সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
পাকিস্তানের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যঘাটতিতে বাংলাদেশ
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » পাকিস্তানের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যঘাটতিতে বাংলাদেশবঙ্গনিউজ ডটকমঃ পাকিস্তানের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ দেশটিতে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয়, তার চেয়ে বেশি সে দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাও আবার পরিমাণে কম নয়। এক্ষেত্রে অন্তত দশগুণ মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ।
বিক্রেতারা বলছেন, পাকিস্তানি কাপড়ের চাহিদার অন্যতম কারণ এর মান। ফলে ভারতীয় পোশাকের মৌসুমি আধিক্য থাকলেও নারীদের পোশাকের চাহিদার বড় অংশই পূরণ হচ্ছে পাকিস্তান থেকে আমদানির মাধ্যমে। পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হোম টেক্সটাইলেরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ পাকিস্তান। এসবের বাইরে আরও বেশকিছু পণ্য আসে পাকিস্তান থেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত নিজস্ব উৎপাদন সামর্থ্য বৃদ্ধি করে রফতানি সক্ষমতা বাড়ানো। কারণ পাকিস্তানসহ অন্যান্য বাজারে চাহিদা রয়েছে- এমন পণ্য আমাদের রফতানি তালিকায় নেই। আবার অনেক পণ্য আছে, যা পাকিস্তান তৈরি করে এবং বাংলাদেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে। তাই ভোক্তা চাহিদার কথা বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা যে কোনো স্থান থেকে পণ্য এনে সহনীয় মূল্যে বিক্রি করলে ভোক্তা তা গ্রহণ করবেন।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমাদের রফতানি পণ্যের তালিকা খুব বড় নয়। তাই সব দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ সম্ভব হয় না। আবার আমাদের স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময়। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে পারছেন পণ্য আমদানি করে সরবরাহ করছেন। এখানে কোনো একটি দেশের বিষয়ে বিশেষ কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে পণ্যগুলো আমদানি হচ্ছে মূলত বেসরকারিভাবে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা বাস্তবায়নে এখানে কোনো পক্ষের কিছু করার নেই। যে কোনো স্থান থেকে পণ্য এনে তা ভোক্তাকে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করা হলে এতে সমস্যার কিছু নেই। তবে পাকিস্তান আমাদের রফতানির জন্য সম্ভাবনাময় বাজার। তাই আমাদের সামর্থ্য বাড়িয়ে এ বাজার ধরার চেষ্টা করা উচিত।’
দেশে পণ্যের বাজার বড় হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানেও।
তথ্যমতে, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি বাবদ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৫৩ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বা ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। একই অর্থবছরে পাকিস্তানে পণ্য রফতানি বাবদ দেশে এসেছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ৪৩৭ কোটি টাকা।
পাকিস্তান বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে দেশে সুতি কাপড় আমদানি হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ডলারের। সুতা আমদানি হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ডলারের। এছাড়া দেশটি থেকে আমদানিকারকরা মসলা আমদানি করেছেন ১১ লাখ ডলার, বৈদ্যুতিক পাখা ৫০ লাখ ডলার ও প্লাস্টিক দ্রব্য প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ ডলারের।
জানা গেছে, দেশের স্পিনিং মিলগুলোয় ব্যবহৃত তুলার বড় উৎস পাকিস্তান। যদিও মূল্য সুবিধার কারণে দেশের মোট চাহিদার প্রায় অর্ধেক আসে ভারত থেকে। তারপরও গুণগত মানের কারণে পাকিস্তানি তুলার চাহিদাও রয়েছে। তুলা ছাড়াও বস্ত্র মিলগুলোর কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত সুতাও আমদানি হয় পাকিস্তান থেকে। এছাড়া শিল্পে ব্যবহৃত বয়লার এবং টেক্সটাইল ও হোম টেক্সটাইল মিলের মূলধনী যন্ত্রপাতির উৎসও পাকিস্তান।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল প্রডাক্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে ২০০-এর বেশি বৈদ্যুতিক পাখা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। তারপরও এখনও ক্রেতারা পাকিস্তানি ব্র্যান্ডেই বেশি আস্থাশীল।’
বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন মতিন বলেন, ‘পোশাক হোম টেক্সটাইলসহ পাকিস্তানি পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ মূলত শহরকেন্দ্রিক। পাকিস্তানের পণ্যগুলো দেখা যায় মূলত ঢাকায়ই। পুরো দেশ বিবেচনায় বাংলাদেশে চাহিদা বেশি ভারতীয় পোশাক বা কাপড়ের। তবে পাকিস্তানি পণ্যের শহরকেন্দ্রিক চাহিদাও এখন বাড়ছে।’
জানা গেছে, দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পাকিস্তানি থ্রিপিস, সালোয়ার-কামিজ, লন ও কুর্তার। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে এসব পণ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে গুলশানের অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার নবাবপুরও রয়েছে।
বাজার অনুসন্ধানে দেখা যায়, পোশাক ও বৈদ্যুতিক পাখার পাশাপাশি শিশুখাদ্য, জুস, কাটলারি, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে এ দেশে। পাকিস্তানের বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যও বলছে, দেশটির রফতানি আয়ের শীর্ষ ১০ গন্তব্যের একটি বাংলাদেশ। দেশটি থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৬০ ধরনের পণ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৯:৫৮ ৪৮১ বার পঠিত