রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনিশ্চয়তায় ক্লাস ও পরীক্ষা!!

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » অনিশ্চয়তায় ক্লাস ও পরীক্ষা!!
রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ

সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোয় আগামীকাল সোমবার থেকে আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। কলেজে ছুটি চলবে টানা ১০ দিন আর স্কুলে চলবে ৮ দিন। ছুটি শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। আর কলেজেও রয়েছে নানা রকম পরীক্ষা। তাই শেষ দুই-তিন দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল বেশি। আগামী ১০ দিনে কী প্রস্তুতি নেবে তা জানতে শিক্ষার্থীরা উদগ্রীব। কিন্তু গতকাল শনিবার তারা কলেজে উপস্থিত হলেও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। গতকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ছিল কলেজশিক্ষকদের। আজ রবিবারও তাই। ফলে আজও ক্লাস করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকের শিক্ষকরাও গতকাল দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। আজও দুই ঘণ্টা ও আগামীকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি তাঁদের। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘ ছুটির আগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ।

এদিকে ১০ দিনের সফর শেষে বিদেশ থেকে এসেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল তিনি বৈঠক করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে আন্দোলনে থাকা দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা শিগগিরই সমাধান হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয়ে আরো আলোচনা চলবে বলে উভয় পক্ষ থেকে জানানো হয়।

দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় ক্লাস ও পরীক্ষা

দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় ক্লাস ও পরীক্ষা

কলেজগুলোয় অচলাবস্থা : গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি কলেজে ঘুরে শিক্ষাব্যবস্থার অচলাবস্থার চিত্র দেখা যায়। ঢাকা কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই হয়নি। শিক্ষকরা উপস্থিত হলেও তাঁরা কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেননি। শিক্ষার্থীরা অনেকে এলেও পরে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা সকাল ১১টার দিকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিলের প্রতিবাদে এবং অধ্যাপকদের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের দাবিতে মৌন মিছিল করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ঘুরে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।

ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান অনার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আরমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এমনিতেই আমরা প্রায় পাঁচ মাসের সেশনজটে আছি। তার পরও সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারলাম না।’

ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কুদ্দুস শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ক্লাসে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের পড়াতে চাই। কিন্তু সরকারের উচিত আমাদের মর্যাদা আর আত্মসম্মানের জায়গাটাও সমুন্নত রাখা। আমরা আগে যে মর্যাদা পেয়ে এসেছি সেখান থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে এই কর্মসূচি পালন করছি।’

মিরপুরের বাঙলা কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষকরা। ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ রাজধানীর সব কলেজেই শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিসিএস শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সারা দেশের কলেজশিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মবিরতি পালন করেছেন। আগামীকালও (আজ রবিবার) একইভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী ১৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে আমাদের অবস্থান ধর্মঘট পালন করার কথা রয়েছে। তবে আমরা কোনো ঘোষণা না পেলে কলেজ খোলার পর নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

ছুটির আগের শেষ কয়েক দিন ক্লাস করতে না পারায় অভিভাবকরা বেশ ক্ষুব্ধ। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বছরের তিন মাস আমাদের সন্তানরা ক্লাস করতে পারেনি। এখন বেশি করে পড়িয়ে তা পুষিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখন চলছে শিক্ষকদের কর্মবিরতি। ছুটির সময় কী পড়বে তা যদি শিক্ষার্থীরা জানতে না পারে তাহলে আগামী ১০ দিন কী করবে ওরা? যেভাবেই হোক আমরা বিষয়টির সমাধান চাই।’

এদিকে কলেজশিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরকারি ৩০৬টি কলেজে পড়ে তাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। ফলে এই কলেজগুলোতে পরীক্ষা নিতে না পারায় বেসরকারি কলেজেও বন্ধ রাখতে হচ্ছে পরীক্ষা। অথচ তারা সেশনজট থেকে মুক্তি পেতে ক্রাশ প্রোগ্রামের ঘোষণা দিয়েছিল, যার আওতায় থাকা পাঁচটি পরীক্ষা এই দুই দিনের কর্মবিরতির কারণে পেছাতে হয়েছে। ফলে সেশনজট আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল ২০১৪ সালের অনার্স প্রথম বর্ষ (বিশেষ) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষা আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালের বিএড অনার্স প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শনিবারের পরীক্ষা ৫ অক্টোবর হবে। গতকালের মাস্টার্সের সব পরীক্ষা পিছিয়ে ৩১ অক্টোবর নেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের বিবিএ তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টারের রবিবারের পরীক্ষা ১১ অক্টোবর এবং ২০১৪ সালের বিএসসি অনার্স ইন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পার্ট-১ দ্বিতীয় সেমিস্টারের রবিবারের পরীক্ষা ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাথমিকে শিক্ষা ব্যাহত : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও গতকাল দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। আজ আবারও দুই ঘণ্টা এবং ঈদের ছুটির আগের শেষ দিন আগামীকাল সোমবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন তাঁরা। গতকালের কর্মবিরতিতে ব্যাহত হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা। স্বতন্ত্র বেতন কমিশন গঠন এবং নতুন বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নীত স্কেলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণী জটিলতা দ্রুত নিরসনসহ বেশ কিছু দাবিতে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।

তবে প্রাথমিক শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন থাকায় ঢাকার সব স্কুলে একই রকম কর্মসূচি পালিত হয়নি। ঢাকার বাইরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গেজেটেডের বদলে দেওয়া হয়েছে নন-গেজেটেড পদ। তার পরও সে অনুযায়ী এখনো বেতন পাচ্ছি না। আমাদের পদোন্নতি নেই। এখন যদি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড না থাকে তাহলে তো বেতনের দিক দিয়ে সব সময়ই পিছিয়ে থাকব। তাই আমরা সমিতির ডাকে কর্মসূচি পালন করছি।’

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতা গতকাল বলেন, ‘দেশব্যাপী শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুই ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছেন। আসলে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা, ফাইল চালাচালিতে সীমাবদ্ধ থাকা এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাই আমাদের নতুন করে কর্মসূচিতে যেতে হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক : গতকাল শিক্ষামন্ত্রী তাঁর হেয়ার রোডের সরকারি বাসায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে শিক্ষকদের পক্ষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা অবগত আছেন। আমরাও দ্রুত সমাধান চাচ্ছি। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁদের প্রস্তাব সরকার গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। সমস্যা সমাধানে কমিটিও হয়েছে। শিক্ষকদের সমস্যা শিগগিরই সমাধান হবে এবং তাঁরা হাসিমুখে ঘরে ফিরবেন।’ শিক্ষকদের মূল দাবি অনুযায়ী পৃথক বেতন কাঠামো করা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করেনি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের বিষয়ে সহানুভূতিশীল। আলোচনা চলবে। শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোভাবেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না।’

ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। সেটা যত দিন না হয় তত দিন আমরা বেতনবৈষম্য ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছি। তবে আমাদের দাবির ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলনও চলবে, আলোচনাও চলবে।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেডারেশনের সহসভাপতি ও জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং নতুন বেতন স্কেলে মর্যাদার বিষয়টি সমুন্নত রাখার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি। আর অর্থমন্ত্রী বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে থাকবেন; ফলে বেতনবৈষম্য নিরসন কমিটির কাজও এ সময়ে খুব বেশি এগোবে না। এই সময়ে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা আমাদের দাবি পূরণের সুস্পষ্ট আশ্বাস চেয়েছি। তবে সেটা যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আসে, তাও আমরা মন্ত্রীকে বলেছি।’

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৮:৪২   ৩৭৫ বার পঠিত