বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫
৪০ পৌরসভায় বাধার মুখে বিএনপি
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ৪০ পৌরসভায় বাধার মুখে বিএনপি
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ অন্তত ৪০টি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী জনসংযোগে হামলা ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। মাঠে থাকলেও ভয়ে ভয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁদের সমর্থক-অনুসারীরা। এর মধ্যে ঢাকার সাভার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ কয়েকটি পৌরসভার প্রার্থীরা গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর গত নয় দিনে সারা দেেশ ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যাচাই–বাছাই করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বিএনপির দাবি, প্রায় সব পৌরসভায় তাদের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিদিন সরকারদলীয় প্রার্থীর অনুসারীদের হামলা ও বাধার শিকার হচ্ছেন। এর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বাদ যাননি।
৩০ ডিসেম্বর সারা দেশ ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। বিএনপির প্রার্থী আছেন ২১৯টি পৌরসভায়। এর মধ্যে ৩২টি পৌরসভায় বিএনপির নেতারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) হয়ে লড়ছেন।
ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। প্রার্থী ও দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর মধ্যে ধামরাইয়ে বিএনপির প্রার্থী মাঠে থাকলেও সাভারের প্রার্থী পালিয়ে আছেন ক্ষমতাসীনদের ভয়ে। গত সোমবার সাভারে বিএনপির প্রার্থী বদিউজ্জামান নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। কিন্তু সরকারদলীয় প্রার্থী আবদুল গণির অনুসারীরা হামলা করে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড করে দেন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় নেই, তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সোমবারই তিনি সাভারে এসেছিলেন। ঘটনার পর আতঙ্কে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষের নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, সাভারে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেয়র রেফাত উল্লাহ। কারাবন্দী এই নেতা মনোনয়ন পেয়েও ‘ভয়ে’ নির্বাচন করতে রাজি হননি বলে এলাকায় আলোচনা আছে। পরে বিএনপি বদিউজ্জামানকে প্রার্থী করে।
ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জ সদর ও মীরকাদিম পৌরসভার পাড়া-মহল্লা আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। কিন্তু এ দুই পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার খুঁজে পাওয়া কঠিন। মাইকিংও নেই। মুন্সিগঞ্জ সদরে বিএনপির এ কে এম ইরাদত মাঝে মাঝে জনসংযোগে করছেন পুলিশের পাহারায়। আর মীরকাদিমে বিএনপির প্রার্থী মো. শামছুর রহমান এলাকায় থাকলেও বোঝার উপায় নেই। মীরকাদিম পূর্বপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে তাঁর কিছু পোস্টার দেখা গেলেও পৌরসভার অন্যত্র পোস্টার-ব্যানার নেই।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ১০ ডিসেম্বর জেলার সভাপতিসহ নেতারা শহরে প্রচার শুরু করলে আওয়ামী লীগ বাধা দেয়। এরপর থেকে বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো প্রচার চালাচ্ছে না।
মুন্সিগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী এ কে এম ইরাদত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পক্ষে প্রচারে নামলেই সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষের লোকজন হামলা করছে এবং নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। পোস্টার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।’
কুমিল্লার ছয় পৌরসভার নির্বাচনে চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রামে বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারে বাধার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত সোমবার চৌদ্দগ্রামের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর একটি মাইক্রোবাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সোমবার কুমিল্লার চান্দিনায় দলীয় প্রার্থীর জনসংযোগে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আক্রোশে পড়েন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। এ সময় তাঁদের অবস্থানস্থলের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা আমাদের উঠানবৈঠকেও হামলা করছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেই। মনে হচ্ছে ফ্রি-স্টাইলে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া চলছে।’
জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা ভয়ে ভয়ে মাঠে আছেন। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ, মুলাদি ও বানারীপাড়া বিএনপির প্রার্থীরা ভীতির মুখে এলাকায় আছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় তাঁদের পোস্টার ও নির্বাচনী প্রচার খুব একটা নেই। দলীয় প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। জেলার কুয়াকাটা পৌরসভায়ও বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে নেই। কলাপাড়ায় বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে, তাতে আমরা বিস্মিত নই।’
বরগুনার তিন পৌরসভার মধ্যে সদরে আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থীর দৃষ্টি এখনো বিদ্রোহীর দিকে। ফলে বিএনপির প্রার্থী এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। তবে জেলার অপর দুই পৌরসভা বেতাগীতে বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন কবির মল্লিক ও পাথরঘাটায় মল্লিক মো. অহিদুরকে নির্বাচনী প্রচারে বাধার ঘটনা ঘটেছে। পাথরঘাটায় বিএনপির প্রার্থী ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি ভঙ্গে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালীর চারটি পৌরসভার মধ্যে চাটখিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। সেখানে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামালের কাছ থেকে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্রে সই নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাকি তিন পৌরসভার মধ্যে বেগমগঞ্জে সরকারদলীয় প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন। তাঁর একটি উঠানবৈঠকে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
