রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৫
৫০ শতাংশ বিদেশির বাংলাদেশ সফর স্থগিতঃদুই নাগরিক হত্যার জের।
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ৫০ শতাংশ বিদেশির বাংলাদেশ সফর স্থগিতঃদুই নাগরিক হত্যার জের।বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বাংলাদেশ সফরের কথা ছিলো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার এমন অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা গত দুই সপ্তাহে তাদের নির্ধারিত সফর বাতিল বা স্থগিত করেছেন। আবার বাংলাদেশে কাজ করছিলেন এমন কর্মকর্তাদের অর্ধেক সংখ্যক দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। হতাশার এমন তথ্য জানিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাদের অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তারা বলেছেন, পরপর দু’জন বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড বিদেশি উন্নয়ন কর্মীদের মধ্যে যতোটা ভীতির সঞ্চার করেছিলো তার চেয়ে অনেক বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সতর্কবার্তা। তবে ‘আমরা কাউকে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বলিনি বা বলছি না,’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের এমন বক্তব্যের পর কেউ কেউ কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও সর্বশেষ যুক্তরাজ্য সরকার পশ্চিমাদের ওপর ‘আরো’ এবং ‘এলোপাতাড়ি’ হামলার আশংকা প্রকাশ করার পর তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। জাপানের হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের অর্থায়নে পরিচালিত ‘ভিশন ২০২১’-এর সদস্য সচিব আতাউর রহমান মিটন বলেন, এক ইতালীয় এবং এক জাপানী নাগরিক নিহত হওয়ার পর ৫০ শতাংশ বিদেশি তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল বা স্থগিত করেছেন। দেখা যাচ্ছে যাদের আসার কথা ছিলো তারা শিডিউল পেছাচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে তিনি দাবি করেন, এমনকি দেশে যে বিদেশি নাগরিকরা ছিলেন তাদেরও প্রায় ৫০ শতাংশ ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন অথবা ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় চলে এসেছেন। ‘এভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যে বেশ স্থায়ী একটি প্রভাব পড়বে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না,’ বলে মন্তব্য করেন এই উন্নয়ন কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন: আমরা কয়েকদিন ধরেই দেখছি দেশে বিদেশিদের আনাগোনা অনেকটাই কমে এসেছে। ‘এমনকি আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের কথাই যদি বলি, এখানে এই সময়ের মধ্যে যাদের আসার কথা ছিলো তারা নিজেরাই যেমন তাদের শিডিউল স্থগিত করছেন তেমনই পরামর্শক্রমে আমরাও অনেককে আসতে না করে দিচ্ছি। আবার যারা এরপরও এখানে আছেন, তাদের বেশিরভাগই ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। সন্ধ্যার পর যেখানে ঢাকার অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো বিদেশিদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো, এখন সেসব অনেকটাই খালি,’ বলে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তবে তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি যতোটা না খারাপ তার চেয়ে অনেক বেশি প্রচার হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মসূচিতে এর একটা দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলগুলো জানিয়েছে, তাদের অনেক ‘বুকিং’ বাতিল করতে হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর অবশ্য বিদেশিদের ভয়কে ‘অমূলক’ দাবি করে বাংলাদেশে থাকা সকল বিদেশির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কূটনীতিক এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশি সকল নাগরিকের বাড়ি, কর্মস্থল এবং তাদের যে কোনো জায়গায় আসা-যাওয়ার পথে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে দুটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এরকম ঘটনা যে অন্য জায়গায় হচ্ছে না তা নয়। এমনকি উন্নত দেশে গড়ে ৩০টির মতো খুনের ঘটনা ঘটে। তারপরও আমরা এরকম অপরাধ শূন্যে রাখার চেষ্টার সঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছি। কারোরই বাংলাদেশ নিয়ে কোনো আশঙ্কা থাকা উচিত হবে না। তবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা বলছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনভাবে জোরালো হওয়া উচিত যাতে তা সাদা চোখেও বোঝা যায়। মার্কিন ওই উন্নয়ন সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু সেসবের যথাযথ প্রয়োগ নেই। দেখা যাচ্ছে সিসিটিভি লাগানো আছে, কিন্তু সেটা ঠিকভাবে চলছে কিনা তা দেখার কোনো লোক নেই। এর ফলে এতোসব দুর্ঘটনা ঘটলেও অপরাধীদের ধরা যাচ্ছে না, যা বিদেশিদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২২:৫১ ৩২৪ বার পঠিত