বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সম্পাদক?

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সম্পাদক?
বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫



http://dailyvorerpata.com/wp-content/uploads/2015/11/awami-ligue.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে পরবর্তী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেশের প্রাচীনতম দলটির হাল। ইতোমধ্যে এ সম্মেলনকে ঘিরে গুঞ্জন- কে হচ্ছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী এ দলটির পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক মাঠে এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। সম্ভাব্যদের নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন ও পক্ষে-বিপক্ষে লবিং-তদবিরও।তবে আওয়ামী রাজনীতির নীতিনির্ধারক একজনই। তিনি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই নির্ধারণ করবেন আগামী দিনে কে হবেন লড়াই-সংগ্রামে তাঁর প্রধান সহযোদ্ধা। বিশ্বরাজনৈতিক মাঠ ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রতি নজর রেখেই আওয়ামী লীগের আগামী দিনে তরীতে দীর্ঘদিনের দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী ও পরিশ্রমী তরুণদের নেতৃত্বে আনতে চান তিনি। এ লক্ষ্যে দলের হাইকমান্ড নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তথ্যমতে, জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন তুঙ্গে। সম্ভাব্য সম্পাদক প্রার্থীরা পদ বাগিয়ে নিতে জোর লবিং অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণসহ বিভিন্নভাবে দলের হাইকমান্ডের নজরে থাকার চেষ্টা করছেন।

সম্ভাব্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম মুখে মুখে উঠে আসছে। এছাড়া দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এমন নেতা পাওয়া যাবে না, যিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী নন। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে কে আসছেন- তা নেত্রী (শেখ হাসিনা) ছাড়া কেউই আগে নিশ্চিত করতে পারবেন না। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

এর মধ্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামই শোনা যাচ্ছে বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ে তিনিই এখন শীর্ষে অবস্থান করছেন। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দুর্দিনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দলের কর্মকা- পরিচালনা করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইর জাতীয় সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দু’দফায় দায়িত্ব পালনের সময় সরকার ও দলের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য দলের হাইকমান্ড তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।

এছাড়া বাবা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতোই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের জন্য নিবেদিত হওয়ায় শেখ হাসিনা তাঁকে তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে পারেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এর আগেই গত দুই সম্মেলনেই সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। ২০০৯-এর সম্মেলনের আগে ওবায়দুল কাদের দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন থেকেই তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন। এবারও তিনি কাঙ্খিত এ পদে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অপর সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। অনেক দিন ধরেই দলের অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করে দলের পক্ষে সাফাই গাইছেন তিনি।

এ ব্যাপারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ভোরের পাতাকে বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে যে কোনো পদে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছি।’

জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে এক সময়ে সাংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও ভেতরে ভেতরে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

এছাড়া অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চেষ্টা করছেন।

সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনে নতুন কমিটিকে ঢেলে সাজাতে বিতর্কিত, দুর্নীতি ও পদবাণিজ্যে জড়িত, অযোগ্য ও সুবিধাবাদী চিহ্নিত করার জন্য হাইকমান্ডকে কড়াকড়ি নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। চিহ্নিত, বিতর্কিত ও অযোগ্যদের ছঁটাই করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে মূল দলের নেতৃত্বে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আনতে মাঠের ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতাদের এগিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। পরিবর্তন আনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেও। বাড়ানো হবে প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ। কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসংখ্যা হতে পারে ১০১ জন, যা বর্তমানে আছে ৭৩ জন। প্রেসিডিয়াম করা হতে পারে ১৫ জন, বর্তমানে আছেন ১৩ জন। সমন্বয় বাড়াতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ৩টি থেকে ৫-এ আনা হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়িয়ে করা হতে পারে ১০টি, বর্তমানে আছে ৭টি।

উল্লেখ্য, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পরপর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাসেই অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে গত ১১ সেপ্টেম্বরের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৯:৫৭   ৩৬১ বার পঠিত