বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০১৩

আত্মকথন-১- যাকিয়া মুসান্না মুন্নী

Home Page » বিবিধ » আত্মকথন-১- যাকিয়া মুসান্না মুন্নী
বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০১৩



munni2.jpgআত্মকথন!·এইখানে ভোর হয় খুব সকালে! আমার জন্য এটা অনেক সকালই। গভীর রাতে ঘুমুতে যাই… ঘুমুতে যাবার আগে কখনো সখনো কোন নিশিতে পাওয়া পাখির ডানা ঝাপ্টানো শুনি অথবা ভোর হয়েছে ভেবে ভুল করে পাখির ডাকাডাকিও শুনি। নাইটগার্ডের হুইসেলের শব্দও কমে আসে অগভীর ঝিমুনিতে। আকাশ কৃষ্ণবর্ণ থেকে পরিষ্কার হতে শুরু করে। আর আমি প্রচন্ড একাকীত্ব আর অস্তিরতার কাছে কিছুটা সময় ভিক্ষা চেয়ে নেই। আকুল হয়ে বলি “আমি একটু ঘুমুতে চাই”তাই যখন সকাল হয় তখন আমার চোখ দুটি বসে যাওয়া কোন খোয়ার মতো লাগে,ঈষৎ লালচে। অসম্ভব জ্বলতে থাকে চোখ। দিনের আলো কড়কড় করে লাগে চোখে। বোধহয় বাদুড় হয়ে যাচ্ছি... বাদুড় যেমণ দিনের আলো সইতে পারে না আমিও পারিনা। কিন্তু মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকাতে কষ্ট হলেও বিরস মুখে আমাকে দিনের আলো সইতে হয়। সামাজিক কারণে মুখ ভোঁতা করে হলেও মুখে কাষ্ঠ হাসি দিতে হয়! আমি জানি এ হাসিতে প্রাণ নেই। এরপরেও হাসি, খেলি, আর প্রচন্ড রকম অরুচি নিয়ে খাই। মানবজীবনের যাবতীয় আয়োজন মিটাই। একলা শূন্যপ্রাণে…অস্থিরতা কাটাতে নভেল পড়ি। অস্থিরতা কাটে না। একটার পর একটা নভেল শেষ হয়, পড়তে পড়তে কখনো হাসি, কখনো অল্পতেই চোখে জল চলে আসে। আহা, আমি বড় আবেগী!শূন্যদৃষ্টিতে মহাশূন্যের দিকে তাকাই। আবারো চোখ কড়কড় করে ওঠে, এই পোড়া চোখে একদমই আলো সহ্য হয়না… ঘন করে পর্দা টেনে দেই রুমে। দরজা ভিজিয়ে ঘর কবরের মত অন্ধকার করে বসে থাকি… ভালোই লাগে তখন! অন্ধকার আমার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে… এই অন্ধকারে আমি তোমাকে স্পষ্ট করে দেখতে পাই!!! অনুভব করতে পারি! উচ্ছাসে কেঁপে ওঠা অধরে তোমার সাথে কথাও বলতে পারি… তোমার আমার গল্প হয় অনেক! কখনো সখনো রাজনৈতিক আলাপটাও সেড়ে নেই, যদিও তেমন কিছুই বুঝি না তবু বেজায় ভাব নিয়ে সরকার আর বিরোধীদলের ঘুষ্ঠি উদ্ধার করি!

এইভাবে এমন করেই কেটে যায় সময়, একাকীত্বের আঁধারে ডুবে যেতে যেতে কখনো মুখর হয়ে উঠি। সেকেন্ডের কাটা খুউব কৃপণতা করে আগায়; এরপরেও যখন দেখি অনেকটা কাল পেড়িয়ে গেছে তখন অবাক লাগে ভীষণ! এতটা কাল আমি তুমিহীন কি করে আছি? আমি প্রতিটি সেকেন্ডের হিসেব জানি; প্রতিটিক্ষণের প্রতিটি মুহুর্তের অনুভূতি আমার কাছে স্পষ্ট! এতটা বেশি স্পষ্ট যে মাঝে মাঝে ভাবি তুমিও আমার কাছে এতটা স্পষ্ট নও! আমার বিরহকাল এতটাই দগদগে যে তোমাকে বড় আবছা লাগে! তোমার মুখখানি তখন হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারিনা। স্মৃতিভ্রষ্টের মত মগজের নিউরোন হাতরাতে থাকি, তোমাকে নিয়ে একটি সুখের স্মৃতি মনে করার জন্য ছটফট করতে থাকি!

অতঃপর পৃথিবী অন্ধকার করে দিয়ে রাত নামে। আরেকটি রাত আমাকে নির্ঘুম কাটাতে হবে ভেবে শ্লেঘ অনুভব করি। কিংবা প্রতিটিক্ষণ আমি রাত নামার জন্য অপেক্ষা করি। কারণ এই সময়টাতে আমি নিজের মত করে থাকতে পারি। লৌকিকতার যন্ত্র-জীবন থেকে বের হয়ে আমি আমার হতে পারি! তারচেয়েও বড় কথা তখন তোমাকে আমি সুক্ষ্মরূপে পেতে পারি আমার কল্পনায়, আমার অনুভবে! তখন আমাকে নিউরোনের অলিতে গলিতে তোমাকে খুঁজতে হয়না। তুমি এমনিতেই এসে ধরা দাও। তোমার স্পষ্ট অবয়ব আমি চোখ বন্ধ করেও দেখতে পাই, তোমার ঘ্রাণ আমি নাক বন্ধ করেও শুঁকতে পাই!

অনুভূতিগুলো এমন করেই আমার সাথে নির্মম খেলা খেলে! যখন একটি দীর্ঘ রজনী শেষে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে, আমার চোখ আবার কড়কড় করে ওঠে, দু’চোখে অশ্রুর জোয়ার নামে। ঈষৎ লালচে চোখ নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি লৌকিকতায়, বিরস মুখে জীবন যাপনের যাবতীয় করণীয়গুলো পালন করি। আর একটু আঁধারের জন্য ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকি! এ অস্থিরতা কখনোই তোমাকে ছুঁয়ে যায় না এইভেবে অভিমানে গলার ভেতর একদলা কষ্ট গিলে ফেলার কেবলই ব্যর্থ চেষ্টা চালাই! অথবা আপন মনে ভেবে পুলকিত হই তুমিও কষ্টে আছো আমাকে ছাড়া… তুমি খুউব ভালো থাকো তা চাইলেও স্বার্থপরের মত অথবা হিংসুটের মত কামনা করি- তুমি এমন করে কষ্টে থাকো… তুমিও এমন করে পুড়তে থাকো…

বাংলাদেশ সময়: ১:২৯:৪৯   ৭৭৩ বার পঠিত