বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

এখন ডেঙ্গু ঠেকাবে পেঁপে পাতা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » এখন ডেঙ্গু ঠেকাবে পেঁপে পাতা
বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫



t-saha.jpgবিশেষ প্রতিবেদকঃএক নতুন রস এসেছে কলকাতায়৷ এই নব রসের উত্স পেঁপে পাতা৷
৮ ঘণ্টা অন্তর ১০ মিলিলিটার করে পেঁপে পাতার রস৷ ডেঙ্গু ঠেকাতে এটাই নাকি মোক্ষম দাওয়াই৷
এমনটাই দাবি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার চিকিত্সক সনত্‍ হেটিজ৷ সেই টোটকাই এখন ডেঙ্গুর মারণ ইনিংস সামলানোর প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে৷ দিল্লি ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে৷ এবার কলকাতাও পেঁপে পাতার রসে ডেঙ্গু বশে আনার চেষ্টা শুরু করল৷
এদিকে, হঠাত্‍ করেই বেড়ে গিয়েছে পেঁপে পাতার চাহিদা৷ গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, যাদবপুর, বাঘাযতীন বাজারে লোকে হন্যে হয়ে পেঁপে পাতা খুঁজছেন৷ হবে না কেন? ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছ হাজার ছাড়িয়েছে৷ মৃত্যু হয়েছে দশজনের৷ নভেম্বর শেষেও ডেঙ্গু-আতঙ্ক ডালপালা ছড়াচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে চাষিদের কেউ অগ্রিম দিয়ে পেঁপে পাতা আনাচ্ছেন৷ অনেকেরই দাবি, পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু সারাতে ধন্বন্তরির কাজ করছে৷ দ্রূত প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিচেছ৷
চিকিত্সকরা অবশ্য খোলা মনে ডাক্তার হেটিজের টোটকাকে মানতে পারছেন না৷ তাঁরা সেই উপসর্গভিত্তিক চিকিত্সার উপরই আস্থা রাখছেন৷ সবথেকে বিপাকে পড়েছে শহরের আয়ুর্বেদ হাসপাতালগুলি৷ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা আয়ুর্বেদ হাসপাতালে ভিড় করছেন৷ পেঁপে পাতার রসের গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন করছেন৷ এখানেই সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ আসলে, আয়ুর্বেদশাস্ত্রে ডেঙ্গু-জ্বরের কোনও উল্লেখ নেই৷ রাজাবাজারের শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের চিকিত্সক ডা. প্রদ্যোত্বিকাশ করমহাপাত্র জানিয়েছেন, আয়ুর্বেদে পেঁপে, পেঁপের পাতা, বীজ, তরুক্ষীর ব্যবহার হয়৷ কিন্তু ডেঙ্গু-নাশক হিসাবে আয়ুর্বেদে এর কোনও ব্যবহার নেই৷ তবে, ‘হেপটো-স্টিমুল্যাণ্ট’ বা যকৃত্-উত্তেজক, রক্তশোধক, রক্ত-পিত্তনাশক হিসাবে পেঁপে পাতার ব্যবহার হয়৷ তাছাড়া, ‘রেটিকিউলো এন্ডোথ্যালিয়াস সিস্টেম’ বা রক্ত উত্পাদনকারী অঙ্গ বা তন্ত্রকে প্রভাবিত করে রক্তস্তম্ভনে সাহায্য করে৷ সুতরাং ডেঙ্গুতে ভাল ফল মিলতেই পারে৷ তবে ‘প্রেসক্রাইব’ করার আগে আরও গবেষণা দরকার৷ শ্যামবাজারের জে বি রায় আয়ুর্বেদ কলেজের চিকিত্সক ডা. শ্রীকান্ত পণ্ডিতও এক মত৷ তিনি বলেন, “অনেক বহুজাতিক সংস্থা এখন পেঁপের রস ব্যবহার করে সিরাপ তৈরি করছে৷ এটুকু বলতে পারি থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া উপসর্গে প্লেটলেট বাড়াতে এই সিরাপ ভাল কাজ করছে৷ কিন্তু, পেঁপে পাতার রস সরাসরি কতটা কাজ করছে তা বলা মুশকিল৷” আয়ুর্বেদ চিকিত্সকদের মত, সরকারি নির্দেশিকা না এলে ডেঙ্গুর মতো মারণ রোগে ‘নতুন’ ওষুধ লেখা বিপজ্জনক৷ তবে, কেউ খেতে চাইলে বারণ করা হচেছ না৷ কাজ না হলেও সেই অর্থে কোনও ‘ক্ষতি’ নেই৷ জানা গিয়েছে, লালচে রঙের এক ধরনের পেঁপে গাছ রয়েছে৷ তার পাতাই সবথেকে বেশি কার্যকর৷ তবে, গাছটি কুমারী হলে চলবে না৷ ফলবতী হতে হবে৷
ডা. হেটিজ অবশ্য পেঁপে পাতার সপক্ষে অনেক যুক্তি দিয়েছেন৷ জানিয়েছেন, পেঁপে পাতার রসে কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপাইন নামে দু’রকম উত্সচেক রয়েছে৷ যা রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা ও রক্ততঞ্চন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে৷ তাছাড়া এই উত্সেচকগুলি লিভারের ক্ষতকে সারিয়ে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷ বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ ফলে, ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়৷ হেটিজের মত, প্রথমে জলে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে পেঁপে পাতা৷ খুব পুরনো ও কচি পাতা ব্যবহার করা যাবে না৷ পাতাগুলি কাঠের মুগুর জাতীয় কিছুর সাহায্যে থেঁতো করে ১০ মিলি রস খেতে হবে৷ ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ডোজ অবশ্য অর্ধেক, অর্থাত্‍ দিনে দু’বার ৫ মিলি করে দিতে হবে৷ দিল্লিতে পেঁপে পাতার জন্য রীতিমতো মারামারি শুরু হয়েছে৷

বাংলাদেশ সময়: ৯:২৬:৪০   ৪২৮ বার পঠিত