রবিবার, ১ নভেম্বর ২০১৫
ব্যর্থ হচ্ছেন গোয়েন্দারা!!!
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ব্যর্থ হচ্ছেন গোয়েন্দারা!!!বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক ঘটানো হচ্ছে নাশকতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন গোয়েন্দারা। আবার আগাম তথ্য দিলেও তা প্রতিরোধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঠেকানো যাচ্ছে না এসব ঘটনা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গোয়েন্দা নজরদারি সঠিকভাবে না হওয়ার কারণেই এসব ঘটনা দিন দিন বেড়েই চেলেছে। যার কারণেই তালিকা ধরে ধরে ব্লগার খুনের পর নির্বিঘ্নে সটকে পড়ছে অপরাধীরা। গোয়েন্দা নজরদারি আরও কার্যকর করার পাশাপাশি সাইবার পেট্রলিং বাড়ানো অত্যাবশ্যক। কারণ উন্নত বিশ্বে সাইবার পেট্রলিং বাড়িয়ে অাধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত অপরাধীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে। কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনার পর নাশকতাকারী চক্রের সদস্যরা টুইট বা ব্লগিং করে। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ধরতে বা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী নাগরিক ও রাজধানীর মিরপুর চেকপোস্টে পুলিশ সদস্য খুন এবং হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলে হামলাসহ দেশের বিভিন্ন নাশকতার ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘটনায় সরকারের কাছে আগাম বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
তারা আগেভাগে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারছে না। পাশাপাশি ঘটনার পর দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটনেও তেমন কোনো সাফল্য দেখাতে পারছে না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে নজরদারির কৌশল অনুসরণ করছে, তার চেয়ে আর উন্নত ধরনের কৌশল নিয়ে অপরাধ কর্ম করছে সন্ত্রাসীরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা কতটা অভিজ্ঞ, তুখোড় ও দক্ষ-এসব গুণাবলীর ওপর নির্ভর করে তদন্তের সফলতার ওপর। উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আর একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কোনোভাবেই সমান নয়। এ দুর্বলতা নিয়েই উন্নয়নশীল দেশের গোয়েন্দাদের কাজ করতে হয়।
সুতরাং তারা (উন্নত দেশ) অনেক বেশি সফলতা পাবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ছোট ছোট পরিসরে যেসব হামলা বা সন্ত্রাসী ঘটনা সংঘটিত হয়, তা বের করা খুবই কঠিন। কারণ ছোট ঘটনায় ক্লু খুব কমই থাকে। অন্যদিকে বড় সন্ত্রাসী ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক ক্লু থাকে, যেখান থেকে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সহজ হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় ইতালি ও রংপুরে জাপানি নাগরিক খুনের ঘটনায় আগাম কোনো তথ্য দিতে পারেনি গোয়েন্দারা। একের এক ব্লগার খুন হলেও সে ধরনের তথ্য ছিল না তাদের (গোয়েন্দা) কাছে। এমনকি একই সূত্রে পাবনায় যাজককে হত্যার চেষ্টা ও ঢাকায় খিজিরখানকে হত্যার ঘটনাও তাদের কাছে অজানাই ছিল। এর আগে বিডিআর বিদ্রোহে অসংখ্য সেনা কর্মকর্তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
তখনও গোয়েন্দারা আগাম বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলাসহ উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনার ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা ব্যর্থ হন। এসব ঘটনায় তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও উঠেছে।
সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সাইবার পেট্রলিং নেই। এ পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গিভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তাতে দেখা গেছে, সন্ত্রাসীরা প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করেছে। জঙ্গিদের মনিটরিং করার জন্য বাংলাদেশে গেটওয়ে লেভেলে যে ধরনের গোয়েন্দাভিত্তিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন, তা আরও বাড়াতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যাচ্ছে।
তানভীর হাসান জোহা আরও জানান, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের আরও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীদের দ্রুত শনাক্ত করা
সম্ভব। কিন্তু দক্ষতা না থাকলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা সন্ত্রাসীদের দমন করা কিছুটা কঠিন।
ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল আলম প্রতিবেদককে বলেন, যখন কোনো এলাকায় অপরাধীরা অপরাধ করে পার পায়, তখন তারা আরও এক ধাপ বড় অপরাধের দিকে এগিয়ে যায়। সবকিছুর মূলে হচ্ছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাগুলো কীভাবে দেখছে।
আশরাফুল আলম বলেন, একের পর এক ব্লগার হত্যা, যাজককে হত্যার চেষ্টা, খিজিরখান হত্যা ও দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, তাজিয়া মিছিলে হামলা-এসব কিছুর একটা যোগসূত্র পাওয়া যায়। অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায়, এ ধরনের ঘটনাকে ক্রোনোলজিক্যাল ক্রাইম বলা হয়।
তিনি বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা ধরা পড়ছে না। তাই সন্ত্রাসীদের ধারণা, রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। গোয়েন্দারারা তাদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অপরাধীরা মনে করছে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি দাবি করেন, আমাদের গোয়েন্দাদের যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। তারা বসে নেই বলেই আমরা অনেক আগাম তথ্য পাই। আমাদের গোয়েন্দারাও বিশ্বমানের। বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৫:০৭ ৩১৫ বার পঠিত