রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিএনপিকে শর্ষের ভূত তাড়াতে হবে

Home Page » জাতীয় » বিএনপিকে শর্ষের ভূত তাড়াতে হবে
রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিএনপিতে একটি অর্থবহ পরিবর্তনের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের নামে তারা যে উগ্র হঠকারী পন্থা অনুসরণ করেছিল, বেশ কিছুদিন ধরে মুখে বলে আসছিল যে, বিএনপি আর সে পথে হাঁটবে না। এখন মনে হচ্ছে তারা যা বলেছে তা ‘মীন’ করেছে। রাজনৈতিক হঠকারিতার ভয়ঙ্কর পথ পরিহারের কথা সরাসরি না বললেও পার্টির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তারা এখন গণদাবি নিয়ে গণসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি দেবেন। দাবি আদায় বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিবর্তিত রাজনৈতিক লাইনটা বেগম খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য থেকে একেবারেই পরিষ্কার। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকেই বিএনপি কঠিন সংকট মোকাবিলা করছে। ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক বৈরী ঝড়টা সদ্য-বিগত ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বিএনপির ওপর দিয়েই বয়ে গেছে বেশি। পাঠক, আপনাদের মনে থাকার কথা যে, ওয়ান-ইলেভেনের অনভিপ্রেত ঘটনাটি অনিবার্য করে তুলেছিলেন আমাদের দেশের দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদরা। দল হিসেবে সরাসরি দায়ী করলে প্রধান দুই আসামি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। নবম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের নেতৃত্বাধীন দুই জোটের রাজনৈতিক ক্ষমতার বিরোধ সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের চোখের সামনে মানুষ হত্যার নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। সারা বিশ্বের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে স্তম্ভিত হয়ে যায়। পাশাপাশি বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের ফুট ওভারব্রিজের ওপর থেকে পাল্টা আক্রমণের হুমকিও শুনেছে মানুষ। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই একটা গৃহযুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করেছিলেন আমাদের রাজনৈতিক নেতারা। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার গণআকাঙ্ক্ষাই ওয়ান-ইলেভেনের অনিবার্যতাকে নিশ্চিত করে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ড. ফখরুদ্দীন আহমদের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার যেদিন শপথ গ্রহণ করে, সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ওই সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। মহাজোটের সব নেতাই সেদিন তার সঙ্গে ছিলেন। কী বিচিত্র আমাদের রাজনীতি। সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গী অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একজন পরোক্ষভাবে, অপরজন প্রত্যক্ষভাবে এখন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গী। সেদিন ক্ষমতা অন্ধ বেগম খালেদা জিয়া এবং ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপকারী হিসেবে কঠোর সমালোচিত তারেক রহমানের ভ্রান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের খেসারত এখনো দিচ্ছে বিএনপি। সেদিন দলীয় প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা না করে যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে এই পদের জন্য বাছাই করা হতো, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে ভিন্ন হতো। প্রথমদিকে সদ্য-বিগত সরকারি দল হিসেবে বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থন বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগিয়েছে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার। বিএনপির ওপর অনেকটা ক্রাকডাউনের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসে। বেগম খালেদা জিয়া, তার দুই পুত্র তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোসহ প্রমিনেন্ট প্রায় সব নেতাই জেল খাটেন দুর্নীতির দায়ে। কেউবা বিদেশে পালিয়ে বাঁচেন। বলা দরকার যে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল তাদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশনও খুব খারাপ। এই লোকগুলো মানুষের চেনা পাঁচ-সাত বছর আগেও এদের বিত্ত-বৈভব কী ছিল, এখন কী হয়েছে তা দেখে মানুষ অভিযোগসমূহ একেবারে উড়িয়ে দেয় না। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে যে আওয়ামী লীগের কৌশলগত সমর্থন নিয়ে বিএনপির ওপর ‘ডিজাস্টার’ নামিয়ে দেওয়া হয়, আখেরে সেই আওয়ামী লীগকেও ছাড়েনি মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার। আরও বিস্ময়কর ঘটনা সবাই প্রত্যক্ষ করল যে, বেগম জিয়ার আগেই বন্দী হলেন শেখ হাসিনা। দুই নেত্রীকে মাইনাস করার একটা জোর চেষ্টা করা হলো। ‘চিকিৎসার’ জন্য শেখ হাসিনা দেশের বাইরে চলে গেলেন। লোকে বলল তাকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দৃঢ়তা দেখালেন বেগম জিয়া। তিনি দেশ ছাড়লেন না, কোনোভাবেই তাকে দেশছাড়া করা গেল না। পরে শেখ হাসিনাও মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সব কারসাজি অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসেন তা আমরা জানি।

