মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মহানগর বিএনপিতে মহাসঙ্কট

Home Page » জাতীয় » মহানগর বিএনপিতে মহাসঙ্কট
মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫



BNP-Mohasonkotবঙ্গনিউজ ডটকমঃঢাকা মহানগর বিএনপিতে মহাসঙ্কট দেখা দিয়েছে। দলটির তৃণমূলে কিছুটা কার্যক্রম থাকলেও রাজধানীতে কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে মহানগরের বর্তমান কমিটির ব্যর্থতা পরিষ্কার হয়ে গেছে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকের কাছে। এই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিন পরই প্রেস রিলিজভিত্তিক সংগঠনে রূপান্তরিত হয় মহানগর বিএনপি। এখন এ সংগঠন যেন কোথাও নেই। দেখা নেই দায়িত্বশীল নেতাদেরও। নেতাদের বাসায় বসেই চলছে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের চেষ্টা। তবে তাতে সাড়া মিলছে না। আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল করার তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেই মহানগর বিএনপির। দায়িত্বশীল নেতাদের কর্মকা-ে অনেকেই মনে করেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাদের সখ্য রয়েছে। মহানগর নেতাদের কর্মকা-ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকার নেতাদের ওপর তারা ভরসা পাচ্ছেন না। সরকারবিরোধী দেশব্যাপী আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে, তখনও রাজধানীতে বসবাসকারী নেতাদের ঘুম ভাঙে না। সারাদেশে নেতাকর্মীরা নিজেদের রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে আন্দোলনকে সফল করার জন্য রাজপথে অবস্থান করলেও ঢাকা মহানগর নেতারা রাজপথে থাকেন না। গত অন্দোলনে ঢাকার চিত্র ছিল ভিন্ন। তাঁদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে পুরো আন্দোলনই ব্যর্থ হয়েছে। তাঁদের দেখে উজ্জীবিত হতে পরেননি তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এবার তাঁরাও পরিবর্তন চান। দলের নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে ইতিবাচক বলে জানা গেছে। কিন্তু এবারও নিজেদের পদ-পদবি ধরে রাখতে সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা হাইকমান্ডের সঙ্গে তদবির করে যাচ্ছেন। রাজপথে না থাকলেও মোসাহেবিতে সিদ্ধহস্ত এসব সুবিধাবাদী নেতাকে বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি করেছেন কর্মীরা।

সূত্র জানায়, বিগত আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার জন্য বর্তমান কমিটি ভেঙে দলের মধ্যম সারির নেতাদের সমন্বয় করে নতুন কমিটি দেওয়া হতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ দুটি কমিটি গঠনেরও চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে দলের কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং বর্তমান সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এছাড়া উত্তরে আহ্বায়ক পদের জন্য এখনও শক্তিশালী কাউকে বাছাই করা না হলেও মহানগর বিএনপির নির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত এমএ কাইয়ুম ও আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে দায়িত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হলে সংগঠন শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন কর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়। সে অনুযায়ী খোকা-সালাম কমিটিকে বাদ দিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক মাসের মধ্যে রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এই কমিটিকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান কমিটি গঠনের পর দায়িত্বশীল নেতারা রাজধানীর ৪৯টি থানা ও প্রায় ১০০টি ওয়ার্ড কমিটির একটিও সম্পন্ন করতে পারেননি। শুরুর দিকে এসব থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫টি সাব-কমিটি গঠন করেন সংগঠনটির নেতারা। কিন্তু এসব কমিটির কোনো কার্যক্রম তখন থেকেই দৃশ্যমান ছিল না। রাজধানীজুড়ে মহানগর বিএনপিকে ঢেলে না সাজানোর খেসারত দিতে হয়েছে বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিগত দিনের আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সঙ্গে দলের অঙ্গসংগঠনের কোনো সমন্বয় ছিল না শুরু থেকেই। এছাড়া জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ কিংবা পরামর্শ পর্যন্ত করেননি তাঁরা। আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সংগঠনের চেইন অব কমান্ডও নির্ধারণ ছিল না। যার কারণে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এমনকি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও কোনো নির্দেশনা পর্যন্ত দেননি তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের বিপদের সময়ও পাশে দাঁড়ানোর মতো মনোভাব বা ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়নি তাঁদের মধ্যে। এর মধ্যে আন্দোলনকালীন নেতাকর্মীরা আহত, নিহত কিংবা মামলা ও গ্রেফতার-পরবর্তী কারাগারে যাওয়ার পরও কোনো ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়াননি দায়িত্বশীল নেতারা। একইভাবে পুরো আন্দোলনজুড়ে ছিল না কোনো মনিটরিং সেলও। যার দরুন কর্মীরা তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানানোর মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওয়ারী থানার সাব্বির আহম্মেদ আরিফ আন্দোলনের সময় জেলে যান। তিনি নেতাদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু মোবাইল ফোনে এত কথা বলা সম্ভব নয়। এক সময়  আসুন। সাক্ষাতে সবকিছু বলব।’

নেতাকর্মীরা জানান, ‘এর আগের কমিটির দায়িত্বশীল খোকা-সালাম অন্তত রাজধানীর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের চিনতেন। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাঁদের কাছে যেতে পারতেন। অর্থনৈতিক কিংবা মামলাজনিত সমস্যার জন্য সহযোগিতা পেতেন। কিন্তু বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব দীর্ঘদিনের। আর তাঁর কাছে যেতে হলেও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। তাঁর ২৪ জন দেহরক্ষী রয়েছেন। এছাড়া আরও আছেন তিনজন। এই তিনজনের কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে তারপর দেখা মেলে মির্জা আব্বাসের। অনেকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতেও এত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় না। অপরদিকে নিজের প্রভাব ধরে রাখার জন্য কমিটির অন্যান্য সদস্যকেও কাজ করতে তিনি বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে শুরু থেকেই কোণঠাসা করে রাখেন বলে কয়েকবার মহানগর কার্যালয়ে তালা মেরে রাখা হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বিগত দিনে। কমিটি করতে গিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। ভাসানী ভবনে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে, গোপনে কমিটি করতে গেলে মতিঝিলে সালাউদ্দিনের দেশ জনতা অফিসে সংঘর্ষ হয়। এখানে যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন আহম্মেদ এবং যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল লাঞ্ছিত হন। বর্তমান কমিটির অনেক সদস্যের নামে রয়েছে কমিটিবাণিজ্যের অভিযোগ।

নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির অন্যতম এ গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর জন্য সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বলয়মুক্ত করতে হবে এ সংগঠনকে। তাঁদের ব্যক্তিগত কোন্দলের কারণেই বিগত দিনের কমিটি এবং বর্তমান কমিটি ফ্লপ করেছে। একজন আরেকজনকে ব্যর্থ করে তুলতে অন্তর্কোন্দল সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ তাঁদের।

মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পল্লবী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল্লাহ হাসান বলেন, ‘নেতারা আন্দোলনের সময় মাঠে না থাকায় ঢাকায় কর্মীরাও মাঠে নামেননি। নেতা মাঠে না থেকে কর্মীদের নির্দেশ দিলে কর্মীরা কখনো মাঠে নামবেন না। মহানগরের নেতৃত্বে এমন লোক আসা দরকার যিনি কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেবেন। কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন। মিডিয়া বা টেলিফোনে নির্দেশ না দিয়ে কর্মীদের সঙ্গে রাজপথে থাকবেন।’

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৮:৫১   ৩১৮ বার পঠিত