সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

Home Page » প্রথমপাতা » শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫



sahid_budhhijibi_day_vorerpataবঙ্গনিউজ ডটকমঃ আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে এক স্মরণীয় ও কলঙ্কের দিন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছিল এবং পাকিস্তানিরা যখন বুঝতে পারলো মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই বিজয়ের দু’দিন আগে এই দিনে এদেশের পাকিস্তানি দোসর, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অর্থাৎ বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

পৈশাচিক এ হত্যাযজ্ঞের পর বাংলার এ বীর সন্তানদের মরদেহ ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যায়। মূলত হত্যাকারী স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল পরাজয় তাদের অনিবার্য। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে বুদ্ধিজীবীদের রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এ বর্বর ঘটনা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। যার ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন আজ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ’৭০-এর নির্বাচন হতে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য এদেশের কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বিশ্ববাসীসহ সারা বাংলার জনগণ মনে করে, নিরস্ত্র বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ মার্চের কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন, বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে সেক্টরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান ছাড়াও সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উজ্জীবিত করার জন্যও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বীর বাঙালির সাহস ও মেধার কাছে যখন একে একে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প, আস্তানা নিশ্চিহ্ন হতে লাগল, একে একে পরাস্ত হয়ে যখন আত্মসমর্পণ করতে লাগল, তখনই বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক পূর্বমুহূর্তে এদেশে থাকা রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশকে চিরদিনের জন্য মেধাশূন্য দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী ওই রাজাকারদের বাঙালি জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না বা করেওনি। নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি ইতোমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর প্রথম প্রহরে মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ দিয়েছে ক্ষমা নেই যুদ্ধাপরাধী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীর। এতে প্রমাণিত হলো- অপরাধ কখনো অপরাধীকে ছেড়ে যায় না, কালের আবর্তে ঢাকা পড়লেও মানবিকতার টানে অপরাধীকে তার শাস্তি ভোগ করতেই হবে। বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি চৌধুরী মাইনুদ্দীন (লন্ডনে) ও আশরাফুজ্জামান (নিউইয়র্কে)। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি আজ সর্বত্র। বাঙালি তার সূর্যসন্তানদের হত্যাকারীদের নিশ্চিহ্নে বদ্ধপরিকর।

’৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী ও কলঙ্কজনক বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী বাকি রাজাকারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে গোটা জাতি। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিয়েছে পৃথক কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাভভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সরকার, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা; সকাল ৮:১০ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন; সকাল ৮:৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন; সকাল ৯:১০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ; বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের ন্যায় সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দেশের সব শাখা আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৯:৫১   ৩১৩ বার পঠিত