অবশেষে দুই নেত্রীর সঙ্গেই সমঝোতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তটা ছিল বেগম জিয়ার মস্ত বড় দ্বিতীয় ভুল। সদ্য-বিগত নির্বাচিত সরকারি দল হিসেবে বিএনপি সেই নির্বাচন বর্জন করলে শেখ হাসিনার সরকার গঠন এত সাবলীল হতো না এবং সেই সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও একেবারেই কমে যেত। সেই সিদ্ধান্তটিকে বেগম জিয়ার দ্বিতীয় ভুল বলায় প্রশ্ন আসতেই পারে, তার প্রথম বড় রাজনৈতিক ভুলটি কী ছিল? অনেক পর্যবেক্ষকই বলেন, তারেক রহমানকে দলের নেতৃত্বে সুপারইম্পোজ করাটা ছিল তার প্রথম ভুল। তাতে তার দল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারেক রহমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সময়মতো তারেক রহমান বিএনপির ন্যাচারাল লিডার হতেন। সেই গৌরব তিনি পেলেন না। কিছু স্তাবক তাকে যতই ‘দেবত্ব’ আরোপের চেষ্টা করুক না কেন, তিনি আসলে এখন বিএনপির একজন বিতর্কিত নেতা। অনেকে তাকে বর্তমান অবস্থানে মেনে নিচ্ছেন ভয়ে, আস্থা আর ভালোবাসায় নয়। ভয়ের আনুগত্য দিয়ে জয়ের কাব্য লেখা যায় না। ফলে দল কার্যত তার কাছ থেকে কিছু পাচ্ছে বলে মনে হয় না। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করে নবম সংসদে বিজয়ী ‘মহাজোট’ সরকারও তা অব্যাহত রাখে। দলের ত্রিশঙ্কু অবস্থায় সরকারি রাজনৈতিক হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। আন্দোলনের যে দু-একটি প্রয়াস তারা গ্রহণ করে তা সম্পূর্ণই ছিল বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমানের বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা এবং বেগম জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে। এর কোনোটির সঙ্গেই জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় ছিল না। ফলে জণগণ সেই সব আন্দোলন কর্মসূচিতে মোটেই সাড়া দেয়নি। একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে বিএনপির আন্দোলন। সরকার ঠিকই প্রতিপক্ষের এ দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং সেই সুযোগে নিজেদের ক্ষমতা ভবিষ্যতের জন্যও নিশ্চিত করার উদ্দেশে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। আন্দোলন শাণানোর চেষ্টা করে বিএনপি। কিন্তু রাজনীতিতে লুণ্ঠন সংস্কৃতি এবং দুর্বৃত্তায়ন প্রক্রিয়াকে প্রশ্রয় দিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে লালন করে যে সর্বনাশ করেছে, তা সংক্রমিত হয়েছে দলের নেতৃত্ব কাঠামোর সর্বত্র। অর্জিত সম্পদ, বিত্ত-বৈভব হারানোর ভয়ে এ নেতৃত্বের সংগঠন দিয়ে কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। তারা আরও কাবু হয়ে যায় তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর বিপদ বেড়ে যাওয়ায়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের প্রায় সব শীর্ষ নেতার বিচার শুরুর পর তাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হয়। আন্দোলনে নির্ভরযোগ্য সেই সহযোগী শক্তিও দিশাহারা হয়ে পড়ে। তেমন একটি পরিস্থিতিতেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনটি সেরে ফেলে ক্ষমতাসীন লীগ সরকার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু সরকারের আক্রমণাত্মক ব্যবস্থার মুখে তাদের সেই কর্মসূচি সম্পূর্ণই ব্যর্থ হয়।

