বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫
আধিপত্য আ.লীগের, নিশ্চুপ বিএনপি
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আধিপত্য আ.লীগের, নিশ্চুপ বিএনপিবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারই প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দফতরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে সারাদেশ। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য বিরাজমান প্রায় প্রতিটি পৌরসভায়। পক্ষান্তরে অনেকটা নিশ্চুপ থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ ২৩৪টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর।
তফসিল ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচার বা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
সিইসি আরো জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি আগের থেকে আরো সহজ করা হয়েছে, ‘আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু এবার মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। তবে কেউ আগে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর লাগবে না। কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় হওয়ার সেখানে আগের মতোই নির্বাচন হবে। কাউন্সিলরদের কোনো ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে না।’
ইসি সূত্রমতে, বিধিমালার ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকার মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করলে, উক্ত রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে তিনি নিজে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বা তার আগে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন এবং সে ক্ষেত্রে উক্ত দলের মেয়র পদে অন্যান্য মনোনীত প্রার্থী আর প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না। প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর কোনো অবস্থায় তা প্রত্যাহারের বা বাতিল করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিইসি জানান, ‘রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত প্রত্যায়ন থাকতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক দল মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র প্রদান করতে পারবে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবে এবং তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করতে হবে।’
পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি পৌরসভায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। প্রার্থীদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগের বিধানেই বহাল থাকবে। পৌরসভায় এক লাখের উপর ভোটার হলে প্রার্থীরা ৫০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার ভোটার হলে ২০ হাজার টাকা এবং ২৫ ভোটার হলে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবে। নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিকদল বিধি ভঙ্গ করলে তার জন্য অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা দণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে।
একক আধিপত্য আওয়ামী লীগের: পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগেভাগেই মাঠে সক্রিয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রায় প্রতিটি পৌরসভায় মেয়র পদে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলটির একাধিক প্রার্থী। সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ও তাঁদের সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। প্রতিটি পৌরসভায় শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন।
এরই মধ্যে গত গত ১৯ নভেম্বর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে পৌরসভা (সংশোধন) আইন ২০১৫ বিল পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি দিলে গত শনিবার পৌরসভা (সংশোধন) আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সরকারে এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর পাল্টে গেছে পৌরসভা নির্বাচনের দৃশ্যপট। সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন। দিন-রাত ছুটছেন দলীয় সিনিয়র নেতাদের বাসা-অফিসে। বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসা অফিস এখন অনেকটা নির্বাচনী অফিসে রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের মর্জিতেই নির্ভর করছে ওই এলাকার পৌরপিতা হওয়ার টিকিট। অনেক স্থানে আবার একক মনোনয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দলটির নেতারা। একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে দেশের প্রাচীন এ দলটির জন্য।
আওয়ামী লীগ সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা স্থানীয় নির্বাচন জোটগতভাবে করার ইচ্ছাপোষন করলেও আওয়ামী লীগ তাতে সাড়া দিচ্ছে না। শরিক দল নয়, নিজদলীয় একাধিক প্রার্থী নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। পৌরসভা নির্বাচনে কীভাবে একক প্রার্থী নির্বাচন করা হবে তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছে দলটি। নতুন করে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে হাইকমান্ড কাজ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, পৌরসভায় কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন হুশিয়ারি থাকলেও কতটা কার্যকর হবে, বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় তা অনুমেয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনের রূপরেখা এখনও ঠিক হয়নি। আ.লীগে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নিশ্চুপ বিএনপি: পৌরসভা নির্বাচনে এখনো নিশ্চুপ বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের এখনও তেমন কোনো প্রচার লক্ষ্য করা যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন। তবে প্রায় পৌরসভায় আ.লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির একক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভোটের ফলাফলে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে উঠে আসতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা না থাকা, গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির কারণে পালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন না। তবে প্রতিটি পৌরসভায়ই বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তফসিল ঘোষণা হয়েছে, এখন দলীয় সিদ্ধান্ত আসলেই বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
সম্প্রতি পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোলের সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। খুব সম্ভবত আমরা নির্বাচনে যাব। শিগগিরই দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৪:১৭ ২৩৭ বার পঠিত