শুক্রবার, ২১ আগস্ট ২০১৫
রক্তাক্ত ২১ আগস্ট: যা ঘটেছিল সেদিন
Home Page » প্রথমপাতা » রক্তাক্ত ২১ আগস্ট: যা ঘটেছিল সেদিনবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ২১ আগস্ট ২০০৪, সারাদেশ থেকে মানুষ এসেছেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দেশ জুড়ে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস ও বোমা হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে। ঘড়িতে সময় ০৫টা বেজে ২০ মিনিট। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তথা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাথে রয়েছেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষ করে জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার সাথে সাথে শুরু হয় ঘাতকদের গ্রেনেড বিস্ফোরণ। শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাককে লক্ষ করে দুই দফায় ছুঁড়া হয় ১৩টি গ্রেনেড। ৮টি গ্রেনেড ছুঁড়ার খুব সামান্য সময়ের ব্যবধানে শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ। এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীরা এবং শেখা হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে ঘিরে মানব-ঢাল তৈরি করে উঠিয়ে দেন বুলেট প্রুফ গাড়িতে। এরপর আবার গ্রেনেড বিস্ফোরণ। ঘাতকরা শুধু গ্রেনেড বিস্ফোরণেই ক্ষান্ত হননি। গাড়িটি লক্ষ করে পর পর ছয়টি গুলি ছুঁড়া হয় শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় আর নেতাকর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের মানব-ঢালের কারণে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তাঁকে রক্ষা করতে ঘটনা স্থলেই গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার মাহবুব আলম।
বিকট শব্দ, ধোঁয়া, মানুষজনের আর্তচিৎকার, প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি। মুহূর্তের মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় যমপুরীতে। রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। পুরো এলাকাজুড়ে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মানুষের শরীরের অংশবিশেষ। রাস্তার কালো পিচের সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় মিশে যায় মানুষের মাথার মগজ। মানুষের আর্ত চিৎকারে ভারী হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আকাশ। মৃত্যুর গুমোট গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছিল বাতাস জুড়ে।
পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনী উপস্থিত থাকলেও আহত মানুষগুলোকে রক্ষায় তাদের ভূমিকা ছিলনা। আহতদের হাসপাতালে নেবার ব্যাপারে পুলিশ উল্টো বাধাগ্রস্ত করেছে। আহতদের হাসপাতালে যারা কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলো, পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চার্জ করেছে, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।
গ্রেনেডের আঘাতে দু’পা হারিয়ে হৃদয় বিদারক ভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন আওয়ামীলীগের মহিলা নেত্রী আইভি রহমান। ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ১৬ জন। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ জনে। আহত হয়ে শরীরে এক হাজারের বেশি স্প্লিন্টার নিয়ে প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
নিহত অন্যরা হলেন: শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুব, রফিকুল ইসলাম ওরফে আদা চাচা, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হানিফ, রতন শিকদার, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, সুফিয়া বেগম, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আবুল কালাম আজাদ, আব্বাস উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সরদার, আবুল কাশেম, বেলাল হোসেন, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, জাহেদ আলী, মোতালেব হোসেন, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসহাক মিয়া
বাংলাদেশ সময়: ১২:০০:০৯ ৩০৭ বার পঠিত