বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫
পাখিরা আসছে…….
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » পাখিরা আসছে…….বিশেষ প্রতিনিধিঃলাল শাপলা শোভিত প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে শীতের অতিথি পাখি। দীর্ঘ এক বছর পর আবারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ের লেকগুলো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস প্রকৃতি। একদিকে লাল শাপলা অন্যদিকে অতিথি পাখি। ওড়াউড়ি, সাঁতার কাটা, ডানা ঝাপটে বেড়ানো, রোদে বসে শরীর শুকানো যেন শেষ হয় না। লাল শাপলা ফোটা জলাশয়গুলোতে পাখিদের দল বেঁধে ওড়াউড়ির নজরকাড়া দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে এসব অতিথি পাখি এখানে নির্ভাবনায় সারাক্ষণ মেতে থাকছে কলকাকলি ও জলকেলিতে। কেউবা আবার ডুব সাঁতারে ব্যস্ত। আবার কখনওবা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে লেকের পানিতে ডুব দিয়ে খাবার জোগাড় করতে। তাছাড়া লেকের কোথাও তারা জুটিবদ্ধভাবে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে নিজেদের সুখ-দুঃখ। উঁচু-নিচু লাল মাটির ঢিবি আর বৃক্ষশোভিত ক্যাম্পাসে জলাশয়ের পরিমাণ অনেক হলেও পাখিরা ক্যাম্পাসের হাতেগোনা মাত্র দু-তিনটি জলাশয়ে তাদের আবাস গড়ে তোলে।বর্তমানে যে পাখিগুলো এসেছে এর মধ্যে দেশীয় জাতের সড়ালি পাখিই বেশি। চরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়ায় তারা বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি স্থানে আবাস গড়েছে। শীত আরো একটু বাড়লে সাইবেরিয়া, চীন, হিমালয়ের এলাকাগুলো থেকে পাখি আসবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণত যে লেকগুলোতে পাখি আসে তার মধ্যে এ বছর প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হলসংলগ্ন দুটি লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ওয়াইলড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডাব্লিউ আরসি) এ অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি। পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মূলত ১৯৮৬ সাল থেকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। যে সব অতিথি পাখি জাহাঙ্গীরনগরে আসে তার মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মানিক জোড়া, ডেঙ্গা, চামটঠুঁটি, চিত্তা, খঞ্জনা, নাকতা, কোম্বডাক ও পাতারি হাঁস অন্যতম ।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকেই জাবিতে আগমন ঘটে অতিথি পাখিদের। তবে এবার দেরিতে শীত শুরু হওয়ায় ওদের আগমনে বিলম্ব ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষঞ্জ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ। পাখিদের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরই পাখি মেলা আয়োজন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদা বেগম জানান, আগামী জানুয়ারির শেষের দিকে পাখি মেলা আয়োজনের চিন্তা রয়েছে।
এদিকে লেকগুলো পরিষ্কারে ক্রমাগত অবহেলা প্রদর্শন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর ক্ষুদ্ধ প্রকৃতি প্রেমী শিক্ষার্থীরা। লেক পরিষ্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, যে লেকগুলো ইজারা দেয়া রয়েছে সেগুলো পরিষ্কারের ব্যাপারে একটি কমিটি করা হয়েছে। এর বাইরে যে লেকগুলো রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার শুরু করা হয়েছে। অতিথি পাখির জন্য লেকগুলোকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাখি বসার জন্য লেকগুলোয় মাছ চাষ বন্ধ করে শাপলা ফুল বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখির নিরাপত্তার জন্য লেকের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পাখি প্রেমিকদের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট ও লেকের পাশে ব্যানার মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন লেকে ১৮৬ প্রজাতির স্থানীয় এবং পরিযায়ী পাখি বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করে। এছাড়া ১৯৯২, ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ২৫ হাজার পাখি এসেছিল। এরমধ্যে ১৯৯০ সালে ৭৮ প্রজাতির, ২০০৭ সালে ১৬৩ প্রজাতির, ২০০৮ সালে ১৪৪ প্রজাতির, ২০০৯ সালে ১৮০ প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসে এসেছিল।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬:১৮ ৪১২ বার পঠিত