বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৫

খালেদা জিয়া ফিরছেন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » খালেদা জিয়া ফিরছেন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে
বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ আগামী ১০ নভেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার প্রায় দুই মাসের এ সফর রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। দলের জন্য তিনি নিয়ে আসছেন নতুন বার্তা। এই সফরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বেশ কিছু সাংগঠনিক বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে; যা বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দলের চেয়ারপারসনের আলাপ-আলোচনার ফল।
জানা গেছে, বিএনপির প্রধান এই দুই নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আনা হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণদের আসীন করা হবে গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির মধ্যে একটি কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেয়া হবে; যা হবে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। এর মধ্য দিয়ে দল পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবসহ নতুন নতুন সিদ্ধান্ত ধারণ করবে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই হবেন বিএনপির মহাসচিব। দীর্ঘ চার বছর ধরে মির্জা ফখরুল ভারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দায়িত্ব পালনকালীন বেশ কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। নতুন করে গত মঙ্গলবার আবারো কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে।
চোখ ও পায়ের চিকিৎসা সম্পন্ন না হওয়ায় বারবার দেশে ফেরার তারিখ পেছানো হলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে, আগামী ১০ নভেম্বর খালেদা জিয়া দেশে পৌঁছবেন। এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে ৯ নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টায় দেশে ফেরার জন্য টিকিটও কেটেছেন তিনি। ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় ঢাকায় এসে পৌঁছবেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনে তিনি বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দল পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলেছেন। দলের চেয়ারপারসনকে তারেক রহমান জানিয়েছেন তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার কথা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবারো কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে পরিবর্তনের কথা বলেছেন তারেক রহমান। এ ক্ষেত্রে দলের মহাসচিব নির্বাচন, স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তন আনা, নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে সাচ্চা নেতাদের পদায়নের বিষয়গুলো নিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তারা।
জানা গেছে, বয়স্ক কিংবা অযোগ্য বলে দল থেকে কাউকে বাদ দেয়ার পক্ষপাতী নয় বিএনপির হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে মূল নির্বাহী কমিটির বাইরে এক বা একাধিক বিকল্প স্থান তৈরি করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। দল ঢেলে সাজাতে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করছেন তারেক রহমান। বুদ্ধিজীবীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে পরামর্শক কমিটি এবং দক্ষ একটি গবেষণা সেল গঠনের ওপর তিনি জোর দিচ্ছেন। যে সেল গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখবে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকবেন। বৈঠকে সফরের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে সিনিয়র নেতাদের নতুন বার্তা দেবেন বিএনপি প্রধান। সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ড, ব্লগারদের ওপর আক্রমণ, বিএনপি শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারসহ নানা ইস্যুর প্রেক্ষাপটে করণীয় বাতলে দেবেন তিনি।
দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া দেশে ফিরে যুবদলের কমিটি ঘোষণা করবেন। ছাত্রদল ঢাকা মহানগরের ইউনিটগুলোতেও নতুন কমিটি দেয়া হবে। জানা গেছে, এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনের নতুন নেতৃত্ব গঠন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। তারেক রহমান এ নিয়ে তার সিদ্ধান্তের কথাও চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন।
এ দিকে জেলাপর্যায়ে দল গোছানোর কার্যক্রমে গতি এসেছে। জানা গেছে, ৪০টি সাংগঠনিক জেলায় দল গোছানোর নানা কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। উপজেলা, থানা, ইউনিয়নে নতুন নতুন কমিটি আসছে।
হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট থেকে জেলা, মহানগর, থানা বা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন নয়া দিগন্তকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে সাংগঠনিক কাজে আরো গতি আসবে। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুনর্গঠনের কাজ চলছে। দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হবে।
জানা গেছে, তৃণমূল পুনর্গঠন শেষে কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু করবে বিএনপি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের কথা। সে অনুযায়ী ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ষষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা। তবে আন্দোলনের ব্যস্ততা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তা করতে পারেনি দলটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৭:২৯   ২৯৬ বার পঠিত