বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৫
এই রাত উৎসবের
Home Page » খেলা » এই রাত উৎসবেরবঙ্গনিউজ ডটকমঃ এই রাত আনন্দের। এই রাত উৎসবেরও।
শেষ বাঁশি বাঁজতেই মাঠে, গ্যালারিতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের ঢেউটা আছড়ে পড়ল স্টেডিয়ামের বাইরেও। স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী যে ফাইনালে ওঠার স্বপ্নটাও পূরণ করে ফেলল!
৬০ মিনিটের মধ্যে পাওয়া দুটি গোল ধরে রেখে শফিকুল ইসলাম মানিকের দল রাতটাকে বর্ণিল করবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এমন রাতে একটু স্নায়ুচাপ না থাকলে কি চলে! ৭৮ মিনিটে অধিনায়ক গোলাম হাজরাতের ফ্রিকিকে দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার সাইদ মোহাম্মদ হাশেম অসাধারণ এক হেডে ব্যবধান কমিয়ে আনলেন। শেষ কয়েক মিনিট আতঙ্কের চোরাস্রোতই যেন বইছিল স্টেডিয়ামে।
৮৯ মিনিটে সব শঙ্কা দূর। পাল্টা আক্রমণে জাহিদ থেকে থ্রু পেলেন এলিটা কিংসলে। সেই বল মাঝমাঠ থেকে টেনে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটা করে বেরিয়ে আসেন ম্যাচ-সেরা নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত ডি স্পিন গর বাজান অবাক, হতভম্ব। ৩-১ গোলে হারের ম্যাচের দুঃস্মৃতিটা দ্রুতই মুছে ফেলতে চাইবে আফগান প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পি¬য়নরা।
এই বিপর্যয়ে ‘ভূমিকা’ রেখেছে পরশু আফগানিস্তানে হওয়া ভূমিকম্প, যেখানে বাজান দলটির কয়েকজন খেলোয়াড়ের স্বজন হতাহত হয়েছে। কোচ ওয়াহেদুল্লাহ হতাশ মুখে সেটিই বলছিলেন ম্যাচের পর, ‘দেশে ভূমিকম্প হয়েছে জেনে খেলোয়াড়েরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। অনেকের আত্মীয়স্বজন আহত। আমাদের অন্যতম খেলোয়াড় আনোয়ার আকবরির ভাই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল ওই সময়, সে মারা গেছে। আমরা আসলে মন দিয়ে ম্যাচটা খেলতে পারিনি।’
চট্টগ্রাম আবাহনী সুযোগটা নিয়ে প্রাধান্য রাখল প্রায় গোটা ম্যাচেই। ২-১ হওয়ার পরই যা একটু খেলেছে বাজান, বাকি সময়টা সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মানিক এমন জয়ের কৃতিত্ব দিলেন খেলোয়াড়দের, ‘কিছু খেলোয়াড় পুরো ফিট না থাকলেও সবাই নিজেকে উজাড় করে খেলেছে। মাঝমাঠে ওদের সংগঠিত হতে না দেওয়ার পরিকল্পনাটা সফল করেছি। সাফ চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের চ্যাম্পিয়ন দলকে হারানো সত্যিই বড় সাফল্য।’
টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সটা এদিনও ধরে রাখলেন জাহিদ। কোচের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রথম প্রশ্নই শুনলেন, তাজিকিস্তান সফরে জাতীয় দলে উপেক্ষিত থাকার ক্ষোভ কী কাজ করেছে মনে? মুখে হাসি, কিন্তু জাতীয় দল প্রশ্নে তালা। অনেক চাপাচাপির পর শুধু একটা কথাই তাঁর মুখে শোনা গেল, ‘আমি আমার কাজটা করেছি।’
জাহিদের কাজ অবশ্য শেষ নয়। দলকে এবার চ্যাম্পিয়ন করার প্রতিজ্ঞাও জানালেন। কাল গোল হয়তো পাননি। তবে গোল করালেন। ২৪ মিনিটে তাঁর কর্নারেই এমিলির বুদ্ধিদীপ্ত হেডটা বাতাসে রেখেই হেডে জালে পাঠান একসময় শেখ জামাল, ঢাকা আবাহনীতে খেলা ক্যামেরুনিয়ান স্ট্রাইকার ইয়োকো স্টিভ থমাস। ৫৮ মিনিটে প্রথম গোলদাতা ইয়োকোর থ্রু ধরে বক্সের কোনা থেকে তীব্র শটে জালে জড়িয়ে দিলেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে।
কোচ মানিক একাদশে খেলোয়াড়দের পজিশনে কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। মিঠুনকে ওপরে তুলে একটু নিচে নামিয়ে দেন এমিলিকে। তবে এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন আগের তিন ম্যাচে চার গোল করা জাহিদই। বাঁ দিকের উইংয়ে শুরু করে কিছু সময় পরই চলে যান রাইট উইংয়ে। রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়ে প্রথম কুড়ি মিনিটেই গোটা তিনেক শটও নিয়েছিলেন বাজান পোস্টে।
ম্যাচের আগে বলা হচ্ছিল, লড়াইয়ের ভেতর লড়াইটা হবে জাহিদ বনাম বাজানের উইঙ্গার আনোয়ার আকবরির। তবে আকবরি হেরে গেলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ‘নাম্বার সেভেনের’ কাছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেছেন আকবরি, কিন্তু রেজা-মিশুরা বড় কোনো ভুল করেননি। রেজা তো দুর্দান্ত রক্ষণ করলেন। তরপরও রক্ষণের ফাঁক গলে বেশ কয়েকটি উঁচু শট নিয়েছেন বাজানের খেলোয়াড়েরা। নিশানা ঠিক ছিল না বলে বিপদ হয়নি।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারিও তাই মিনিট দশেক বাদ দিয়ে বাকি সময়টা নেচে-গেয়ে ম্যাচটা উপভোগ করল। অন্য সব ম্যাচের চেয়ে এই রাতে দর্শক অনেক বেশি, অন্তত ২০ হাজার তো হবেই। মাঠে আসা স্বার্থকই হলো এই জনতার।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০০:৪৫ ৪৬৩ বার পঠিত