মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট ২০১৫
আকাশ ছুঁয়েছে পেঁয়াজের দাম
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » আকাশ ছুঁয়েছে পেঁয়াজের দামবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এক লাফে ৯০ টাকায় উঠে গেছে।
ভারত সরকার শনিবার দ্বিতীয় দফায় পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রতি টনে ২৭৫ ডলার বাড়িয়েছে। ফলে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৭০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে প্রথম দফায় গত ২৬ জুন রপ্তানি মূল্য ২২৫ ডলার বাড়িয়ে ৪২৫ ডলার করে ভারত সরকার। রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল বাংলাদেশ। তাই সবচেয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ।
ভারতে মূল্য বৃদ্ধির খবরে রাতারাতি বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগে গেছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো প্রচুর পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। দেশে এখন পেঁয়াজের কোনো সংকটও নেই। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদার পরিমাণ ১৫ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় প্রায় ১২ লাখ টন। মাত্র ৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। কিন্তু দেশের মুনাফাখোর মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে দেশীয় পেঁয়াজ মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তিনগুণ দামে বিক্রি করছেন। রমজান মাসে পেঁয়াজের কেজি ছিল মাত্র ৩২ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি।
জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন মার খেয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে তার দাম দাঁড়িয়েছে কেজিতে ৬০ রুপি। খুচরা বাজারে যা পৌঁছে গেছে প্রায় ৮০ টাকায়। এ অবস্থায় ভারত রপ্তানি বন্ধ করে বাজারে জোগান বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করতে যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার টন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৬ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪০ হাজার, মার্চে ৫১ হাজার, এপ্রিলে ৪২ হাজার, মে’তে ৭১ হাজার, জুনে ৬২ হাজার ও জুলাইয়ে ৪৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
যথেষ্ট আমদানি সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল-মামুন। তিনি জানান, দেশে ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এ ছাড়া আমদানিও হয়েছে যথেষ্ট। বাজার নিয়ন্ত্রণে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অকারণ মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণের ভোগান্তি ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশি বাজারে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। এ সময় অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত রাখেন একশ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ী। মোটা অঙ্কের ফায়দা লুটতে তারা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। বর্তমানে ভারতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার সুযোগ নিচ্ছেন তারাও।
জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর জেলার অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর কাছে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো দাম পাওয়ার আশায় পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন উৎপাদনকারিরা। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহে আরো হিসাবী হয়ে উঠেছেন তারা। তবে সরকার বিকল্প কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিলে মজুত ছেড়ে দেবেন অনেকেই।
আমদানিকারকরা জানান, হঠাৎ দর বৃদ্ধিতে কমেছে পেঁয়াজের ভোক্তা চাহিদা। তারপরও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি আরো বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত, মিসর ও চীন থেকে পণ্যটি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে ঋণপত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ নেই। সরকার এর সুযোগ তৈরি করে দিলে সেখান থেকে অনায়াসেই পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হবে।
এদিকে চীনে ৫০০ ও পাকিস্তানে ৫১০ ডলারে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। পণ্যের কোনো আগাম তথ্য না পাওয়ায় প্রায়ই লোকসান গুনতে হচ্ছে দেশের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের।
আমদানিকারকদের মতে, ভারতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। দিল্লিতে রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ রুপিতে (১১০ টাকা)। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারকে বিকল্প দেশ থেকে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করতে হবে।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারে রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাংলাদেশি টাকায় ৮৫, কলম্বে^ায় ৯০ ও পাকিস্তানে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১২:৫০ ২৯৫ বার পঠিত