দশম সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক তৃতীয় রাজনৈতিক ভুলটি করেছেন বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া ক্ষমতাসীন লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিকই ছিল। কিন্তু সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব এবং পছন্দমতো মন্ত্রণালয় বেছে নেওয়ার অফার প্রত্যাখ্যান করে তিনি ভুল করেছেন। ধারণা করা হয়, সেই প্রস্তাব মেনে আরও আলোচনার দরজা খোলা যেত। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেত। করা যেত আরও অনেক কিছু। সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করলে বিএনপিকে সরকারের ধরে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য খুবই জরুরি ছিল। ফলে কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হতো। সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া না গেলেও একশ প্লাস-মাইনাস আসন নিয়ে একটি শক্তিশালী ও সম্মানজনক বিরোধী দলের আসন বিএনপি-জামায়াত জোট নিশ্চিত করতে পারত বলে অনেক বিশ্লেষক এখনো মনে করেন। এরপর আরও সর্বনাশা কাজটি হয়েছে এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে। অবরোধ, হরতালের নামে দেশে যে তাণ্ডব হয়েছে কোনো শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষ তা সমর্থন করেনি। ২০-দলীয় জোটকে ডিফেইম করার জন্য যে সব চালাকি করা দরকার সরকারও সেই সব চালাকি করেছে। অনেকে বলেন, এককালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যে ‘নকশাল’ আন্দোলন শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশ ভূখণ্ডসহ আশপাশের অন্যান্য দেশেও প্রগতিশীল আন্দোলনে প্রচণ্ড ঢেউ তুলে ভারতের কংগ্রেস সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, সেই ‘নকশাল’ আন্দোলন দমনের জন্য সেই দেশের সরকার যে সব কৌশল প্রয়োগ করেছে ২০-দলীয় জোটের পেট্রলবোমা, জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে লীগ সরকারও সে সব কৌশল প্রয়োগ করে তাদের ওই আন্দোলন সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। বিএনপির সর্বত্র যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে তা এখনো কাটেনি।

এতদিনের কার্যক্রমের ব্যর্থতার কারণ পর্যালোচনা করে নতুন কর্মপন্থা নির্ধারণ করা এখন দলটির জন্য খুবই জরুরি। সম্ভবত বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করেছেন। ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের পর বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তনের আশা জেগেছে অনেকের মনে। আমাদের দশম সংসদ নির্বাচনটি যখন হয় তখন ভারতের শাসনভার ছিল কংগ্রেসের হাতে। নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর, তার কর্মকাণ্ড এখনো বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। বিজেপির সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি এ পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, সরকারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেগম জিয়া-নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিক বৈঠক (আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বেগম জিয়ার বৈঠকের কোনো সুযোগ নেই) স্থল সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়সহ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সই হয়েছে বেশ কিছু চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক। এসব বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সব পক্ষের জনগণের সম্মতি যে খুব প্রয়োজন ভারতের দক্ষ রাজনীতিক নেতৃত্ব এবং আমলাতন্ত্র নিশ্চয়ই তা অনুধাবন করেন। জনগণের সম্মতি তো নিশ্চিত হয় সবারই অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের দ্বারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আমাদের দেশের নির্বাচনটি কেমন হয়েছে ভারতের নতুন সরকারের তা জানার কথা নয়। ভারত একটি নির্বাচনমুখী গণতন্ত্রের দেশ। তাদের দেশে তারা যেমন নির্বাচন করে প্রতিবেশী দেশসমূহেও সে ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সে দেশের বর্তমান সরকার উৎসাহিত করবে তেমন প্রত্যাশা প্রতিবেশীরা করতেই পারে।

