফা করেছে ৮৭১ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাও ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা ২০১৪ সালের তুলনায় মাত্র ৬ কোটি টাকা বেশি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) পরিচালন মুনাফাও বিদায়ী বছরে প্রথমবারের মতো ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৭৩ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে তা ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের বড় ব্যাংক পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা গত বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে তা ছিল ৭৭০ কোটি টাকা।
২০১৫ সালে ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা, আর ২০১৪ সালে তা ছিল ৫৮৫ কোটি টাকা।
আইএফআইসি ব্যাংকের মুনাফা ৩৯১ কোটি থেকে ৪০৬ কোটি টাকা, আল আরাফাহ ব্যাংকের ৬১৩ কোটি থেকে ৬৪৯ কোটি, শাহজালাল ব্যাংকের ২৪৭ কোটি থেকে ২৭৫ কোটি টাকা বেড়েছে।
বড় অঙ্কের মুনাফা হয়েছে এক্সিম, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা ও এবি ব্যাংকের। গত এক বছরে এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা ৫৮৫ কোটি থেকে ৬৬০ কোটি, ডাচ্-বাংলার মুনাফা ৫৩২ কোটি থেকে ৬৭০ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৩৮৫ কোটি থেকে ৫১৯ কোটি, এবি ব্যাংকের মুনাফা ৬৯৩ কোটি থেকে বেড়ে ৭৯০ কোটি টাকা হয়েছে।
গত এক বছরে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৭ কোটি থেকে ৬৫ কোটি টাকা, সাউথ বাংলার ৩২ কোটি থেকে ৮১ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪৫ কোটি থেকে ১১২ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবালের মুনাফা ৫ কোটি থেকে বেড়ে ৩৫ কোটি টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া বিদায়ী বছরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২৫ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংকের ৪০১ কোটি টাকা ও ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪৬২ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৪:৪৫ ৩৪১ বার পঠিত