শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ‘সিন্ডিকেটের’ হাতেবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও থাকছে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের গঠিত কথিত ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে। ঈদুল আজহার ছুটির এক সপ্তাহ পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। কমিটিতে কারা থাকবেন, তা নিয়ে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা যাচাই-বাছাই করছেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও কী সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকবে-জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, ‘সিন্ডিকেট কই পাইলেন? সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই।’
অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ-প্রত্যাশী ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই একটি সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের কমিটির নির্ধারণ করে আসছে। ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতাই নির্ধারণ করেন কমিটিতে কারা থাকবেন বা থাকবেন না। এ কারণে কাউন্সিলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন হলেও সেখানে কাউন্সিলদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এঁরাও কথিত সিন্ডিকেট দ্বারা মনোনীত বলে সংগঠনের সব পর্যায়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। তাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে নেতা-কর্মীরা দিনভর ব্যস্ত থাকছেন কথিত ওই সিন্ডিকেটের নেতাদের সঙ্গে লবিং-তদবিরে। পাল্লা দিয়ে নিয়মিত চলছে নেতাদের ‘প্রটোকল’ দেওয়া। আবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে যেসব ‘উপদলের’ নেতারা বাদ পড়েছেন, তাঁরাও চাইছেন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে। যাঁদের বয়স নেই, তাঁরা নিজেদের ‘ছোট ভাইদের’ কমিটিতে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে সর্বোচ্চ বয়স ২৯ বছর।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নিয়ে এখন তেমন মাথা ব্যথা নেই। পরে কাউন্সিলে দেখব। তারপরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজের অনুসারীদের রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
পদপ্রত্যাশী ও হল পর্যায়ের ১২ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের সকাল থেকেই খোঁজ রাখতে হচ্ছে, নিজ বলয়ের নেতা কখন কোথায় যাচ্ছেন। যাঁরা সভাপতির অনুসারী, দিনভর মোটরসাইকেলে চেপে তাঁর পেছন পেছন ছুটছেন। দলীয় কার্যালয়, মধুর ক্যানটিন আর নেতাদের বাসার নিচে ভিড় করে থাকছেন নিয়মিত। নিজের কর্মীদের জড়ো করছেন নেতার বিভিন্ন কর্মসূচিতে।
এ ক্ষেত্রে যেসব নেতার মোটরসাইকেল আছে, তাঁরা এগিয়ে আছেন-এমন মন্তব্য করে সাবেক কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরই তাঁরা হল ছেড়ে ফ্ল্যাটে উঠেছেন, গাড়িতে চড়ছেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে অন্যদেরও মোটরসাইকেলের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যাঁদের মোটরসাইকেল নেই, তাঁরা হয়তো দিনে একবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দেখা পান। আর যাঁদের মোটরসাইকেল আছে, তাঁরা সব সময় সঙ্গে থাকতে পারছেন। মোট কথা, পদ পেতে এখন শীর্ষ দুই নেতার পিছু ছাড়ছেন না ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ-প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আমরা প্রতিদিনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক করছি। এটা নিয়ে আরও বৈঠক করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটি ঘোষণা করব। আশা করি, ঈদের ছুটির এক সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হবে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাদের আসার সম্ভাবনা আছে-জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির যেসব নেতার বয়স আছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হবে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে যেসব নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে সময় দিয়েছেন, অ্যাকটিভ ছিলেন তাদেরও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে যেসব নেতা-কর্মী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়াই করেছিলেন, তাঁদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনও শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের গত সম্মেলনে সভাপতি পদে বৈধ প্রার্থী ছিলেন ৬৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বৈধ প্রার্থী ছিলেন ১৪২ জন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সহসভাপতি ৪১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১০ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ জনসহ মোট ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি থাকার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৫:৫৩ ৩৫৯ বার পঠিত