বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

ব্যক্তিচাহিদা কমায় বিনিয়োগে ভাটা

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ব্যক্তিচাহিদা কমায় বিনিয়োগে ভাটা
বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫



বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২০১৫ সালের যাত্রা। দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মানুষের মাঝে আতঙ্ক কাটেনি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া কেউ কিছু কিনছেন না। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। আর উৎপাদনে আস্থাহীনতা বিনিয়োগে মন্দার কারণ বলছেন শিল্প মালিকরা।

বিশেষ করে, শিল্পোৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে সূচকের উন্নতি করতে হলে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের বিকল্প নেই। কিন্তু দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গ্যাসের সঙ্কট এখনও কাটেনি। তবে সাময়িক এ ধরনের স্থবিরতা মোকাবিলায় সরকারের বিশেষ নজরদারি ও নীতি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

শিল্পপণ্যের উৎপাদন কমার তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে। এতে দেখা যায়, জুট, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, ওষুধ, বেভারেজ ও ভোজ্য তেলের উৎপাদন কমেছে। জুট টেক্সটাইল খাতে জুলাইয়ে উৎপাদন হয়েছে ১৬ হাজার ৫৪৩ টন, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম।

একই সময়ে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার পণ্য, যা আগের মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৭৫ ও এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম। জুলাইয়ে ৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার নিটওয়্যার পণ্য উৎপাদন হলেও আগের মাসের তুলনায় তা ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। আর এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় কম ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এছাড়া পেট্রোলিয়াম প্রডাক্টের উৎপাদন জুনের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কমে জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪০ টন। ২০১৪ সালের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য সময়ে এ পণ্যের উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। পাশাপাশি ওষুধ শিল্পের উৎপাদন প্রায় ২৪ শতাংশ কমে জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৩ কোটি টাকার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ শতাংশ কম।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্ম্মদ বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ ও রফতানিমুখী দুই ধরনের শিল্প ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। আমদানিকারক দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রফতানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও পাটের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় রফতানিকারকরা আয়ও কম পাচ্ছেন। ফলে দেশের রফতানিকারকরা কিছুটা হলেও উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।’

একই সময়ে দেশে সারের উৎপাদনও কমেছে। চলতি বছরের জুনের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ কমে জুলাইয়ে সার উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার ২৩৩ টন। ভোজ্য তেলের উৎপাদন ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৭১ টন। রফতানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত নিয়ে উদ্যোক্তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত দেখা যাচ্ছে।

ক্রেতারা আসছেন না-পোশাক মালিকরা বললেও মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের দাবি, ক্রেতারা নিয়মিত দেশে আসছেন এবং পর্যাপ্ত অর্ডারও দেওয়া হচ্ছে, যা আগের বছরের মতোই। কিন্তু বাস্তবে গত দু’বছরে দেড় হাজারেরও অধিক কারখানা কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে পরিদর্শন, মূল্যায়নসহ নানা কর্মকা-ে বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকিগুলোতেও উৎপাদন কমেছে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী ভোরের পাতাকে বলেন, ‘চাহিদা কমে গেছে এ কথা মানতে আমি নারাজ। প্রয়োজনীয় সব পণ্যেরই আগের মতো চাহিদা ও উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। তবে আগের তুলনায় একটু বেশি বিদেশে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হয়।’

দেশের রফতানিমুখী শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ওঠানামা করছে বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব পড়তে পারে অন্যান্য উৎপাদন খাতে। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের অভাবে বড় কোনো কর্মসংস্থান হয়নি।

ফলে ভোক্তাপর্যায়ে চাহিদা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। এছাড়া রেমিট্যান্সও আগের তুলনায় পড়তির দিকে। এটাও ভোক্তাচাহিদা বৃদ্ধিতে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারেনি। এসব কারণে চাহিদা কম হতে পারে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৪:৫২   ৩৯৭ বার পঠিত