শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০১৫

পাক-ভারত সীমান্তে আবারো গোলাগুলি

Home Page » জাতীয় » পাক-ভারত সীমান্তে আবারো গোলাগুলি
শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ পাক-ভারত সীমান্তে গোলাগুলিতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার কাশ্মির নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে এবং শিয়ালকোটে এই ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের গুলিতে শিয়ালকোট সীমান্তে কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের কর্মকর্তারা জানান, জম্মুতে পাকিস্তানি সীমান্ত রক্ষীবাহিনী রেঞ্জার্সের গুলিতে এক নারীসহ ৩ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সংবাদসূত্র: ডন, টাইমস অব ইনডিয়া, জি-নিউজ, এনডিটিভি
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক বাতিলের পর থেকেই দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর একপর্যায়ে শুক্রবার দুই দেশের সীমান্তে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। 

এ বিষয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানায়, শিয়ালকোট সীমান্তের চারওয়া সেক্টরের কাছে শুক্রবার ভোরে বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ করে বিএসএফ। এতে এক নারীসহ অন্তত ৬ ব্যক্তি নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়। চারওয়া সীমান্তের তিনটি এলাকায় ভারতীয় পক্ষ বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ করেছে উল্লেখ করে পাকিস্তান আরো জানায়, চেনাব রেঞ্জার্সও এর যথাযথ জবাব দিয়েছে। প্রাথমিক খবরে সাতজন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও পরে পাক সেনাবাহিনীর আইএসপিআর এক বিবৃতিতে ছয়জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে। চেনাব রেঞ্জার্স জানায়, হামলায় বেসামরিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিএসএফের হামলায় পাকিস্তানি গ্রামবাসীদের গৃহপালিত পশু মারা যায় ও ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলে জানায় পাকিস্তানের একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। 
অপরদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, কাশ্মির সীমান্তে পাকবাহিনীর গুলিতে তিন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২২ জন আহত হয়। নিহতের মধ্যে এক নারীও রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে আরএস পুরা সেক্টরে পাকবাহিনী বিনা উস্কানিতে গুলি চালায় বলেও অভিযোগ করে ভারতের স্থানীয় প্রশাসন। ভারতের পুলিশ বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘জম্মু জেলায় আরএস পুরা সেক্টরে পাকিস্তানি রেঞ্জারদের এলোপাতাড়ি গোলা নিক্ষেপের কারণে তিনজন সাধারণ নাগরিক নিহত ও নয়জন আহত হয়।’ নিহতরা হলেন সাই খুরদ গ্রামের সুভাশ চন্দর (৪৫) ও বিমলা দেবী (৪২) এবং আব্দুলি্লয়ান গ্রামের পবন কুমার (৫৫)। এছাড়া রেঞ্জার্সের ছোড়া গোলায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয় বলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ভারতের গণমাধ্যমগুলো জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার মর্টার এবং ছোট স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে ভারতের আবাসিক এলাকায় গুলি চালানো হয়। পাক রেঞ্জার্সরা বিএসএফের চৌকিকেও টার্গেট করে। ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি হামলার পাল্টা জবাবও দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। শুক্রবার দিনভর থেমে থেমে গুলিবিনিময় অব্যাহত ছিল। 
?এর আগে, গত মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের নওগাম এলাকায় পাকিস্তানের সেনাদের হামলায় ভারতের এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। ওই জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার বাঙ্কার থেকে বেরোনোর সময় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মোতায়েন এক পাকিস্তানি সেনা গুলি চালায়। উল্লেখ্য, চলতি মাসে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৫১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করে ভারত। এর আগে ২০১৩ সালে দুই দেশই ২০০৩ সালে করা সীমান্তে অস্ত্রবিরতি চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করে। কিন্তু এরপরও অসংখ্যবার এই অস্ত্রবিরতি ভেঙে সীমান্তে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। আর এজন্য দুই পক্ষই সবসময়ই একে অপরের দোষারোপ করে আসছে।
সীমান্তে সর্বশেষ এই গোলাগুলির ঘটনায় পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর আসন্ন বৈঠকটি নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ৯-১৩ সেপ্টেম্বর নয়াদিলি্লতে বিএসএফ ও রেঞ্জার্সের প্রধানের মধ্যে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গত সপ্তাহে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়ে গেলেও এই বৈঠকটির ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন দুই দেশের কর্মকর্তারাই। এমনকি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর বুধবার বলেন, দুদেশের মধ্যে সব ধরনের বৈঠককে এক করে দেখা ঠিক নয়। বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের মধ্যে নিয়মিত আলোচনার প্রয়োজন হয়। তাই উক্ত আলোচনা চলবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু এর একদিন পরই সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠল। সীমান্তে গুলিবিনিময়ের দায় এদিন ইসলামাবাদের ওপর চাপিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের উপ মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা নির্মল সিং বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানকে জঙ্গি দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত।’

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৫:৩৪   ৩৪৩ বার পঠিত