বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫
সরকারের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে দুই কোটি টাকা
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » সরকারের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে দুই কোটি টাকাবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট গত ২৪ আগস্ট দেড় সেন্ট থেকে বৃদ্ধি করে দুই সেন্ট করা হয়। এ কারণে বৈধ পথে আন্তর্জাতিক কল-সংখ্যা গত দুই মাসে তিন কোটি মিনিটের বেশি কমে গেছে। অন্যদিকে কলরেটের বাড়তি আয়ের ভাগাভাগি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকারের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে দুই কোটি টাকা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ আগস্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে বৈধ পথে দৈনিক গড়ে কল এসেছে সাড়ে সাত কোটি মিনিট। এর আগে গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বৈধ কলের সংখ্যা ছিল দৈনিক প্রায় সাড়ে ১০ কোটি মিনিট। আর চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে এ সংখ্যা ছিল প্রতিদিন গড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট।
মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কলরেটের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোররেট) তিন সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়। ওই সময় সর্বনিম্ন রেট, অর্থাৎ দেড় সেন্টেই রাজস্ব ভাগাভাগির নিয়ম রেখে আন্তর্জাতিক কল আনার নতুন পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজস্ব ভাগাভাগির এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কয়েক দফায় চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর প্রায় দেড় মাস চলে গেলেও নতুন কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি সরকার।
কল টার্মিনেশন রেট যখন তিন সেন্ট ছিল, তখন কলরেট বাড়ানোর সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ছিল সাড়ে তিন সেন্ট। কিন্তু কলরেট কমিয়ে দেড় সেন্ট করার সময় আর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা দুই সেন্ট নির্ধারণে বিটিআরসির একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। মূলত কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে না দেওয়ার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে।
বাড়তি আয়ের ভাগ না পাওয়া এবং বিপুল পরিমাণ কল অবৈধ ভিওআইপি হয়ে যাওয়ায় সরকারের প্রতিদিনের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে দুই কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিনই এ ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। একইভাবে মোবাইল অপারেটররাও প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি আয়ের ভাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজস্ব ভাগাভাগির বিষয়টি সমাধানে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রস্তাবনায় আয়ের ভাগাভাগির বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইজিডব্লিউ, মোবাইল অপারেটর, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জসহ (আইসিএক্স) রাজস্ব ভাগাভাগি-সংক্রান্ত অন্যান্য নীতিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো পরিবর্তনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের স্বার্থ যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এসব দিক বিবেচনা করে নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলেই সরকারের এখন যা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আদায় করা যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত আছে।
মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বেড়ে যাওয়ার পর থেকে কয়েক মাস ধরে বৈধ পথে কল আসা অনবরত কমছে, এ কলগুলো এখন অন্য চ্যানেল দিয়ে আসছে। এর ফলে মোবাইল অপারেটরদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ বিষয়টি জানিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব থেকে সরকারকে একাধিক চিঠি দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন গ্রামীণফোনের এই কর্মকর্তা
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৯:২৪ ৪০৭ বার পঠিত