বাংলাদেশের সর্বশেষ সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মনোভাব বর্তমান ক্ষমতাসীনদের যে অনুকূল নয় তা প্রায় সবারই জানা। সরকারি মহলেরও তা অজানা নয়। সবাই চায় সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এই সুযোগটিই বোধহয় বেগম জিয়া কাজে লাগাতে চাইছেন। তিন মাসের তথাকথিত আন্দোলনে নিজের দলের যে ভাবমূর্তির সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা কাটানোর চেষ্টাটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। জনসংশ্লিষ্টতা না থাকলে কোনো আন্দোলন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না তা তার না বোঝার কথা নয়। আগের কর্মসূচিসমূহ যে গণদাবি সংবলিত গণসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি ছিল না তার স্বীকৃতি আছে তার নতুন বক্তব্যে যে, এখন তিনি গণদাবির ভিত্তিতে গণসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন ও পালন করবেন। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার দল। এসব কর্মসূচি পালনের জন্যও সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োজন। সেই শক্তিও যে তার দলের নেই এবং কেন নেই তাও তিনি বুঝেছেন বলে মনে হচ্ছে। তাই তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, আর ঢাকায় বসে পকেট কমিটি করা যাবে না। পকেট কমিটি দিয়ে যে কাজ হয় না তা তো টের পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কাদের উদ্দেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন? সমালোচকরা বলেন, তারাই তো যত নষ্টের গোড়া। এদের ওপর কমিটি করার ভার থাকলে কমিটি একই ধরনেরই হবে, এরা কমিটি করার কৌশলটা পাল্টাবে শুধু। শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ হচ্ছে শর্ষের ভূত তাড়িয়ে মাঠের লড়াকুদের একটা তালিকা প্রস্তুত করে তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃতদের দিয়েই তৃণমূলের কমিটি করার কথা ভাবতে হবে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনকেন্দ্রিক মেরুকরণ প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হতে পারে। সরকারের নানা পদক্ষেপে মনে হচ্ছে তারা বিএনপির মিত্র শিবিরে ফাটল ধরাতে চাচ্ছে। গত নির্বাচনে সে চেষ্টা করে অবশ্য তারা ব্যর্থ হয়েছিল। নানা চাপের মুখে থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে ত্যাগ করেনি। অনেকেই বলেন, তা করলে তারা কিছু রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারত। কেউ কেউ মনে করেন সে রকম উদ্যোগ এখনো নেওয়া হতে পারে। বেশ কিছুদিন বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েনের কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি বেগম জিয়ার মুখে ২০-দলীয় জোট আছে এবং থাকবে- এ ঘোষণাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দলে ভেড়ানোর সরকারদলীয় উদ্যোগেরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত কারণে জামায়াত পছন্দ করেন না এমন ব্যক্তি ও মহলও বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন লীগ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাদবাকি জনগণের দ্বন্দ্বই প্রধান দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের মীমাংসার জন্য ২০-দলীয় জোটে ভাঙন নয়, একে আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া বোধহয় বেশি জরুরি। নেতৃত্বের বিষয়টাও জনগণের সামনে স্পষ্ট করা দরকার। নেতা কে- বেগম জিয়া না অন্য কেউ? শেখ হাসিনার বিকল্প মানুষ এখনো বেগম জিয়াকেই ভাবে, অন্য কাউকে নয়। এ ব্যাপারে অন্যথা হলে তা হবে বেগম জিয়ার চতুর্থ ভুল।

 

বাংলাদেশ সময়: ১:১২:০৯   ৩৩৬ বার পঠিত