বুধবার, ১২ আগস্ট ২০১৫

‘সুয়েজ সম্প্রসারণ অভিজ্ঞতা দৃষ্টান্ত হতে পারে

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ‘সুয়েজ সম্প্রসারণ অভিজ্ঞতা দৃষ্টান্ত হতে পারে
বুধবার, ১২ আগস্ট ২০১৫



suez-canal-1.jpgমিশরের ইসমাইলিয়ায় সুয়েজ খালের বর্ধিতাংশ পাড়ি দিচ্ছে পণ্যবাহী জাহাজ।

মিশরের সুয়েজ খাল সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সেই অভিজ্ঞতার নানা দিক সরকার কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করছেন কয়েকজন গবেষক।

কয়েক বছরের ব্যাপক রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সামরিক শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কড়া নজরদারিতে মিশর নিজস্ব অর্থে সাড়ে আটশ কোটি ডলার ব্যয়ে সুয়েজ খাল সম্প্রসারণের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত এই উন্নয়ন প্রকল্পের আদলে কুড়িগ্রামের রৌমারি থেকে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার জরাজীর্ণ নৌপথ ড্রেজিংসহ নানা ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে লঞ্চ-স্টিমারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন।

ফরাসউদ্দিন বলেন, “এই চ্যানেলে বর্ষার সময় যে পানি জমা হবে সেটা ধরে রেখে খরার সময় চাষবাসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজেও ব্যবহার করা যাবে।”

মিশর সরকারের মতো বন্ড ছেড়ে বড় এই প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সুয়েজ চ্যানেল

এতোদিন এই খাল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত জাহাজগুলো শুধু এক দিকে চলাচল করত। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময় পণ্যভর্তি জাহাজগুলো একদিকে যেত। আবার আরেকটি নির্দিষ্ট সময় উল্টো দিকে চলত। এতে জাহাজজটের সৃষ্টি হত।

গত ৬ অগাস্ট মিশরের ইসমাইলিয়ায় সুয়েজ খালের বর্ধিতাংশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খালে একটি নৌকায় দাঁড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। মিশরের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে পাঠানো ছবি।

গত ৬ অগাস্ট মিশরের ইসমাইলিয়ায় সুয়েজ খালের বর্ধিতাংশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খালে একটি নৌকায় দাঁড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। মিশরের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে পাঠানো ছবি।
সুয়েজ খাল সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভূ-মধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করে ১৯ শতকে তৈরি করা সুয়েজ খালের একাংশে তার সমান্তরালে আরেকটি খাল খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরনো চ্যানেলের গভীরতা ও প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে।

এতে ইউরোপ ও এশিয়ার সবচেয়ে ছোট নৌ রুট-সুয়েজ খাল দ্বিমুখী হয়েছে। এখন পণ্যবাহী জাহাজ দুই দিকেই চলাচল করছে।

সুয়েজ ক্যানেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, এই খাল সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানের ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব ২০২৩ সালের মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

নতুন রুটের ফলে জাহাজগুলোর অপেক্ষার সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে কমে ১১ ঘণ্টায় নেমে আসবে। বর্তমানে দৈনিক ৪৯টি জাহাজ চলে এ খাল দিয়ে। সরকার আশা করছে ২০২৩ সালের মধ্যে এই খাল দিয়ে দিনে ৯৭টি জাহাজ চলবে।

নতুন করে ৩৭ কিলোমিটারের মতো খনন করা হয়েছে, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘দ্বিতীয় লেন’। এছাড়া খালটিকে আরও গভীর এবং ৩৫ কিলোমিটারের মতো প্রশস্ত করা হয়েছে।

বন্ড ছেড়ে অর্থ জোগাড়

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বড় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মিশর সরকার। আর এই অর্থের জন্য শুধু মিশরের জনগণের জন্য ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পাঁচ বছর মেয়াদি ‘নন-ট্রেডেবল’ বন্ড ছাড়ে সরকার। যার সুদের হার ১২ শতাংশ।

২০১৪ সালের অক্টোবরে এ বন্ড ছাড়ার মাত্র আট দিনেই ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড বিক্রি হয়ে যায়।

এই অর্থ দিয়েই গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয় সুয়েজ চ্যানেল সম্প্রসারণের কাজ। তিন বছরের এ প্রকল্প এক বছরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণের পর তারও দুই মাস আগেই কাজ শেষ হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ধরে রয়টার্স, এএফপি, ব্লুমবার্গসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নতুন সাজে সজ্জিত সুয়েজ চ্যানেল নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

কম সময়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত বিষয়ক গবেষক জায়েদ বখত বলেন, “কম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নই এখন আমাদের প্রধান সমস্যা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই সময় চলে গেছে অনেক। মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে তো হয়েছেই; শেষ হচ্ছে না।

“সে কারণেই আমি বলছি, আমাদের অর্থের চেয়েও বড় সমস্যা প্রকল্প বাস্তবায়ন। সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা আমাদের দেশটার উন্নয়ন করতে চাই তাহলে জনগুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতেই হবে। সেক্ষেত্রে সুয়েজ চ্যানেল সম্প্রসারণ প্রকল্পকে অনুসরণ করতে হবে।”

বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতাদের অর্থ না পাওয়া গেলে মিশরের মতো বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত।

বাংলাদেশের প্রকৌশলী শফিকুর রহমান সুয়েজ চ্যানেল সম্প্রসারণ প্রকল্পে কাজ করেছেন।

খ্যাতনামা একটি ডাচ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করা শফিকুল বলেন, বিশ্বের নামকরা ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে এই প্রকল্পের কাজ করেছে। নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৩:২৪   ৪৮০ বার পঠিত