বুধবার, ১২ আগস্ট ২০১৫

বদলে গেছে ২১ শতকের ক্রিকেট

Home Page » ক্রিকেট » বদলে গেছে ২১ শতকের ক্রিকেট
বুধবার, ১২ আগস্ট ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃটেস্ট ম্যাচ নিয়ে বিরক্তি অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর মধ্যেই রয়েছে। রঙিন পোশাকে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং-এ মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে রান তোলার গতিতেই বিরক্ত অনেকে। তবে ধীরে ধীরে সেই বিরক্ত ভাব কাটছে। কারণ একুশ শতকে টেস্ট ম্যাচে রান তোলার গতি আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলারদের লড়াইয়ের উত্তাপটা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। তাই বেশিরভাগ ম্যাচেই জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হচ্ছে। তার প্রমাণও মিলেছে ২১ শতকে। বড় ফরম্যাটে আগের তুলনায় একুশ শতকে রান তোলার গতি বাড়িয়েছে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো।

একবিংশ শতাব্দির আগে একটি টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনের স্কোর কার্ড নিয়ে আলোচনা করা যাক, প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে ২ উইকেটে ৫০ রান। দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান এবং শেষ ও তৃতীয় সেশনে ৩৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৫ রান। অর্থাৎ প্রথম দিন শেষে একটি দলের রান সংগ্রহ হলো ৯০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৭ রান। ওভার প্রতি রান তোলার গড় ২ দশমিক ০৭। এমন স্কোর দেখে যেকেউ টেস্ট ম্যাচ দেখার ইচ্ছা, আগ্রহ, সাহস সবই হয়তো হারাতো।
কিন্তু এমনটাই ঘটেছে টেস্ট ক্রিকেটের শুরুতে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিলো পরবর্তী যুগের বেশি কিছু সময়েও। তবে সেই ধারা থেকে বের হয়ে আসছে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো। একুশ শতকে সেই পরিবর্তন লক্ষণীয়। ওয়ানডে ও টুয়েন্টি টুয়েন্টির জমানায় টেস্ট ক্রিকেটের এক ইনিংসে রান তোলার গতি বেড়ে গেছে অনেক খানি।
প্রতিটি সেশনের ওভার প্রতি রান তোলার গতি থাকছে সাড়ে তিন থেকে চারের মধ্যে। চলতি এ্যাশেজ সিরিজের কথাই ধরা যাক। লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওভার প্রতি ৩ দশমিক ৭৯ রান তুলে ৫৬৬ রানের বড় স্কোর দাঁড় করে অস্ট্রেলিয়া। ঠিক তেমনি ৩ দশমিক ৪৬ রান ওভার প্রতি রেখে ৩১২ রান তুলে ইংল্যান্ড। আবার নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ওভার প্রতি পাঁচের উপর রান তুলে দ্রুতই টার্গেটা বড় করে অস্ট্রেলিয়া।
সেই সাথে শুরুতে রান তোলার গতি স্লো থাকলেও পরবর্তীতে বড় জুটি, দলীয় স্কোরটাকে শক্তপোক্ত করার কাজটাও ভালোভাবেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে। উদাহরনস্বরুপ আবারো এ্যাশেজের লর্ডস টেস্টকেই দাঁড় করানো যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২৮৪ রান যোগ করেন ক্রিস রর্জাস ও স্টিভেন স্মিথ। শুরুতে কিছুটা সময় নষ্ট করে হলেও, পরবর্তীতে ঠিকই রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন তারা। শেষ পর্যন্ত এই জুটির রান তোলার গড় গিয়ে দাঁড়ায় ওভার প্রতি সাড়ে তিন রানের কিছুটা বেশি।
একবিংশ শতাব্দির শুরুর একটি ম্যাচের কথাও যদি ধরা হয়, তাতেও দেখা যাবে ব্যাটসম্যানদের রান তোলার গতি বেড়েছে। শুরুতে ধীরলয়ের হলেও, পরবর্তীতে বড় ইনিংসও দাঁড় করাতে পেরেছেন তারা। ২০০২ সালে হেডিংলিতে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও ইংল্যান্ড। ঐ ম্যাচের প্রথম দিন ৯০ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেটে ২৩৬ রান তুলে দিন শেষ করে ভারত। টিম ইন্ডিয়ার ওভার প্রতি রান তোলার গড় ছিলো ২ দশমিক ৬২।
তারপরও দ্বিতীয় দিনে নিজেদের দলীয় স্কোরটা ৮ উইকেটে ৬২৮ রানে নিয়ে গেছে ভারত। শেষ পর্যন্ত ভারতের ওভার প্রতি রান তোলার গতিও ছিলো বেশ ভালো। প্রথম দিনের ২ দশমিক ৬২ থেকে দ্বিতীয় দিন ইনিংস ঘোষণার সময় ভারতের গড় ছিলো ৩ দশমিক ৪৮ রান। আর ঐ টেস্ট ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে জিতে নেয় ভারত। তাই একবিংশ শতাব্দিতে ওভার প্রতি রান তোলার গতি বেড়ে যাওয়ায়, টেস্ট ম্যাচ হয়ে উঠছে আনন্দদায়ক।
একটি পরিসংখ্যান বলছে, একবিংশ শতাব্দিতে ওভার প্রতি রান তোলার গতি বাড়িয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আর রান তোলার গতিতে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি বেশি ম্যাচ হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দু’ক্ষেত্রেই বেশ নাজুক অবস্থা বাংলাদেশের।
একবিংশ শতাব্দিতে ওভার প্রতি বেশি রান তুলে জয় :
দল জয় ওভার প্রতি রান
অস্ট্রেলিয়া ১০১ ৩.৭০
ইংল্যান্ড ৮১ ৩.৫২
দক্ষিণ আফ্রিকা ৭১ ৩.৪৩
ভারত ৫৯ ৩.৫১
শ্রীলংকা ৫৩ ৩.৫৫
পাকিস্তান ৪৭ ৩.৩৪
নিউজিল্যান্ড ৩৫ ৩.৪৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬ ৩.২৮
জিম্বাবুয়ে ৮ ২.৯৭
বাংলাদেশ ৭ ৩.১৫

একুশ শতকে ওভার প্রতি কম রান তুলে হার :
দল হার ওভার প্রতি রান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৩ ৩.০৫
বাংলাদেশ ৭০ ৩.০৮
ইংল্যান্ড ৫৫ ২.৯২
পাকিস্তান ৪৫ ৩.০৩
নিউজিল্যান্ড ৪৫ ৩.০৪
শ্রীলংকা ৪৪ ২.৯৭
ভারত ৪৪ ৩.১১
অস্ট্রেলিয়া ৩৯ ৩.২৭
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৭ ২.৯৫
জিম্বাবুয়ে ৩৫ ২.৭৫।

বাংলাদেশ সময়: ১:৪৩:২৩   ২৬২ বার পঠিত