মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫

আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ জয়

Home Page » ক্রিকেট » আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ জয়
মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫



ccccccccc.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ফ্লাডলাইটের আলোয় ভেসে যাচ্ছে স্টেডিয়াম। তার মধ্যেই আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যখন সার বেঁধে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, তাঁদের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াগুলোও হাঁটছে পেছন পেছন। এই ছায়ারা কখনো সামনে এসে দাঁড়াতে পারে না। কে যেন একবার লিখেছিলেন, নিজের ছায়ার কাছেও কখনো পরাজিত হতে নেই!
তা মাশরাফির বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে মনে হতেই পারে, ছায়া মাড়িয়ে তাদের কায়াগুলো আরও দীর্ঘ হয়ে উঠবে। তবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে যেভাবে তাঁরা খেললেন, মাঝেমধ্যেই ঘনিয়ে উঠছিল ছায়া। এবং সেগুলো নিজেদেরই ডেকে আনা। সেই ঘনায়মান ছায়া যে একেবারে জাপটে ধরেনি, সে প্রতিপক্ষ দলের ‘কৃতিত্ব’। সাফল্যে তো বটেই, সামর্থ্যেও যেন টেস্ট পরিবারের নবম সদস্যদেশটি ক্রিকেট-বামনে পরিণত হয়েছে!
প্রথমত বলা যাক ব্যাটিংয়ের কথাই। একটু পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করলে এই ম্যাচটি জিম্বাবুয়ের বের করে নেওয়ার কথা। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৯০ রান তুলতে হবে ৯৬ বল থেকে, উইকেটে ৭৩ রানের জুটিতে মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসেছেন দলের এই মুহূর্তে সেরা দুই ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা ও এলটন চিগুম্বুরা। সেখান থেকে এই দুজনেরই অবিমৃশ্যকারিতায় হেরে গেল জিম্বাবুয়ে।
তা জিম্বাবুয়ে হারায় ক্রিকেটেই জীবনের মহত্তম আনন্দ খুঁজে পাওয়া বাংলাদেশের মানুষ খুশি। দেশের মাটিতে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতল মাশরাফির দল। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই গত বছরের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল যে বিজয়ধারা, পরের নভেম্বরে তাদের হারিয়েই যেন বৃত্তপূরণ। মাঝখানে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসেছে আলোর ঝরনায় ভাসা বিজয়ের উৎসব।বলা হচ্ছিল ওই ছায়ার কথা। বাংলাদেশ কাল ঘনিয়ে ওঠা ছায়ার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার জোগাড় করে ফেলেছিল। সেটি মূলত ব্যাটিংয়েই। টসে হেরে ব্যাট পেয়েছিলেন মাশরাফিরা। ইদানীং বাংলাদেশের জন্য যেটি জয়ের চিত্রনাট্যেরই অংশ। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করতেই ভালোবাসে। তবে এদিন রান হলো ২৪১, যা মোটেই গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো স্কোর নয়। ব্যাটিংটা হলো গতিজড়তার আবহে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই, একজন থিতু হয়ে গেলে ইনিংসটা বড় করতে চাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নেই। জুটি গড়ে প্রতিপক্ষকে বিশাল রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নেই। যেন গয়ংগচ্ছ ব্যাপার।
সাকিব আল হাসানের বদলি ঢোকা ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকে এল সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস। ১০ ম্যাচ পর দলে ঢুকে যেভাবে খেলছিলেন তিনি, দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি না করে ফেরার কোনো কারণই ছিল না। এক বল আগেই হাঁকিয়েছেন চতুর্থ ছক্কাটি, আবার শন উইলিয়ামসের ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন লং অনে। ইমরুলের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহিমের ৪৮ রানই সর্বোচ্চ জুটি। শেষ দিকে ৪১ রান করলেন নাসির। সত্যি করে বললে, সাব্বির রহমানের ৩৩ রানের ইনিংসটির মধ্যেই পরিকল্পিত কিছু ছিল। বিশ্বকাপের নায়ক মাহমুদউল্লাহ আবার নিজেকে ফিরে পেতে যেন সংগ্রাম করছেন। লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের বলে উইকেট দিয়ে ফেরার ধরনটাই বলল, কোথায় যেন তিনি হারিয়ে যাচ্ছেন। তামিম ইকবাল বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। তাঁর কথা ধার করেই বলা যাক, সঠিকভাবে খেলার আকাঙ্ক্ষাটা আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সংক্ষিপ্তসার এটাই। ২৪১ নিয়ে ঝুঁকি ছিল, ঝুঁকিটা দলের সেরা বোলার সাকিব আল হাসান হঠাৎ করেই দলছুট হয়ে পড়ায়।
সাকিবহীন দলের ৫০ ওভার বোলিংয়ের সমন্বয়টা কী হবে, তা নিয়ে নিশ্চয়ই মাশরাফিদের বিস্তর ভাবতে হয়েছে। মন্থর উইকেটে সাকিব ছাড়া বোলিং নিয়ে ম্যাচ জিততে গেলে বুকে একটু কাঁপুনি ওঠেই, সে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেই বা কী! শেষ পর্যন্ত দুশ্চিন্তা ঘুচিয়ে দিলেন আল আমিন হোসেন। বিশ্বকাপ থেকে উপেক্ষার যে যন্ত্রণায় নীল হয়ে আছেন এই পেসার, সেটির একটু জবাবও দিতে পারলেন। ম্যাচটি আল আমিনের কল্যাণেই ঘুরেছে নিজেদের দিকে। ৫ রানের ব্যবধানে পরপর দুই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা রাজা ও চিগুম্বুরাকে। তাতেই সিরিজটা ২-০ হওয়ার ঔজ্জ্বল্যে উঠল জ্বলে। শেষ কাজটা করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আগের ম্যাচে উইকেটশূন্য বাংলাদেশের বালকবীরের হাত থেকে বেরোল সেই কাটার। এক ওভারেই তুলে নিলেন জঙ্গুয়ে ও পানিয়াঙ্গারাকে, জিম্বাবুয়ে হলো ৯ উইকেটে ১৮১। নাসির ওদের মুড়ে দিলেন ১৮৩ রানেই।
নাসিরের বলে ক্রেমারকে যেন ‘অনন্ত অপেক্ষায়’ রেখে স্টাম্পড করলেন মুশফিক। দৃশ্যটা প্রতীকী। এই জিম্বাবুয়েকে এখন চুড়ো থেকে গভীর খাদের মধ্যেই দেখে বাংলাদেশ। আর আসল কথাটা হলো, বিজয়রথে চলা মাশরাফির দল নিজেদের ছায়ার কাছেও পরাজিত হতে রাজি নয়!

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪১/৯
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.২ ওভারে ১৮৩
ফল: বাংলাদেশ ৫৮ রানে জয়ী
৫/৫
বাংলাদেশের টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জয়
১ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫-০ নভে.-ডিসে. ২০১৪
২ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ এপ্রিল ২০১৫
৩ ভারতের বিপক্ষে ২-১ জুন ২০১৫
৪ দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ জুলাই ২০১৫
৫ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-০ নভেম্বর ২০১৫*

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩১:০৩   ৩৪৫ বার পঠিত