বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫

দুই বড় দলেই নারী ও সংখ্যালঘুরা উপেক্ষিত

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » দুই বড় দলেই নারী ও সংখ্যালঘুরা উপেক্ষিত
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫



পৌরসভা নির্বাচনবঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মাত্র আটজন নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাতজন আর বিএনপি একজন নারীকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছেন। বাকি দলগুলোর প্রার্থীর তালিকায় কোনো নারী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের বাইরে ১২ জন নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন মোট ২০ জন নারী। বাম দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কোনো নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি।
দলগুলোর মেয়র প্রার্থীর তালিকায় সংখ্যালঘু প্রার্থীদের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। বিভিন্ন দল থেকে ১৯ জন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আটজনকে, বিএনপি ছয়জনকে এবং বাকি দলগুলো আরও পাঁচজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। যদিও দলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার পাঁচটি পৌরসভায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কাউকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়নি।
বাংলাদেশের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর। কিন্তু রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা পিছিয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সাত নারী হলেন পঞ্চগড় পৌরসভায় জাকিয়া খাতুন, ঠাকুরগাঁওয়ে তাহমিনা খাতুন, রাজশাহীর চারঘাটের নারগিস খাতুন, নাটোরের গোপালপুরে রোকসানা মোর্তুজা ও সিংড়ায় উমা চৌধুরী, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আশানুর বিশ্বাস এবং নারায়ণগঞ্জের তারাবতে হাসিনা গাজী।
আর মেয়র পদে বিএনপির একমাত্র নারী প্রার্থী হলেন শাহনাজ আক্তার। তিনি কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। শাহনাজের স্বামী হুমায়ুন কবির পারভেজ পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ‘নিখোঁজ’ আছেন।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, মেয়র পদে নারীদের সংখ্যা কম। কিন্তু বৈষম্য করে তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি এটা ঠিক নয়। জয়ী হয়ে আসার মতো নারী প্রার্থী বেশি না থাকায় মনোনয়ন কম দেওয়া হয়েছে। একই কথা বললেন সংখ্যালঘু ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের দল নারী বা কোনো সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করেনি। এবার একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে না। বিএনপি কেবল গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য নির্বাচন করছে। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে নারী ও সংখ্যালঘু থেকে প্রার্থী কমেছে। এটা হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি সেদিকে নিয়ে গেছে।
৩০ ডিসেম্বর পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১ হাজার ২২৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ২০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ৭১১ জন। আওয়ামী লীগ ২৩৫, বিএনপি ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৯৩টি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। অন্যান্য দল ১৪৭ জনকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। অবশ্য সংরক্ষিত নারী আসনের ৭৩৩টি ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন নারী প্রার্থী।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীকে রাখতেই হবে। এই শর্ত মেনেই ২০০৮ সালে দলগুলো নিবন্ধন পায়। প্রায় সাত বছর পর এসে কোনো দলের মেয়র পদে মনোনয়নে নারীরা তিন শতাংশের বেশি মনোনয়ন পাননি। আর গড় হিসেবে মোট দলীয় মেয়র পদে নারীরা মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ১ শতাংশ।
নারী নেত্রী ও জাতিসংঘ সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান বলেন, ‘এত কমসংখ্যক নারীর মনোনয়নে আমি খুবই মর্মাহত, কিন্তু আশ্চর্য হয়নি। নারী সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু নারী-পুরুষের সমতা আসেনি। দলগুলো এখনো নারীদের যোগ্য প্রার্থী মনে করে না। নির্বাচন কমিশনও এটা করছে না। সেটা তাদের বরাদ্দ দেওয়া প্রতীক দেখে বোঝা যায়।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কথা ও কাজের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা ঠিক যে রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন হবে না। তবে পরিবর্তনের জন্য যা করা দরকার, সেটা তারা শুরু করছে না।
পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র ও আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সংখ্যা কম। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ১৪ জন নারী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি দিয়েছিল ১২ জনকে।
অবশ্য দলগুলোর নেতারা বলছেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা জনপ্রিয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। নারী-পুরুষ বা সম্প্রদায় বিবেচনায় আনেননি। যে প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রাজনীতিতে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে বলেছি।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দেখা হয়। জয়ের সম্ভাবনা দেখা হয়। সংখ্যালঘুরা আরও বেশি রাজনীতিতে এলে, সক্রিয় হলে মনোনয়নের পরিমাণ বাড়বে।
বাংলাদেশ হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের কেবল ভোটার হিসেবে দেখে। তাদের যে ক্ষমতায়ন করা দরকার, সেটা তারা দেখে না। তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালে ৩০৯ আসনের মধ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৭১ জনের। এটা ক্রমাগত কমছে। তিনি বলেন, দলে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন যেখানে বাড়ানো দরকার, সেখানে কমছে। এ জন্য তাঁরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দাবি করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪২:৫৮   ২৭৩ বার পঠিত