বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রোগ্রামিংয়ের তিন তারকা।
Home Page » এক্সক্লুসিভ » প্রোগ্রামিংয়ের তিন তারকা।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
নেছার এ নিশানঃ
তারার মতোই উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছেন তাঁরা। মেয়েদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী—নিশাত তাসনিম, নাফিসা নওরীন ও সাদিয়া তাসনিম। - See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/campus/2015/12/23/304852#sthash.eKCL0k2x.9GOZyy8g.dpuf
তারার মতোই উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছেন তাঁরা। মেয়েদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী—নিশাত তাসনিম, নাফিসা নওরীন ও সাদিয়া তাসনিম। - See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/campus/2015/12/23/304852#sthash.eKCL0k2x.9GOZyy8g.dpuf
প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আগে তেমন কিছুই জানতেন না নিশাত। শেখা শুরু করলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে। প্রথম বর্ষে তাঁদের প্রোগ্রামিংয়ের একটি ভাষা ‘সি ল্যাঙ্গুয়েজ’ পড়ান সাইফুল ইসলাম। স্যার বলেন, ‘চেষ্টা করলে তোমরাও কোনো আসরে ভালো করতে পারবে। লেগে থাকো।’ এভাবেই তাঁর ও নাফিসা নওরীনের প্রোগ্রামিংয়ের শুরু। ক্লাসে প্রোগ্রামিংয়ের নানা সমস্যার সমাধান করেন। বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেন। সেগুলোতে গ্রাফ, ডিপি [ডায়নামিক প্রোগ্রামিং], প্রোগ্রামিংয়ের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি অ্যালগরিদমসহ নানা কিছু শেখেন। বড় ভাইয়েরা মেন্টর হিসেবে থাকেন। তাঁরা উৎসাহ দিয়ে বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল কলিজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট বা আইসিপিসিতে ঢাকা অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ব আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। তোমাদেরও ভালো করতে হবে। ফলে সবার মধ্যেই প্রোগ্রামিং নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়, আলোচনা চলে।
২০১৪ সালের নভেম্বরে সিএসসি কার্নিভালে আলাদা দলের হয়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন নিশাত তাসনিম, নাফিসা নওরীন এবং সাদিয়া তাসনিম। এতে তাঁদের জাতীয় পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা হলো। পাঁচ ঘণ্টার এই প্রতিযোগিতা তাঁদের শিখিয়েছে কিভাবে ধৈর্য ধরে টানা প্রোগ্রামিং করে যেতে হয়, কোন কৌশলে এগোলে ভালো ফল আসে। ফলে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিল। সেখানে তিনটি সমস্যার সমাধান করেছিলেন তাঁরা। এরপর থেকে আরো উৎসাহ বেড়ে গেল। ইন্টারনেট ঘুরে নানা ধরনের সমস্যার সমাধানে লেগে থাকেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বড় ভাইদের সাহায্য নেন।
এ বছরের অক্টোবরের শেষের দিকের ঘটনা। ফেসবুকের মাধ্যমে জানলেন, কেবল মেয়েদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রোগ্রামিংয়ের আসর বসতে যাচ্ছে। সাইফুল স্যারের সঙ্গে আলাপ হলো এবং তিনি তিনজনের একটি দল গড়ে দিলেন। তাঁদের মধ্যে নিশাত ও নাফিসা দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। সাদিয়া তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। অনেক ভেবে প্রোগ্রামিংয়ের এই নতুন মুখগুলো দলের নাম রাখলেন ‘সাস্ট টুইংকেল’। নিজেদের তাঁরা তখন প্রোগ্রামিংয়ের আকাশে মিটিমিটি তারার মতোই ভাবছিলেন। তবে ভাবতেও পারেননি, সামনে তাঁরা কত উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবেন।
তৃতীয় বর্ষের শামীম ভাইয়ের সাহায্যে সবাই প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি বিভিন্ন সমস্যার লিংক পাঠান। কোনো একজনের বাসায় বসে সবাই মিলে সেগুলোর সমাধান করেন। একের পর এক মজার মজার খাবার আসে। সবাই মিলে খান। টানা কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠলে তিনে মিলে ঘুরতে যান। এভাবে শিখতে শিখতে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা চলে এলেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসে বসল ‘ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’। ৬৩টি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তিনজনের দল হয়ে সেখানে অংশ নিলেন। সাস্ট টুইংকেলরা জানতেন, ভালো করবেন। কিন্তু ভার্সিটির নাম রাখতে পারবেন তো, সে ভয়েও ছিলেন। প্রতিযোগিতায় শুরুতে দুটো সমস্যা সমাধানের পর তাঁরা সাত নম্বরে ছিলেন। তবে চতুর্থ সমস্যা সমাধানের পর সবার আগে চলে এলেন। এ জন্য তিনজনকেই কৃতিত্ব দিতে হয়। যেকোনো সমস্যা বিশ্লেষণ করতে নাফিসার জুড়ি নেই। যত চাপই হোক না কেন প্রোগ্রাম তৈরির পর সেটিকে লেখার [কোড] ক্ষেত্রে নিশাত দারুণ কার্যকর। আর দুজনের কাজের সমন্বয় করেন সাদিয়া। এভাবেই সেখানে সেরা হলো ‘সাস্ট টুইংকেল’।
পুরস্কার হিসেবে তাঁরা একটি ট্রফি এবং ত্রিশ হাজার টাকা প্রাইজমানি পেয়েছেন। ক্যাম্পাসে ফেরার পর সবার কাছ থেকে দারুণ অভিনন্দনে ভাসলেন। স্যার ফেসবুকে লিখলেন, ‘তোমরা সাস্টকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে গিয়েছ। অভিনন্দন।’ বাবা-মা বলেছেন, ‘আমরা গর্বিত।’
মেয়েদের এই প্রতিযোগিতা নিয়ে বলতে গিয়ে নিশাত বলেন, ‘প্রোগ্রামিংয়ে বেশি সময় দিতে হয় বলে মেয়েরা খুব দ্রুত ছেড়ে দেয়। এ প্রতিযোগিতা তাঁদের উৎসাহ দেবে।’ নাফিসা বলেন, ‘সব কিছু এখন আইসিটিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রোগ্রামিং শেখাটা খুবই কাজে দেবে।’ সাদিয়া বললেন, ‘প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতার বিকাশ হবে।’ এখন তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন, লেখাপড়া শেষে গুগলে কাজ করতে যাবেন বা কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করবেন। এর মধ্যে কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য বয়ে আনার চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৬:০১ ৪৪৭ বার পঠিত