শুক্রবার, ২০ নভেম্বর ২০১৫
টাকার মান কমছে প্রতিনিয়ত
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » টাকার মান কমছে প্রতিনিয়তবঙ্গনিউজ ডটকমঃ এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ দর হারিয়েছে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকা। তবে এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন গবেষকরা। টাকার মান কমার এই প্রবণতা রেমিট্যান্স ও রফতানি বাণিজ্যের জন্য ভালো বলে বলছেন তাঁরা।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক মার্কিন ডলারের জন্য ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়। গত বুধবার সেই এক ডলারের জন্য ৭৮ টাকা ৭৭ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। অর্থাৎ, এই এক মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার দর প্রায় এক টাকা কমেছে।
ভারতের মুদ্রা রুপি, চীনের ইউয়ান, রাশিয়ার রুবল ও ইউরো জোনের ইউরোর যখন বড় দরপতন হয়, তখন টাকার মান ‘স্থিতিশীল’ ছিল, কোনো ‘নড়াচড়া’ করেনি। এখন ওইসব মুদ্রার মান ‘স্থিতিশীল’ হলেও ডলারের বিপরীতে ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে টাকা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এখন প্রতিদিনই প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৭ থেকে ১০ পয়সা করে কমছে। কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলারের দর ৮২ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সোমবার ৭৯ টাকা ২০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। বিদেশি ব্যাংক এইচএসবিসি বিক্রি করেছে আরও বেশি দরে- ৮০ টাকা ৮৫ পয়সায়। ৯ মাস প্রতি ডলার ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির থাকার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে একটু ‘নড়াচড়া’ শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান ‘এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই’ উল্লেখ করে বলেন, ‘বাজারে ডলারের কোনো ঘাটতি নেই। সোমবারও আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৭৫ থেকে ৭৬ মিলিয়ন ডলার ট্রেড হয়েছে। ভারত, চীন, রাশিয়া ও ইউরো জোনের মুদ্রার যখন দরপতন হচ্ছিল, তখন কিন্তু টাকা শক্তিশালী ছিল। এখন ডলারের চাহিদা বাড়ায় কিছুটা দুর্বল হচ্ছে।’ তবে টাকার মান কমার এই প্রবণতাকে রেমিট্যান্স ও রফতানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক মনে করেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
ডলারের চাহিদা কেন বাড়ছে- এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এই গবেষক বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে খরচ কমলেও সরকারের বড় বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির খরচ বাড়ছে। এছাড়া অন্যান্য দেশের মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ায় রফতানি আয়ও কম আসছে। রেমিট্যান্স প্রবাহেও ধীরগতি। সবকিছু মিলিয়েই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।’ তবে এতে উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছেন না জায়েদ বখত।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ‘২০১২ সালে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে এক ডলার কিনতে ৮৫ টাকা লাগত। তিন বছরে সেই ডলারের দর পড়তে পড়তে গত বছরের আগস্টে ৭৭ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে এসেছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ডলার ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির ছিল।’
বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদরা রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন সময় টাকার মান কমানোর পরামর্শ দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাড়া দেয়নি। এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এক মাসেরও বেশি সময় বাজার থেকে কোনো ডলার কেনেনি তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:১১ ৩২৯ বার পঠিত