রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০১৫

সিন্ডিকেটে বন্দী রাজধানীর পশুর হাটের ইজারা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সিন্ডিকেটে বন্দী রাজধানীর পশুর হাটের ইজারা
রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০১৫



Hat-বঙ্গনিউজ ডটকমঃ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ১৬টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্টদের হাতেই পশুর হাটের ইজারা থাকছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ তাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সিন্ডিকেট করে পশুর হাটের ইজারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রাখছে। যার ফলে কাক্সিক্ষত দরপত্র পায়নি দুই সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় প্রথম দফায় ছয়টির মধ্যে চার হাটেই ফের দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অন্যদিকে দর না পেয়ে হতাশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) ফের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট ইজারা নিতে ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্টরা সিন্ডিকেট করে পরস্পর যোগসাজশে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। সিন্ডিকেটের বাইরের কেউ যাতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য তারা সতর্ক থাকে। যার ফলে খুব কমসংখ্যক লোকই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন।

এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের হাটগুলো হচ্ছে- খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গার অস্থায়ী পশুহাট, মিরপুর সেকশন-৬ (৬ নম্বর ওয়ার্ড)-এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতু সংলগ্ন খালি জমি, কুড়িল ফাইওভার সংলগ্ন পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের পর থেকে সড়কের দু’পাশের কাঁচা অংশের খালি জমি, মিরপুর সেকশন-১১-এর বাউনিয়া বাঁধ সংলগ্ন খালি জমি ও রায়েরবাজার কবরস্থান সংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চল পুলিশ লাইনের নির্ধারিত খালি জমি।

দক্ষিণের পশুর হাটগুলো হচ্ছে- ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজার, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, কমলাপুরের গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা এবং কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে বুড়িগঙ্গা বাঁধ সংলগ্ন জায়গা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের কারণে এবার পশুর হাটের জন্য কেউ শিডিউল কিনতে পারেননি। যাঁরা নানা কৌশল অবলম্বন করে শিডিউল কিনেছেন, তাঁদের অধিকাংশই শিডিউল জমা দিতে পারেননি। এমনকি সিটি করপোরেশনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সিন্ডিকেটকে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নগরীর যানজট নিরসন ও ভোগান্তি এড়াতে এ বছর ডিএনসিসি পুরনো ৫টি স্থানে হাট বসাচ্ছে না। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে- আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা, উত্তরায় আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সংলগ্ন খালি জায়গা, বারিধারা ‘জে’ ব্লকের খালি জায়গা এবং বনানী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খালি জায়গা। আর ডিএসসিসি পুরনো ঢাকার আরমানিটোলা হাটটি ইজারা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বছর ডিএসসিসির আওতাধীন অস্থায়ী ১০টি পশুর হাট ইজারার বিপরীতে ৯৪টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে। কিন্তু‘ জমা পড়েছে মাত্র ৩১টি। গত বছর সংস্থাটির ১১টি হাটের বিপরীতে শিডিউল বিক্রি হয়েছিল ১১৩টি। জমা পড়েছিল ৩৯টি। আর ডিএনসিসিতে ৬টি হাটের জন্য শিডিউল জমা পড়েছে ২০টি।

গত ২১ জুলাই উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের ফরম বিক্রি শেষ হয়। ১০ আগস্ট বিকেলে এ দরপত্র বাক্স খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির সম্পত্তিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।

অপরদিকে ডিএসসিসি এলাকার হাটগুলোর জন্য গত ২৭ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের দরপত্র বিক্রি শেষ হয়। ১২ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দরপত্র জমা এবং বেলা আড়াইটায় দরপত্র বাক্স খোলা হয়।
আশানুরূপ দর না পাওয়ায় এ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা। তারা বলছেন, কাক্সিক্ষত দর পাওয়া না গেলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও হাট মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মূল্যায়ন কমিটির সভায় দুটি হাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি চারটি হাটের কাক্সিক্ষত দর না পাওয়ায় আবার দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ডিএসসিসির ১০টি হাট ইজারার মধ্যে লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ ইজারার জন্য আবেদন করেছেন ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন বাবুল সরদার। তিনি এর দর দিয়েছেন ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩৮ টাকা। যা গত বছর ছিল ৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৭৪ টাকা। এ হাটের জন্য দরপত্রও কিনেছেন ৩ জন।

খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের জন্য দরপত্র কিনেছেন ৭ জন। কিন্তু আবেদন করেছেন ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা আমিনুল ইসলাম। তিনি দর দিয়েছেন ২৪ লাখ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৬ লাখ টাকা।

সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ ইজারার জন্য দরপত্র কিনেছেন ১৪ জন। কিন্তু দরপত্র জমা দিয়েছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা বাবু ভূঁইয়া। তিনি দর দিয়েছেন ৫৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ ইজারার জন্য দরপত্র কিনেছেন ৫ জন। দরপত্র জমা দিয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা জাকির হোসেন। তিনি দর দিয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ধূপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ইজারার জন্য শিডিউল কিনেছেন ৩০ জন। কিন্তু জমা দিয়েছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি দর দিয়েছেন ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা।
কমলাপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ইজারার জন্য দরপত্র কিনেছেন ৬ জন। কিন্তু জমা দিয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন সহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি দর দিয়েছেন ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা ইজারার জন্য দরপত্র কিনেছেন ৬ জন। জমা দিয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন হাজী মো. রুবেল। তিনি দর দিয়েছেন ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা ইজারার জন্য দরপত্র নিয়েছে ৫ জন। জমা দিয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা আবুল হোসেন সরদার। তিনি হাটের দর দিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। যা গত বছর ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। লালবাগস্থ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ এবং তৎসংলগ্ন বেড়িবাঁধের খালি জায়গা ও আশপাশের এলাকা ইজারার জন্য দরপত্র কিনেছেন ৭ জন। কিন্তু জমা দিয়েছেন দুজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা দেলোয়ার হোসেন। তিনি হাটের দর দিয়েছেন এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা গত বছর ছিল এক কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের জন্য দরপত্র কিনেছেন ১১ জন। জমা দিয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা রাজীব। তিনি দর দিয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা।

ডিএনসিসির ৬টি হাটের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাদের মধ্যে খিলক্ষেত বনরূপা হাটের জন্য আসলাম উদ্দিন এক কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিরপুর সেকশন-৬-এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গায় হাটের জন্য খোকন মৃধা ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬ টাকা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের জন্য জাহিদ হোসেন এক কোটি ৯ লাখ ৭৮৫ টাকা, কুড়িল হাটের জন্য কেরামত আলী দেওয়ান এক কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের জন্য মোহাম্মদ সামিউল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৬ টাকা এবং রায়েরবাজার হাটের জন্য তারেকুজ্জামান রাজিব ২৫ লাখ টাকা দর ডেকেছেন।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ভোরের পাতাকে বলেন, ‘প্রাপ্ত দরপত্রগুলো কমিটিতে উত্থাপন করা হবে। কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটি অনুমোদন না দিলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৫:৫৭   ২৬৫ বার পঠিত