মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫
নারী প্রার্থীদের প্রতীক এবারও বদলাবে না নির্বাচন কমিশন
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » নারী প্রার্থীদের প্রতীক এবারও বদলাবে না নির্বাচন কমিশনবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা বৈষম্যমূলক প্রতীক বদলের সুযোগ থাকলেও সে পথে হাঁটতে রাজি নয় নির্বাচন কমিশন। এর জন্য কমিশন সময়স্বল্পতার দোহাই দিচ্ছে।
দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের নারী নেতারা এসব প্রতীক রাখায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রতীক-গুলোকে সম্মানহানিকর উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নারী নেতারা শিগগিরই এগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে।
নারীদের জন্য বরাদ্দ করা প্রতীকগুলো হলো গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, আঙুর, কাঁচি, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম। সমালোচকদের মতে, এসব প্রতীক নারী-পুরুষ সমতানীতির পরিপন্থী। এসব প্রতীক বরাদ্দ করার মানে হলো, দেশের উন্নয়ন ও নেতৃত্বে নারীর ভূমিকাকে গণমানুষের কাছে হাস্যকর করে তোলা। এই প্রতীক রাখার মাধ্যমে নারীর প্রতি অবহেলার দৃষ্টিই ফুটে বেরিয়ে এসেছে।
তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, নারীদের অসম্মান করার জন্য এসব প্রতীক রাখা হয়নি। ভবিষ্যতে এগুলো পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করা হবে।
এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থীদের জন্য এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছিল। তখনো সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে এর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। কমিশন তখন বলেছিল, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতীক যাতে না থাকে, সে বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
এসব প্রতীক সম্পর্কে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নারীদের অসম্মান করেছে। একজন নারী ও একটি দলের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আমি অসম্মানবোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী দেশে নারীর জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। আর কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, নারীরা যেন ঘরেই আবদ্ধ থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কমিশন যাতে এমন কিছু করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা দলীয়ভাবে সজাগ থাকব।’
বিএনপির মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রাব্বানী এসব প্রতীক বাতিল করে নতুন প্রতীক বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বলেন, যেমন সরকার, তেমন কমিশন, তেমনই প্রতীক। যাঁরা এসব করেছেন, তাঁরা জেন্ডার-সচেতন নন।
একই দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক নাজমা আক্তার বলেন, কমিশন আগেও এজাতীয় প্রতীক বরাদ্দ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। একই ভুল দ্বিতীয়বার কেন হলো? চুড়ি, পাটা-পুতা এগুলো কোনো সভ্য দেশের প্রতীক হতে পারে?
পৌরসভা আইনে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই হিসেবে কমিশন পক্ষে এখনো সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ করা প্রতীকগুলো বাদ দেওয়া সম্ভব। কারণ, ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১৪ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নারীদের অসম্মান করার জন্য এসব প্রতীক রাখা হয়নি। পৌরসভা নির্বাচনের আইন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কমিশনকে তাড়াহুড়ো করে বিধি সংশোধন করতে হয়েছে। যে কারণে অনেক বিষয়ে ভালো করে আলোচনার সুযোগ হয়নি। এখন হাতে সময় আছে মাত্র ছয় দিন। তাই এসব প্রতীক বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে এসব প্রতীক অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।
কমিশন সচিবালয় থেকে জানা গেছে, এবার ২৩৫টি পৌরসভায় ভোটার ৭০ লাখের বেশি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থীদের জন্য ৭০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ইতিমধ্যে ছাপা হয়ে গেছে। এখন বিধি সংশোধন করে প্রতীক বদল করলে ছাপা হওয়া ব্যালট পেপারও বাতিল করতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্বিক মানদণ্ডে প্রতীকগুলো যে কারও জন্য অসম্মানজনক। সচিবালয় থেকে এ ধরনের প্রতীক প্রস্তাব করার পর কমিশনের তা অনুমোদন করা ঠিক হয়নি।
দুই সংগঠনের প্রতিবাদ: নারীদের জন্য বৈষম্যমূলক প্রতীক বরাদ্দ করায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এক বিবৃতিতে মহিলা পরিষদ বলেছে, নারীরা ঘরে ও ঘরের বাইরে শ্রম দিচ্ছে। নারীরা যখন দেশের রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনীতির সূচককে এগিয়ে নিচ্ছে, তখন কমিশনের এজাতীয় প্রতীক বরাদ্দ করা নারীদের ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, নির্বাচন কমিশন নারীদের অসম্মানজনক প্রতীক বরাদ্দ করে সনাতন ও বৈষম্যমূলক মনোভাব এবং চিন্তার সীমাবদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৩:৩০ ২৪৫ বার পঠিত