বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫

হত্যায় দ্রুত বিচার চান বিদেশি কূটনীতিকেরা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » হত্যায় দ্রুত বিচার চান বিদেশি কূটনীতিকেরা
বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫



পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিক হত্যার পর বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে তদন্ত করে দুই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের জন্য তাঁরা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের বিচারের ব্যাপারে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডিন ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ব্রিফিংয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে রংপুরে কুনিও হোশি হত্যার পর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, দুই হত্যার পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে জাপান একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
তবে ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা কিছু বলেননি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অনুরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার নিকোলায়েভ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত একাধিক কূটনীতিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের প্রায় দুই ঘণ্টার আলোচনায় বিদেশিদের মনোভাব বেশ ইতিবাচক ছিল। বিশেষ করে কূটনীতিকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করায় তাঁরা সরকারকে ধন্যবাদ জানান। কূটনীতিকেরা যখন হত্যাকাণ্ড ও নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলেন, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁদের এই বলে আশ্বস্ত করেন যে দুটি হত্যার ব্যাপারে তদন্ত এগিয়ে চলেছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ছাড় দেবে না। এ ছাড়া বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নেওয়া বাড়তি নিরাপত্তা তাঁদের স্বস্তি দিয়েছে। আলোচনায় কূটনীতিকেরা এ কথা বলেছেনও।
ইইউর রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করেন বলে এক কূটনীতিক এ প্রতিবেদককে জানান। পিয়েরে মায়াদু বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে তাঁদের সফর স্থগিত করছেন। তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো দরকার।
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি নাগরিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা কূটনীতিকদের জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের বলেন, সরকার এই মুহূর্তে দুই বিদেশি হত্যার ঘটনার তদন্তকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে ২ লাখ ২৪ হাজার বিদেশি অবস্থান করছেন। তাঁদের সবাই নিরাপদে রয়েছেন। বিদেশিদের নিরাপত্তা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের জানান, বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সার্বক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে সতর্ক রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপারে কূটনীতিকদের কোনো প্রস্তাব আছে কি না, তা-ও জানতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে কূটনীতিকদের কেউই এ সময় নতুন কোনো প্রস্তাব দেননি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএসের দায় স্বীকারের যে কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার নিকোলায়েভ দুই দেশের নাগরিক হত্যার সঙ্গে পাবনায় ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা এবং ঢাকায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যানকে হত্যার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চান।
কূটনৈতিক কোরের ডিন হিসেবে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
পরে রবার্ট গিবসন সাংবাদিকদের বলেন, কূটনৈতিক এলাকায় ও বিদেশিদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ায় আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় জড়িতদের বিচারের সম্ভাব্য সবকিছু করার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূতেরা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। শুধু ঢাকা বা কূটনৈতিক এলাকা নয়, সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব বিদেশি আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, এ দুটি ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মাহমুদ আলী বলেন, আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করেছি। বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, এটিকে তাঁরা আরও জোরদার করতে বলেছেন।
দুই বিদেশি হত্যায় আইএসের দায় স্বীকারের দাবি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। কালকে (গত সোমবার) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও এ কথা বলেছেন। আজকেও তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই দাবি সঠিক কি না, সেটি যাচাইয়ের চেষ্টা করছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত হুমকি সম্পর্কে সরকারকে আগেই তথ্য দেওয়ার কথা জানিয়েছিল, এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা দিয়েছিল (হুমকির আগাম তথ্য), সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু সেখানে তো হয়নি। আসলে যারা এসব করে, তারা কিন্তু বলে একটা, করে আরেকটা। হয়তো বলল আমরা এ জায়গায় আক্রমণ করব, কিন্তু করল আরেক জায়গায়।’
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক খান, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৫:১৭   ২৬৮ বার পঠিত