শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৫
রাজীবের শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রাজীবের শূন্যতা পূরণ হবার নয়।বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
নেছার এ নিশানঃ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ওয়াসিমুল বারী রাজীব বাংলাদেশী সিনেমাজগতের শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। রাজীব নামেই তিনি বাংলাসিনেমার দর্শকদের কাছে পরিচিত। তার অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল নায়ক চরিত্র দিয়ে। নায়ক হিসেবে খুব বেশী জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা তিনি পাননি। তবে খলনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। রাজীব অভিনীত সিনেমা প্রায় দুই শতাধিক। বাংলাদেশের সিনেমাজগত প্রথমদিকে ভালো-মন্দের দ্বৈরথ থেকে অনেকখানি মুক্ত ছিল। ১৯৭৩ সালে প্রয়াত পরিচালক জহিরুল হক নির্মাণ করেন ‘রংবাজ’, যেখানে বাংলা সিনেমায় প্রথম অ্যাকশন দৃশ্য ছিল। সে কারণেই সিনেমাটি ইতিহাসে ঠাই পায় এবং এর মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় নতুন একটি ধারার শুরু হয়। নায়ক বনাম খলনায়কের দ্বন্দ্ব, শেষের দিকে এসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অশুভ শক্তির পরাজয়। মূলত, এই সিনেমার মাধ্যমেই খলনায়ক বা ভিলেনের মতো শক্তিশালী একটি পক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাজীব অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম-’খোকনসোনা’, পরিচালক কাজী হায়াত। অভিনয় দক্ষতা, ঝাঁঝালো অথচ ভরাট কণ্ঠস্বর তাকে দিয়েছিল অনন্যতা। অন্যান্য খলনায়কদের চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন চোখের ব্যবহার দিয়ে। ভয়ানক চোখ বলতে যা বোঝায়, তিনি খলনায়ক চরিত্রে সেটার ব্যবহার করে হয়েছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। খলনায়ক হিসেবে দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছিলেন, পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হিসেবে। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দাঙ্গা’ ও ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চাঁদাবাজ’ সিনেমায় অভিনয়ের স্বীকৃতি সরূপ তিনি এই দুটো পুরস্কার পেয়েছিলেন। দুটো সিনেমার’ই পরিচালক ছিলেন, তার গুরু কাজী হায়াত।
দাঙ্গা সিনেমার খলনায়ক ছিলেন মিজু আহমেদ, রাজীব সেখানে অভিনয় করেছিলেন ভাড়াটে খুনি কালু চরিত্রে। কালু চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় আজো দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। যার কারণে খলনায়ক মিজু আহমেদকে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিংবা ভণ্ড (১৯৯৮) সিনেমায় তার দুর্দান্ত অভিনয়, রাজা শিকদারের রাজীব চৌধুরী হয়ে শহরের সবচেয়ে ধনী হয়ে যাওয়া।
আরেক শক্তিমান অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদির সাথে তার রসায়নটা ছিল, বেশ চমৎকার। ভণ্ড, জিদ, প্রেম দিওয়ানা ইত্যাদি সিনেমাগুলো তার প্রমাণ। খলনায়ক হিসেবে তিনি অভিনয় করেছিলেন- বিক্ষোভ, মীরজাফর, দেশদ্রোহী, ক্ষমা, জবরদখল, লুটতরাজ, মৃত্যুদণ্ড, মগের মুল্লুক, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, ত্রাস, উছিলা, মিয়া ভাইয়ের মতো অনেকগুলো সিনেমায়। বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন ভিন্নস্বাদের সিনেমায়। হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), ভাত দে (১৯৮৪) ইত্যাদি সিনেমাগুলো সে সাক্ষ্য দেয়।
বিএফডিসির ব্যাবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন রাজিব। পটুয়াখালীর দুমকি তার গ্রাম। জন্মেছিলেন ১ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে। রাজনীতি করতেন, রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কিছু শুন্যতা পূরণ হয়না, রাজীবের শুন্যতাও বাংলাদেশের সিনেমাজগতে পূরণ হবেনা। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৩:৫২ ৩০৬ বার পঠিত