বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

আইএসবিরোধী মহাজোট চায় ফ্রান্স

Home Page » বিশ্ব » আইএসবিরোধী মহাজোট চায় ফ্রান্স
বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫



এখনো থামেনি ফরাসিদের চোখের জল। হামলার একটি স্থলে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় গতকাল দুই তরুণী l ছবি: রয়টার্সবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) বিনাশ করার জোরালো প্রত্যয় জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈশ্বিক মহাজোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। একই কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। এ ক্ষেত্রে ফরাসি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে নিজেদের নৌবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া। আর এ লড়াইয়ে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
এদিকে প্যারিসের হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি দেশ। অভিযান জোরদার করতে ১ লাখ ১৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। তাদের নিরাপত্তা বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়েছে ১২৮টি স্থানে। বেলজিয়াম তাদের সেনাবাহিনী নামিয়েছে টহলে। হামলায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জার্মানিতে।
এ ছাড়া সিরিয়ায় আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ গতকাল বলেছেন, তাঁর দেশের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি চার্লস দ্য গল মোতায়েন করা হবে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
প্যারিসের ছয়টি স্থানে গত শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ১৩২ জন। আহত হয় ৪০০-এর বেশি মানুষ। হামলাকারীদের মধ্যে সাতজন নিহত হয় ঘটনাস্থলে। তবে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে ধারণা করছে ফ্রান্সের পুলিশ। এদিকে মার্কিন কংগ্রেসম্যান মাইকেল ম্যাককাউল গতকাল বলেছেন, অন্তত ২০ জন জঙ্গি প্যারিস হামলায় অংশ নিয়ে থাকতে পারে।
মহাজোট গঠনের ডাক: আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, প্যারিস হামলার প্রেক্ষাপটে আইএসকে নিশ্চিহ্ন করতে একটি বৈশ্বিক মহাজোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ। নিজ দেশের পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘একটি ফল পাওয়ার জন্য “আমাদের বাহিনীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে” মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করব।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন ও মস্কো সফরে যাবেন। জঙ্গিবিরোধী কৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এ সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান অ্যাশটন কার্টার ওয়াশিংটনে একটি ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেছেন, সন্ত্রাসীদের আঘাত করতে আমেরিকা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের পরাজিত করার মতো বৃহত্তর পদক্ষেপ নিতে ইউরোপীয় মিত্রদের পাশে পাওয়া দরকার।
আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতা করতে ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিজ দেশের নৌবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে সোমবার প্যারিসে গিয়ে গতকাল প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। পরে তিনি বলেন, প্যারিস হামলার পর এখন সবাই এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে যে ‘তাদের (জঙ্গিদের) মূলে আঘাত হানতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে’ এবং সীমান্তে নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাতে হবে।
ইইউর সর্বসম্মত সমর্থন: আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সামরিক সহায়তা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ফ্রান্স। সেই আহ্বানে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন জানিয়েছে ইইউ। গতকাল বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ফেডারিক মোঘারিনি ওই সমর্থনের কথা জানান।
অভিযান চলছে: জঙ্গিদের খোঁজে সোমবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২৮টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারনার্দ ক্যাজেনভ। তবে এসব অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তা বলেননি তিনি। এর আগের দিন ১৬৮টি স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার ও ১০৪ জনকে গৃহবন্দী করা হয়।
ফরাসি গণমাধ্যম জানিয়েছে, অভিযানকালে পুলিশ প্যারিসের উপকণ্ঠ ববিনি এলাকায় হামলাকারীদের ‘সেফ হাউস’ খুঁজে পেয়েছে। নিহত হামলাকারীদের একজন ব্রাহিম আবদেসালেম সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরেক উপকণ্ঠ আলফরভিল এলাকার একটি বাড়িও হামলাকারীরা ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে একটি গাড়ি পাওয়া গেছে, যেটির বিষয়ে তদন্ত চলছে।
অভিযান আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেন, শুক্রবারের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ফরাসি নাগরিকদের সুরক্ষায় পুলিশ ও সেনাসদস্যসহ ১ লাখ ১৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সোমবারের মতো গতকালও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের মোলেনবিক এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সন্দেহভাজন হামলাকারীদের অন্যতম সালেহ আবদেসালেমকে ধরতে এ অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তায় টহল দিতে সেনাবাহিনী নামিয়েছে বেলজিয়াম।
অবশ্য গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সালেহকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। এমন প্রেক্ষাপটে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
একই দিন বেলজিয়াম সীমান্তে অবস্থিত জার্মানির আচেন শহরে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় প্যারিস হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জার্মান গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।
ব্রিটিশ পুলিশও প্যারিস হামলার প্রেক্ষাপটে বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। গতকাল তারা রেলপথ ও আকাশপথে প্যারিস থেকে যুক্তরাজ্যে আসা যাত্রীদের কাছে গিয়ে ওই হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের খুঁজেছে। উদ্দেশ্য, শুক্রবারের হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ, ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করা।
সিরিয়ায় বিমান হামলা: গতকালও সিরিয়ায় আইএসের বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা ফেলেছে ফ্রান্সের যুদ্ধবিমান। জঙ্গিগোষ্ঠীটির রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত রাকা শহরে এসব বিমান হামলায় তাদের একটি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ও একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরাসি সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৮:২১   ৩১৭ বার পঠিত