শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫

‘মানুষ শান্তিতে থাকলে খালেদা জিয়া অশান্তিতে ভোগেন’

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘মানুষ শান্তিতে থাকলে খালেদা জিয়া অশান্তিতে ভোগেন’
শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫



http://dailyvorerpata.com/wp-content/uploads/2015/11/shaikh_hasina_pree_conference_after_dutch_journey_vorerpata.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকে, বিএনপিপ্রধান (খালেদা জিয়া) তখন অশান্তিতে ভোগেন। এছাড়া কারো কোনো ষড়যন্ত্র বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডই বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’

নেদারল্যান্ডসে তিন দিনের সরকারি সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাতে দ্য হেগের কুরহাউস হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসস

তিনি আরী বলেন, ‘তাঁর সরকারের সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ, জনগণের অদম্য কাজের স্পৃহা এবং প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থন আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এখন আর কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন লাভের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে কোনো ষড়যন্ত্রই দেশকে বিচ্যুত করতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সামরিক স্বৈরশাসকরা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা সামনে যাওয়ার এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা দেশের সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনে অবদান রেখেছেন। প্রবাসীরা বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এবং তাঁরা চলতি বছর প্রায় ২৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রবাসীরা সে সময় স্যার টমাস উইলিয়ামকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সুইডেন ও ব্রিটেনে প্রতিবাদ জানাতে নেমে এসেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘তাঁরা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার জন্য টমাস উইলিয়ামকে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাঁকে বাংলাদেশে আসতে দেননি।’

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার লন্ডন থেকে তাঁকে দেশে ফিরে যেতে দিতে চায়নি। তখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর দেশে ফেরার পথে সঙ্গী হয়েছিলেন।’

নেদারল্যান্ডসকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশটি সব সময় প্রয়োজনে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই তিনি এই সম্পর্ককে জোরদার করার লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই সরকারি সফর করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের মেয়াদকালে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বাংলাদেশ কোনো ক্ষেত্রেই অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। বরং হত্যা ও ক্যুর রাজনীতি দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসন বিস্মৃত হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করেন। ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দেন এবং বিদেশে নিয়োগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ২১ বছর ধরে কষ্ট করেছে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে দেশের জনগণ উন্নয়নের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু ৫ বছরের বেশি তাদের এ সুখ স্থায়ী হয়নি। কারণ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে এসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শন করে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচন হচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এ নির্বাচনে দেশের জনগণ সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে আবার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে প্রতিটি খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতি ফিরে আসে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্মসূচিগুলোকে সামনের সারিতে নিয়ে আসে। সরকার এক সঙ্গে সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।’

বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি লাভের বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির ওপর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি অফিসগুলোর জন্য কম্পিউটার সংগ্রহ করার বিষয়ে ডাচ কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার জন্য বিএনপির সমালোচনা করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল মেয়াদে বাংলাদেশ সরকার ডাচ কম্পিউটার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিউলিপ কম্পিউটার্স এনভির কাছ থেকে কম্পিউটার ক্রয় করার জন্য চুক্তি করেছিল।

বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর নামের সঙ্গে মিল থাকায় বিএনপি সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই চুক্তিটি বাতিল করে দিয়েছিল এই ধারণার ভিত্তিতে যে, টিউলিপ কম্পিউটার্স কোম্পানির মালিক টিউলিপ সিদ্দিকী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে তখন চুক্তি বাতিল করায় বাংলাদেশ সরকারের ৩২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল। দুর্নীতি ও অসৎ লোকদের জোট বিএনপি সব সময় অন্যদেরও একইভাবে বিচার করে।’

বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া আবার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। সাম্প্রতিক হত্যাকা-, নৈরাজ্য ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে তারা রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্যও তাঁদের প্রতি আহ্বান জানান।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান শরীফ এবং হল্যান্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহিদ ফারুক অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:৪৪   ২৯৩ বার পঠিত