মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
Home Page » বিশ্ব » যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার নতুন আবদার তুলেছেন। তাঁর দাবি, মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে সাময়িকভাবে হলেও যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। গতকাল সোমবার সাউথ ক্যারোলাইনায় এক নির্বাচনী সভায় এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে নির্বাচনী দপ্তর থেকে প্রচারিত এক তথ্য বিবরণীতে ট্রাম্প জানান, আমেরিকার প্রতি মুসলিমদের বিদ্বেষ এত তীব্র যে তা ‘ধারণারও বাইরে’। এই ঘৃণার উৎস কী এবং আমেরিকার জন্য তা কী হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা পুরোপুরি বুঝে না ওঠা পর্যন্ত মুসলিমদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চালু রাখার প্রস্তাব করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘যারা জিহাদে বিশ্বাস করে ও মানবজীবনের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা পোষণ করে না, এমন মানুষের কাছ থেকে আমরা অব্যাহত হামলার শিকার হতে পারি না।’
গত মাসে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই ট্রাম্প একের পর এক তাঁর মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এর আগে তিনি আমেরিকার সব মুসলিমের তালিকাভুক্তি, মসজিদে নজরদারি প্রতিষ্ঠা এবং দরকার হলে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন। সিরিয়া থেকে আসা কোনো মুসলিম উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধেও কথা বলেন তিনি।
মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হলেও ট্রাম্প তাঁর উত্তেজক বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করেননি। অনেক পর্যবেক্ষক ভেবেছিলেন, মার্কিন নির্বাচকেরা তাঁর এই বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থানের প্রতি সমর্থন দেবে না। কার্যত দেখা যাচ্ছে, তিনি মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার মাত্রা যত চড়াচ্ছেন, রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন তত বাড়ছে। সবশেষ জনমত গণনায় তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শল্যচিকিৎসক বেন কারসনের চেয়ে ১৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে।
এর এক দিন আগে গত রোববার ওভাল অফিস থেকে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসলাম বা মুসলমানদের ঢালাওভাবে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। ওবামা বলেন, সব মুসলমানকে শত্রু চিহ্নিত করলে শুধু লাভবান হবে আইএস। কারণ তারা বর্তমান লড়াইকে ইসলামের সঙ্গে পশ্চিমের লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়।
ওবামা মুসলমানদের আমেরিকার মিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যেকোনো ধরনের ‘ইসলামোফোবিয়া’ বা ‘ইসলামভীতি’র বিরুদ্ধে সচেতন থাকার আহ্বান জানান ওবামা।
রিপাবলিকান পার্টির অন্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা এত দিন পর্যন্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কথা-যুদ্ধের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গতকাল দেওয়া ট্রাম্পের বক্তব্য তাঁরা সবাই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ ট্রাম্পকে ‘বিকৃত মস্তিষ্ক’সম্পন্ন বলে পরিহাস করেছেন।
নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, শুধু অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পক্ষেই এমন আজেবাজে কথা বলা সম্ভব।
টেক্সাসের অতিরক্ষণশীল সিনেটর টেড ক্রুজ এত দিন ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই তিনিও ট্রাম্পের মুসলিম-নিষিদ্ধকরণের প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ক্রুজ বলেন, ‘আমি এমন নীতি সমর্থন করতে পারি না।’ তবে সিরিয়া থেকে শুধু খ্রিষ্টান উদ্বাস্তুদের আসতে দেওয়ার যে প্রস্তাব তিনি আগে করেছেন, সে কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা থেকে শুরু করে ডেমোক্রেটিক পার্টির সব প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও অধিকাংশ কংগ্রেস সদস্য তীব্র ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা করেছেন।
উদারনৈতিক মহলও ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। কোনো কোনো ভাষ্যকার ট্রাম্পের বক্তব্যকে সরাসরি ফ্যাসিবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মুসলিমদের ওপর এরকম ঢালাওভাবে নিষিদ্ধের প্রস্তাব শুধু অতিদক্ষিণপন্থী জাতিবিদ্বেষী ‘হেইট গ্রুপ’-এর কাছ থেকেই আসা সম্ভব।
মুসলিমদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করলেও কীভাবে তা কার্যকর হবে অথবা কত দিন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে, ট্রাম্প সে কথা বিস্তারিত বলেননি।
প্রতিবছর হাজার হাজার মুসলিম পর্যটক আমেরিকায় ভ্রমণে আসেন। বছরে প্রায় এক লাখ মুসলিম দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য গ্রিন কার্ড পেয়ে থাকেন।
টাইমস জানিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩-এই পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৬ লাখ ৮০ হাজার মুসলমানকে গ্রিন কার্ড দিয়েছে।
হাজারো মুসলিম আমেরিকান মার্কিন সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করছেন। সেনাবাহিনীতে দোভাষীর কাজ করেন-এমন মুসলিমের সংখ্যাও কয়েক হাজার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব কার্যকর হলে মার্কিন মুসলিম নাগরিকদের দেশটির শাসনতন্ত্রে মৌলিক অধিকারের যে নিশ্চয়তা দেওয়া আছে, তা লঙ্ঘিত হবে
বাংলাদেশ সময়: ১০:২১:৩৩ ২৮৮ বার পঠিত