বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫

নওগাঁয় নতুন কয়লাখনির সন্ধান

Home Page » জাতীয় » নওগাঁয় নতুন কয়লাখনির সন্ধান
বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলা নওগাঁয় নতুন একটি কয়লাখনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। জিএসবির পরিচালিত জরিপে নওগাঁর আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়ন ও সন্নিহিত এলাকায় এই খনির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
এখন একাধিক কূপ (এক্সপ্লোরেটরি ওয়েল) খনন করে খনির গভীরতা, বিস্তার, মজুতের পরিমাণ, কয়লার মান প্রভৃতি নির্ধারণ করা হবে। সে জন্য তিলকপুরে খননযন্ত্র রিগ পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে বলে জিএসবি এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।
জিএসবি ও মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, তিলকপুরে যে খনি এলাকাটি (গন্দোয়ানা সেডিমেন্টারি বেসিন) চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মিটার গভীরতায়। আবিষ্কার নিশ্চিত হলে এটি হবে দেশের ষষ্ঠ ও গভীরতম কয়লাখনি।
জানতে চাইলে জিএসবির মহাপরিচালক মো. নেহাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরেই তাঁরা তিলকপুরে কূপ খনন শুরু করতে চান। খনন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কয়লা আবিষ্কার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
একই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরবঙ্গে যে কয়লাখনিগুলো পাওয়া গেছে, তা সবই গন্দোয়ানা বেসিনে।
নওগাঁয় এই বেসিনের গভীরতা বেশি হবে। কারণ, এলাকাটি অপেক্ষাকৃত দক্ষিণে। আর যেকোনো খনিজ সম্পদের আবিষ্কারই নিশ্চিত করতে হয় কূপ খননের মাধ্যমে।
এর আগে দেশে পাঁচটি কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই খনিগুলোতে মোট মজুত প্রায় ৩০০ কোটি মেট্রিক টন, যা প্রায় ৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের জ্বালানি মানের সমান। খনিগুলোর মধ্যে ১৯৮৫ সালে বড়পুকুরিয়া, ১৯৯০ সালে খালাশপীর এবং ১৯৯৫ সালে দীঘিপাড়া কয়লাখনি জিএসবিই আবিষ্কার করে।
এ ছাড়া, পাকিস্তান আমলে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাখনিটিও তৎকালীন ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের আবিষ্কৃত। একমাত্র ফুলবাড়ী খনিটি আবিষ্কার করে বিএইচপি মিনারেলস নামের একটি বিদেশি কোম্পানি। খনিগুলোর মধ্যে জামালগঞ্জ খনির অবস্থান প্রায় এক হাজার মিটার গভীরতায়। অন্য চারটি খনি সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার গভীরতার মধ্যে।
বর্তমানে একমাত্র বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ভূগর্ভস্থ বা সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে। এই কয়লা দিয়ে ২৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে বড়পুকুরিয়াতেই। সম্প্রতি সেখানে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
সরকারি মালিকানাধীন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানি (বিসিএমসিএল) খনিটি পরিচালনা করছে। ভূগর্ভস্থ/সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে খনির মোট মজুতের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব নয়। আর সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে তোলার পর অবশিষ্ট কয়লা আর কখনো তোলার মতো প্রযুক্তিও এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
সরকার সম্প্রতি দীঘিপাড়া খনি থেকেও কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই খনি উন্নয়নের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে বিসিএমসিএলকে। এ জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে বলে কোম্পানির সূত্র জানায়। দীঘিপাড়া খনিতে ৩২৮ থেকে ৪৫৫ মিটার গভীরতায় প্রায় ৮৭ কোটি মেট্রিক টন কয়লা মজুত আছে। প্রায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই খনির অবস্থান।
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে, সে অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের খনি থেকে তোলা এবং আমদানি করা কয়লা দিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৩:২৯   ২৮৪ বার পঠিত