মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

অচল ইমরুল আর ভুলে যাওয়া অলকে জিতল কুমিল্লা

Home Page » এক্সক্লুসিভ » অচল ইমরুল আর ভুলে যাওয়া অলকে জিতল কুমিল্লা
মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫



কুমিল্লার জয়-উৎ​সব। ছবি: শামসুল হককুমিল্লার জয়-উৎ​সব। ছবি: শামসুল হক

বঙ্গনিউজ ডটকমঃ অলক কাপালি। মনে পড়ে? বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রায় ভুলে যাওয়া একটি নাম। একটি আক্ষেপ, হাহাকার! ইমরুল কায়েস? ‘ও ওয়ানডেতেই চলে না, আর টি-টোয়েন্টি!’

 

চার বছর ধরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে ব্রাত্য থাকা সেই অচল ইমরুল টানা দুই ম্যাচে খেললেন দুর্দান্ত। গত ম্যাচে ৬৭ করে কুমিল্লাকে ফাইনালে নিজের কাজ শেষ ভাবেননি। আজ আজ ৩৭ বলে ৫৩ করে ভিত্তি গড়ে দিলেন জয়ের। রান তোলার স্নায়ুচাপে একের পর এক উইকেট হারাতে হারাতে সমীকরণ কঠিন করে ফেলা কুমিল্লাকে ২৮ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংসে জেতালেন সেই ভুলে যাওয়া কাপালি।

শেষ বল পর্যন্ত রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ভিক্টোরিয়ানস নামটি সার্থক করল কুমিল্লা।

লড়াইটা ছিল দুই ম-এরও। মাশরাফি বনাম মাহমুদউল্লাহ। মাশরাফির আকাশে তুলে দেওয়া বলটা ফ্লাডলাইটের ধাঁধানো আলোকেও অগ্রাহ্য করে লুফে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাশরাফির নামের পাশে শূন্য। সেই লড়াইয়ে মাহমুদউল্লাহ জিতেছেন। নিজে দলের সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংসও খেলেছেন। বরিশালের ঘরের ছেলে শাহরিয়ার নাফীসকে সঙ্গে নিয়ে ১৫৬ রানের পুঁজিও এনে দিয়েছেন।

কিন্তু তার পরও জয় হলো মাশরাফিরই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন বানালেন এই আশ্চর্য জাদুকর। ব্যক্তিগতভাবে মাশরাফির এটি শিরোপার হ্যাটট্রিক। এর আগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়কের ভূমিকাতে প্রথম দুই আসরেও ট্রফি উঠেছিল মাশরাফির হাতেই।

অলকের ইনিংসটা শুরু বল আর রানের সংখ্যায় ব্যাখ্যা করা যাবে না। অলক তখনো রানের খাতা খোলেননি, খানিকক্ষণ আগে উইকেটে এসেছেন। ১১ ওভার শেষে কুমিল্লার স্কোর ২ উইকেটে ৯০। ৫৪ বলে মাত্র ৬৭ রান দরকার, হাতে ৮ উইকেটের রসদ। খোদ অলকই হয়তো ভাবেননি, মঞ্চটা এভাবে তৈরি হয়ে যাবে তাঁর নায়ক হওয়ার!

পরের ওভার থেকেই মঞ্চটা তৈরি হলো। প্রথম ইমরুল বিদায় নিলেন। একে একে ফিরলেন আসহার জাইদি, স্টিভেনস আর মাশরাফিও। একের পর এক উইকেট পড়েছে, রান আর বলের সমীকরণ ততটাই কঠিন হয়েছে। শেষ দুই ওভারে দরকার ২৩। পর পর দুই বলে উইকেট হারানোর সেই ১৯তম ওভার থেকেই আসল জাদু শুরু অলকের। ১২ বলে ২৩ টানা তিনটি ডট বলে সমীকরণ হয়ে গেল ৯ বলে ২৩। কুপারের ওই ওভারের শেষ তিন বলে দশ রান তুলে মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচটি আবারও মুঠোয় ফেরালেন অলক।

৬ বলে ১৩। মোহাম্মদ সামি প্রথম বলেই ফেরালেন শুভাগত হোমকে। পরের বলে কুলাসেকারা পড়িমরি করে বাই এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে ফেরালেন অলককে। পর পর দুই বলে চার। তৃতীয় বলেও চারটি হলো না কাভারে অবিশ্বাস্যভাবে বাউন্ডারি ঠেকিয়ে। ২ রান কম উঠল। তবে স্কোর হয়ে গেল সমান। শেষ বলে দরকার ১। তবে কি টুর্নামেন্টের প্রথম টাই? প্রথম সুপার ওভার? পায়ের ওপরে পড়া ফুলটসটা ফ্লিক করলেন, সেই অলক, যাঁর কবজির মোচড়ে আশ্চর্য সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট।

অলকই সমাপ্তি টানলেন। কুমিল্লা, টুর্নামেন্টের শুরুতে অনেকের চোখেই বাতিলের খাতায় পড়ে যাওয়া একটা দল। অলক, অনেকের চোখে বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া এক খেলোয়াড়। বিপিএলের এবারের আসরের শেষ বলে এর চেয়ে ভালো সমাপ্তি আর কী হতে পারে!

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৫৮   ২৯৯ বার পঠিত