বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

যুদ্ধ চলছে ট্রেনের টিকিট নিয়ে !!!!!!!!!

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » যুদ্ধ চলছে ট্রেনের টিকিট নিয়ে !!!!!!!!!
বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫



 untitled-4_162440.jpg

বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
বাসের মতো ট্রেনের টিকিটের জন্যেও রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন বাড়িফেরা মানুষ। গত শুক্রবার বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হলে কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর লম্বা লাইন পড়ে। একই চিত্র ছিল গতকাল মঙ্গলবার ট্রেনের ঈদ-টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে। ছিল চিরাচরিত সেই ভিড়। এবারও রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনেছেন নাড়ির টানে ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে চট্টগ্রাম স্টেশনে লম্বা লাইন থাকলেও অতিরিক্ত ভিড় ছিল না। সহজে টিকিট পেয়ে খুশি যাত্রীরা।

বেলা ১১টায় কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, আগাম টিকিটের জন্য নির্ধারিত ১ ও ২ নম্বর কাউন্টারে শত শত মানুষের সারি। কেউ এসেছেন ভোরে। আবার কেউ আগের রাতে এসে টোকেন নেন। সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই
ছিল দীর্ঘ লাইন।
গতকাল আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি করা হয়। বুধবারসহ চার দিনে পর্যায়ক্রমে আগাম টিকিট বিক্রি হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের ছুটি। তাই ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিটের চাহিদা কিছুটা কম। যারা ঈদের আগে ছুটি নিয়েছেন, কেবল তারাই আসছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। তাই শিক্ষার্থীর সংখ্যাই গতকাল বেশি ছিল। টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, তারা ধারণা করছেন, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ২৩ সেপ্টেম্বরে যাত্রী চাপ হবে সবচেয়ে বেশি। ২৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি হবে ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। ওই দিন ক্রেতার ভিড়ও হবে সবচেয়ে বেশি।
১ নম্বর কাউন্টারে দাঁড়ানো ঢাকা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান জানান, সকাল ৮টায় দাঁড়িয়েছেন। তিন ঘণ্টা পরও তার সামনে অন্তত ৪০-৪৫ জন লাইনে আছেন। টিকিট পেতে আরও ঘণ্টাখানেক লাগবে। রাজশাহীর যে কোনো ট্রেনের টিকিট পেলে চলবে। বাসে খরচ বেশি। তাই ছাত্রদের কাছে ট্রেনই প্রথম পছন্দ।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের যাত্রী শামসুল আলম বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রেনই ভরসা। তিনি জানান, সোমবার রাত ১২টার পর থেকেই আগাম টিকিটের জন্য ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। টিকিট বিক্রির অনেক দেরি থাকায় কাউন্টার থেকে টোকেন দিয়ে বিদায় করা হয় যাত্রীদের। সকাল ৯টার দিকে এসে টোকেন দেখিয়ে আবার লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
ঈদে সবচেয়ে ভোগান্তি হয় সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে। এবারও একই আশঙ্কা রয়েছে। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী সমকালকে জানান, গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়। এতে গত দু’দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের ট্রেনগুলো আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়। রেললাইনের সংস্কারকাজের কারণে এই বিপর্যয় হয়েছিল। কাজ শেষ হয়েছে। তাই ঈদে সিডিউল বিপর্যয় হবে না বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।
কমলাপুর স্টেশন থেকে জানানো হয়, দৈনিক ২৯টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যায়। এগুলোতে আসন সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৩৩টি। ঈদের ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করা হবে। তাতে আসন সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়াবে। আরও ৩৮টি মেইল, লোকাল ট্রেনসহ সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৯০ হাজার যাত্রী ঢাকা ছাড়বেন। স্বাভাবিক সময়ে এই সংখ্যা ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার।
সকালে আগাম টিকিট বিক্রি পরিদর্শন করতে আসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি আশ্বাস দেন, আগামী ঈদের আগেই ৭০টি নতুন ইঞ্জিন ও ২৫০টি বগি যুক্ত হবে। ইঞ্জিন কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামীবার এখনকার মতো ভোগান্তি হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, রেলের সম্পদ সীমিত। যতটুকু সামর্থ্য আছে, তাই দিয়ে সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা হবে। মন্ত্রী জানান, যাত্রী চাপ সামাল দিতে ঈদের আগে-পরে ১০ দিন পাঁচ জোড়া স্পেশাল সার্ভিস চলবে। বর্তমানে চালু ৮৮৬টি বগির সঙ্গে ১৩৮টি মেরামত করে ঈদসেবায় যোগ করা হবে। ১৯২টি চালু ইঞ্জিনের সঙ্গে যোগ দেবে ২৫টি ইঞ্জিন।
মুজিবুল হক বলেন, টিকিট কালোবাজারি কঠোর হাতে দমন করা হবে। অনিয়ম প্রতিরোধে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কমলাপুরে অভিযোগ কেন্দ্র খুলেছে র‌্যাব।
চট্টগ্রামে ভিড় ছিল কম
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় ছিল না। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করেন। অতিরিক্ত ভিড়ের শঙ্কায় অনেককে গভীর রাত থেকেই স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
গতকাল টিকিট দেওয়া হয় ২০ সেপ্টেম্বরের জন্য। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে। একজন যাত্রীকে সর্বোচ্চ চারটি করে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে নিয়মিত টিকিট বিক্রির কার্যক্রমও।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি টিকিট পেয়ে আনন্দে আত্মহারা আবদুল জলিল নামে এক চাকরিজীবী সমকালকে বলেন, ‘নিজে যে কোনোভাবে বাড়ি যেতে পারব। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়। সে জন্য কোরবানির আগেভাগেই তাদের বাড়ি পাঠাতে ট্রেনের টিকিটের জন্য ভোর থেকে অপেক্ষা করেছি। টিকিট হাতে পাওয়ার পর ভালো লাগছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:৫০:০০   ৪১৮ বার পঠিত