লক্ষ্মীপুরের তিন পৌরসভার কেবল রায়পুরে বিএনপির প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র এ বি এম জিলানীকে নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়া ও হুমকি-ধমকির অভিযোগ উঠেছে সদরের মেয়র আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী ইসমাঈল খোকন তাহেরের আপন ভায়রা ভাই।
চাঁদপুরের পাঁচটি পৌরসভার দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মধ্যে ছেংগারচরে বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের কাছ থেকে। আর হাজীগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান খান বাধা পাচ্ছেন দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের কাছ থেকে। গত সোমবার পৌরসভার টোরাগড় গ্রামে বিদ্রোহী হেলাল উদ্দিন মজুমদারের সমর্থকেরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন।
ফেনীর তিন পৌরসভার দুটিতে সরকারি দলের মেয়র পদপ্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন। দাগনভূঞা পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী কাজী সাইফুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে এলাকাছাড়া ছিলেন। তিন দিন ধরে তিনি নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। তবে তাঁকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগও করেছেন।
বগুড়ার নয়টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দিতে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাকি আট পৌরসভার সবকটিতে তাদের প্রার্থীরা মাঠে আছেন, প্রচারও চালাচ্ছেন। এর মধ্যে বগুড়া সদর পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী এ কে এম মাহবুবর রহমান গতকাল মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলীর কাছে সরাসরি অভিযোগ করেছেন প্রচারে বাধা দেওয়ার। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলন ও থানায় ডায়েরিও করেছেন। এ ছাড়া নন্দীগ্রামে বিএনপির প্রার্থী সুশান্ত কুমার প্রথম আলোকে বলেছেন, স্থানীয় জাসদদলীয় সাংসদ এ কে এম রেজাউল করিম ও তাঁর সমর্থকেরা বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
রাজশাহীর ১৩টি পৌরসভার ১২ টিতেই বিএনপির প্রার্থীরা ভালোভাবে মাঠে আছেন বলে জানা গেছে। তবে বাগমারার তাহেরপুরে বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম মো. শামসুর রহমান নির্বাচনী এলাকার সব জায়গায় যেতে পারছেন না। কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রচারে তাঁকে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সাতক্ষীরার দুই পৌরসভার কোনোটিতেই বিএনপির প্রার্থীদের জোরালো প্রচার নেই। এর মধ্যে কলারোয়ায় বিএনপির প্রার্থী আকতারুল ইসলাম দলবল ছাড়া অনেকটা একাই গণসংযোগ করছেন। জানতে চাইলে আকতারুল বলেন, তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা চাপে আছেন।
গাইবান্ধার তিন পৌরসভার দুটিতে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারে আছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে জেলার গোবিন্দগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী ফারুক আহমেদ প্রকাশ্যে গণসংযোগে নেই। নাশকতার মামলা থাকায় তিনি নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করছেন আড়ালে-আবড়ালে থেকে।
সিরাজগঞ্জের ছয়টি পৌরসভায় মাঠে আছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে প্রচারে নানা বাধা আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে বেলকুচিতে বিএনপির প্রার্থী আল আমিন জামাল জানিয়েছেন, গতকাল তাঁর এক কর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এলাকায় তাঁর পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদরে বিএনপির প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও সাতজনকে আহত করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের চার পৌরসভার মধ্যে শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপির দুই প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন নীরবে। শৈলকুপায় বিএনপির প্রার্থীর প্রচারে বাধা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপির প্রার্থীকে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর অনুসারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জামালপুরের ছয় পৌরসভার মধ্যে মাদারগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী নিজে থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া। বাকি পাঁচ পৌরসভার মধ্যে সদরের প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলার ১৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর ও মাটিরাঙ্গায় এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই, বারইয়ারহাটে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর প্রতিদিনই হামলা ও বাধার ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। বান্দরবান সদরের কয়েকটি ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী জাবেদ রেজা ক্ষমতাসীন দল থেকে বাধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা নুরুল আমিনকে মারধর ও তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বারইয়ারহাটে বিএনপির প্রার্থী মাঈনুদ্দীন মারধরের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাঁর প্রচারে গিয়ে প্রার্থীর ভাই ও সাবেক মেয়র জালাল উদ্দিন লাঞ্ছিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০১:৫৯ ২৬৬ বার পঠিত